ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : বসন্তের আবেশে প্রাণচাঞ্চল প্রকৃতি। মানব মনেও ফাগুনের জয়গান। একুশে বইমেলা এবছর বসন্তের এমন রুপ ষোলআনাই কাজে লাগিয়েছিল এতদিন। উপচেপড়া দর্শনার্থী আর বইপ্রেমীদের আগমনে খুশি ছিল প্রকাশক-আয়োজক সবাই। তবে গতকাল দুপুরে প্রবল শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় ওলটপালট হয়ে গেছে সব। প্রকৃতির এমন রুদ্র ব্যবহারের সাথে খুব কমই সাক্ষাত হয় রাজধানীবাসীর। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে অমর একুশে বইমেলার বিভিন্ন স্টল। অবকাঠামোগত পরিবর্তনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্টলের বিপুল পরিমান বই বৃষ্টির পানিতে ভিজে যায়। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের কোথাও জমেছে গোড়ালি সমান পানি। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের অবস্থাও কর্দমাক্ত। এহেন পরিস্থিতি সাড়ে পাচটা পর্যন্ত মেলা স্থগিত রাখে কর্তৃপক্ষ। নির্ধারিত সময়ের আড়াই ঘন্টা পরে মেলা চালু করা হলেও তা কেবল আনুষ্ঠানিকতা। মাত্র একঘন্টা চালু ছিল মেলা। এরপর বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় মেলা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। মেলা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ জানান, মেলায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। অনেক জায়গায় পানি জমে আছে। দর্শনার্থীদের জন্য ঝুকিপূর্ণ বিধায় দিনের আলোতেই মেলা শেষ করেছি। দর্শনার্থী বা বইপ্রেমীদের সমাগম ছিলনা বললেই চলে। প্রকাশক আর বিক্রয়কর্মীরা ব্যস্ত ছিল স্টল পরিপাটির কাজে। অনেক প্রকাশক ভিজে যাওয়া বই প্রকাশনীতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। নতুন করে বই এনে তবে বিক্রি করতে পারবেন তারা। তবে পানি নিষ্কাশনের জন্য ফায়ার সার্ভিসকে কাজ করলেও মেলাকে গতকাল আর জমজমাট করা সম্ভব হয়নি। সারা মাঠ গর্তে ভরপুর আর কর্দমাক্ত। এদিকে মেলার মূল মঞ্চের আয়োজনও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে। সেখানেই অনুষ্ঠিত হয়েছে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এদিকে গতকালের প্রাকৃতিক এ র্দূর্যোগের কারনে প্রকাশকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে মেলার সময় বাড়ােেনার। তবে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলা একাডেমী কর্তৃপক্ষকে তা জানানো হয়নি। তবে অনন্যা, কাকলীসহ বেশ কয়েকটি প্রকাশনীর কর্ণধাররা দাবি করছেন মেলার এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে হলে মেলার সময়সীমা এক সপ্তাহ বাড়াতে হবে। প্রকাশকরা বলেন, মেলার এই শেষ সময়ে এমনিতেই বেচাবিক্রি ভালো হয়। কিন্তু বৃষ্টি পাঠকদের হোঁচট দিলো। আর পানি নিষ্কাশন ও ছাদের ত্রিপল ভেদ করে পানি ঢুকেছে, ভিজেছে বইপত্র। এতে ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। অন্বেষা প্রকাশনীর মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, আমাদের অনেকগুলো বই ভিজে গেছে। এখনোও আমরা সেগুলো গুনে পারিনি। সব বই পাঠানো হচ্ছে বাংলা বাজারে। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, অনেক জায়গায় গর্ত। পাতা আর কাদায় একাকার পুরো মাঠ। প্রায় বেশিরভাগ স্টলই ক্ষতিগস্থ হয়েছে। স্টলগুলোর ফ্লোরে রাখা বইগুলো ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক বই একবারেই ঠিক করারও অনুপোযোগী হয়ে পরেছে। বর্ষা থেকে রক্ষা পেতে স্টলের উপরে ত্রিপল দেওয়া থাকলেও শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে তা অনেক স্টল থেকে উড়ে গেছে। পুরো ঝরের সময়টুকুই ভিজেছে বই। ভেজা বইয়ের পানি মোছা, ভেজা বই আলাদা করা এবং স্টল গোছাতে ব্যস্ত দেখা গেছে স্টল ব্যবস্থাপকদের। কেউ কেউ স্টলের দিকে যাওয়ার জন্য ইট বসানোর ব্যবস্থা করছেন। অনেক স্টলের দেয়ালের বিভিন্ন জায়গায়ও ভেঙ্গে গেছে। এগুলোও মেরামত করার চেষ্টা করছেন প্রকাশকরা।
এদিকে গতকাল বুধবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৪তম দিনে প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারনে কোন বইয়ের আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন হয়নি। বিকেল ৪টায় বাংলা একাডেমির ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ ভবনের আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তেন অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসার ও মান উন্নয়নে সমস্যা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক গবেষক আবুল মোমেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কাজী ফারুক আহমেদ, মনজুর আহমদ এবং শাহিনুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম। সভাপতির বক্তব্যে ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, একটি সার্বিক শিক্ষিত জাতি গঠনের অভিমুখে বাংলাদেশ অনেকদূর অগ্রগতি সাধন করেছে। এখন প্রয়োজন সর্বস্তরে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যাতে দেশের সার্বিক সুষম উন্নয়নে শিক্ষিত প্রজন্ম তাদের প্রকৃত ভূমিকা পালন করতে পারে। সন্ধ্যায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শাহাবুদ্দিন আহমেদ দোলনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সোসাইটি ফর ইউনিক ক্যাপাবল সিটিজেন্স’ এবং বাঁশরী দত্তের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘গীতশতদল’-এর শিল্পীবৃন্দ। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী আবদুল আউয়াল, শারমিন সুলতানা, জাকির হোসেন, শ্যামল কুমার পাল, তপন চন্দ্র ম-ল, মির্জা শামসুল আলম, রীতা ভাদুরী, মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া, আবিদা রহমান সেতু এবং সুধীর ম-ল।
আজকের অনুষ্ঠানসূচি
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৬ দফা প্রস্তাবের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি সম্প্রতি প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ রচিত গ্রন্থ ‘আমাদের বাচার দাবী’ : ৬ দফা’র ৫০ বছর। আজ বিকেল সোয়া ছয়টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। গ্রন্থটি বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক এম এম আকাশ এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। গ্রন্থকারের অনুভূতি প্রকাশ করবেন অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশে নারী জাগরণ : সমস্যা ও সম্ভাবনা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ড. মাসুদুজ্জামান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মালেকা বেগম, সুলতানা কামাল এবং মুহম্মদ শহীদ উজ জামান। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম আক্তারী মমতাজ। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন