স্টাফ রিপোর্টার : নির্দেশনা অমান্যকারী ট্যানারী মালিকদের প্লট বাতিল ও কারখানা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে পরিবেশে বাঁচাও আন্দোলন (পবা)। একই সঙ্গে হাজারীবাগস্থ ট্যানারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যুৎ, পানি এবং গ্যাসসহ সকল ধনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার দাবি জানিয়েছে তারা। গতকাল (মঙ্গলবার) পবা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। ট্যানারী স্থানান্তরের ক্ষেত্রে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পবার নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আলোকে করণীয় বিষয়ক নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে সংগঠনটির চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান। এতে বক্তব্য রাখেন ডাঃ লেলিন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, আবুল হাসনাত, মোহাম্মদ সেলিম এবং রাজিয়া সামাদ। বক্তারা বলেন, হাজারীবাগের ট্যানারীসমূহের দূষণের ভয়াবহতা এবং সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারীগুলো স্থানান্তর ও সিইটিপি নির্মাণের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে পবা আগস্ট ২০১৪ থেকে হাজারীবাগের ট্যানারীসমূহ সাভারস্থ চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানান্তর কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়মিতভাবে মনিটরিং করছে। হাজারীবাগের ট্যানারীসমূহ দীর্ঘ ৬৫ বছর বুড়িগঙ্গা নদী দূষণ করে যাচ্ছে। ফলে ৩৯ মিলিয়ন লিটার পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন চাঁদনীঘাট ওয়াটার ওয়ার্কস হতে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। বুড়িগঙ্গা আজ একটি মৃত নদী, যেখানে দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডিও) প্রায় শূন্য। হাজারীবাগ এলাকায় অবস্থিত ট্যানারীসমূহ দৈনিক ২২ হাজার ঘনমিটার অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে ফেলছে। এছাড়াও প্রতিদিন আনুমানিক ১০০ মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য তৈরী হচ্ছে।
বক্তারা বলেন, সাভারে শিল্প ভবন নির্মাণ, হাজারীবাগ থেকে যন্ত্রপাতি স্থানান্তর ও কারখানা চালু করা এবং সিইটিপি নির্মাণ ও চালু করা। সরকার ইতিমধ্যে এ সকল অবকাঠামো তৈরিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চলতি বছর ৩ জানুয়ারি তারিখে শিল্প মন্ত্রী হাজারীবাগের ট্যানারীগুলো ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সাভারে স্থানান্তরের সময়সীমা বেঁধে দেন। অন্যথায় প্লট বাতিল এবং গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিছিন্নসহ কারখানা বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেন। সাভারে প্লটপ্রাপ্ত ২৮টি ট্যানারীর মালিককে ৬ জানুয়ারি উকিল নোটিশ প্রদান করা হয়। নোটিশপ্রাপ্তির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ¯া’নান্তর প্রক্রিয়া শুরু করা না হলে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিছিন্নসহ কারখানা বন্ধ করে দেয়া হবে। ট্যানারীগুলো সাভারস্থ চামড়া শিল্প নগরীতে স্থানান্তরের জন্য একাধিকবার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। বক্তারা আরো বলেন, সাভারে ট্যানারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু না হলে একদিকে সিইটিপির (বায়োলোজিক্যাল বিধায়) কার্যক্রম ব্যহত হবে, অন্যদিকে বুড়িগঙ্গা নদী ও ঢাকা মহানগরীতে দূষণের মাত্রা বাড়তেই থাকবে। দেখা যায়, ১৫৫টি ট্যানারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫০টি প্রতিষ্ঠানের ১ম তলা থেকে ৫ম তলার ছাদ ঢালাই হয়েছে, ৭৪টি প্রতিষ্ঠানের গ্রেটভীম ঢালাই হয়েছে বা হচ্ছে, কলামের ঢালাই হয়েছে বা হচ্ছে, ২৩টি প্রতিষ্ঠান ফাউন্ডেশনের কাজ শুরু করেছে, ৮টি প্রতিষ্ঠান কোন কার্যক্রম গ্রহণ করেনি। ৫টি প্রতিষ্ঠান ড্রাম স্থাপনের কাজ করছে।
উল্লেখ্য, ট্যানারি মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তাদের ক্ষতিপূরণ বাবদ আড়াইশ’ কোটি টাকা সরবরাহ করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্লট বরাদ্দপ্রাপ্ত ১৫৫টি শিল্প প্রতষ্ঠানের মধ্যে একটিও পুরো কাজ সম্পন্ন করেনি বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন