মধ্য মার্চেই সম্পন্ন হবে তৃণমূল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া
আফজাল বারী : বিএনপির জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। কাক্সিক্ষত পদ এবং নিজ জেলার কমিটি পেতে শেষ সময়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। স্থানীয় পর্যায়ে উঠতি নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। অপরদিকে, দলের ত্যাগী নেতৃবৃন্দ দ্বারস্থ হচ্ছেন দলীয় প্রধানের।
এদিকে আভ্যন্তরীণ বিরোধে লিপ্ত জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের ঢাকায় ডাকা হচ্ছে। কারণ, তাদের অভাব অভিযোগ ও দাবি-দাওয়ার চূড়ান্ত মতামত নিচ্ছেন বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া। পক্ষ-প্রতিপক্ষের কথা শোনার পর সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন।
দলীয় সূত্রমতে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে ৭৫টি সাংগঠনিক কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু করে বিএনপি। পরে সময়সীমা আরো এক মাস বৃদ্ধি করেও পুনর্গঠন কাজ শেষ করতে পারেননি তারা। ধাপে ধাপে সময় বাড়ানোর পর চলতি ফেব্রæয়ারি মাস শেষ সময় বেঁধে দিয়েছেন দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া।
পুনর্গঠনের প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান। তাকে সহযোগিতা করছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহম্মেদসহ স্থানভেদে দলের সিনিয়র নেতাগণ। ৭৫টি সাংগঠনিক কমিটির মধ্যে বিএনপির চলতি বছরে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর, মেহেরপুর, নোয়াখালী, ঝিনাইদহ, খুলনা জেলা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, নওগাঁ, জামালপুর ও দিনাজপুরের কমিটি দিয়েছে।
এর আগে ২০১৬ সালে মাগুরা, নেত্রকোনো, শরীয়তপুর, সিলেট, সিলেট মহানগর, কুমিল্লা উত্তর, চট্টগ্রাম মহানগর, রাঙ্গামাটি, রাজশাহী, রাজশাহী মহানগর, শেরপুর জেলায় নতুন কমিটি ঘোষণা দিয়েছে। এসব কমিটির মধ্যে কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ হলেও অধিকাংশই অসম্পূর্ণ।
দলীয় সূত্রমতে, চলতি মাসে জেলা কমিটি পুনর্গঠন সম্ভব হচ্ছে না। তবে মধ্য মার্চেই এই প্রক্রিয়ার ইতি টানতে মরিয়া দায়িত্বপ্রাপ্তরা। বিএনপির সাংগঠনিক জেলা কমিটি ৭৫টি। ইতোমধ্যে ২৮ জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ১০টি প্রস্তুত; শিগগিরই আলোর মুখ দেখতে পারে। বাকি ৩৫টি প্রক্রিয়াধীন।
মোহাম্মদ শাহজাহান গত শুক্রবার ইনকিলাবকে জানান, আমরা নানা প্রতিকূলতার ভেতরে দলের পুনর্গঠনের কাজটি করছি। নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা। সরকারের প্রতিবন্ধকতার কারণে আমরা এগুতে পারছি না। তারপরও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সন নিজেই কমিটি পুনর্গঠন করছেন। তারা শুধু খসড়া কমিটি গঠনের কাজটি করছেন। স্থানীয় নেতাদের সাথে সমন্বয় করে খসড়া কমিটি চেয়ারপার্সনের কাছে জমা দিতে হয়। তিনি (খালেদা জিয়া) প্রয়োজন মনে করলে জেলার নেতৃবৃন্দকে ডেকে পাঠান, মতামত শোনেন, তারপর কমিটি প্রকাশ করা হয়।
শাহজাহান বলেন, শুধু জেলা কমিটিই নয় দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পুনর্গঠন চালাতে হচ্ছে সমানতালে। ইতোমধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, যুবদল ও জাসাসের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তাই দীর্ঘ সময় লাগছে। তবে আগামী মাসেই চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
দলীয় সূত্রের তথ্য মতে, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ফেব্রæয়ারির মধ্যেই ঢাকা মহানগর কমিটিসহ সারা দেশের কমিটি পুনর্গঠন কাজটি সমাপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, কমিটি নিয়ে এখনো পুরনো চিত্রই ঘুরপাক খাচ্ছে দলটিতে। দলের জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ধর্ণা দিচ্ছেন। কাক্সিক্ষত পদ পেতে দলের প্রভাবশালী নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তাছাড়া কমিটি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য আসছে কয়েকটি জেলা থেকে। এমন অভিযোগও এসেছে যিনি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের পদপ্রার্থী ছিলেন, তাকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আর সভাপতি প্রার্থীর জুটেছে সাধারণ সম্পাদকের পদ।
পুনর্গঠন সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করে বলেছেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ স্থানীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ ধরে রাখাতে চান। অথবা ‘মাইম্যান’কে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাতে চান। এ কারণে ঘোষিত কমিটি বিতর্কিত হচ্ছে এবং পুনর্গঠনও বিলম্বিত হচ্ছে।
ফরিদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শাহ মো. আবু জাফর। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু জেলা কমিটির পদ ছাড়তে নারাজ। ফলে একাধিকবার তারিখ দিয়েও কমিটি পুনর্গঠন সম্ভব হচ্ছে না। কমিটি পেতে দলটির স্থানীয় নেতাগণ এখন ঢাকায়। শেষ ফয়সালার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের দিকে তাকিয়ে আছেন স্থানীয়রা। ফরিদপুরের মতো অভিযোগ একাধিক জেলা ও নেতার বিরুদ্ধে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন