মোঃ ফজলুর রহমান, হবিগঞ্জ : পূর্ব বিরোধের জের ধরে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের চার শিশুকে অপহরণের পর শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার অন্যতম আসামি বাচ্চু মিয়া র্যাবের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছেন। দুই র্যাব সদস্য আহত হয় বলেও দাবি করেছে সংস্থাটি। অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর রাত সাড়ে ৪টার দিকে চুনারুঘাট দেওরগাছ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
র্যাব-৯ শ্রীমঙ্গলের কোম্পানি কমান্ডার কাজী মনিরুজ্জামান জানান, বাহুবলে চার শিশু হত্যার ঘটনায় র্যাব সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। এর অংশ হিসেবে সিলেটের বিশ্বানাথ থেকে বুধবার দিবাগত রাতে শাহেদ নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহেদ জানান, রাতেই দেওরগাছ এলাকা দিয়ে বাচ্চু ভারতে পালিয়ে যাবে। বিষয়টি জানার পরে র্যাবের আরেকটি দল ওই এলাকায় অভিযান চালায়।
এ সময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে বাচ্চুবাহিনী গুলি চালালে দুই র্যাব সদস্য আহত হন। আত্মরক্ষার্থে র্যাবও পাল্টা গুলি চালালে বাচ্চু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে র্যাব সদস্যরা একটি নাইন এমএম পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে। বাচ্চুর মরদেহ বর্তমানে চুনারুঘাট হাসপাতালে রাখা হয়েছে বলে জানান মরিুজ্জামান।
এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া রুবেল মিয়ার (১৭) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি তুলে ধরে বলেন, গ্রাম পঞ্চায়েত আব্দুল আলী ওরফে বাগল মিয়ার নির্দেশে এ কিলিং মিশনে অংশ নেয় ৬ জনের একটি দল। আব্দুল আলী ওরফে বাগল মিয়ার ছেলে রুবেল মিয়া (১৭), একই গ্রামের আরজু মিয়া (২০) ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক বাচ্চু মিয়াসহ (২৫) মোট ৬ জন তাদের গ্রামের চার শিশুকে হত্যা করে। অপর ঘাতক আরজু মিয়া তার স্বীকারোক্তিতে জানায় হত্যাকা-ে ৬ জন অংশ নিয়েছিল ৯ থেকে ১০ জন। এবং হত্যাকা-ের স্থান বাচ্চু মিয়ার সিএনজি গ্যারেজ নয়। হত্যা করা হয়েছিল আব্দুল আলী বাগালের লেবু বাগানে। তিনজনের স্বীকারোক্তি অনেকাংশে মিললেও স্থান এবং হত্যায় অংশ নেয়ার সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় অপহরণ করা হয় সুন্দ্রাটিকি গ্রামের ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), আবদাল মিয়ার ছেলে প্রথম শ্রেণির ছাত্র মনির মিয়া (৭), আব্দুল আজিজের ছেলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তাজেল মিয়া (১০) ও সুন্দ্রাটিকি আনোয়ারুল উলুম ইসলামিয়া মাদরাসার নুরানি প্রথম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল কাদিরের ছেলে ইসমাইল মিয়া (১০)।
নিখোঁজের পাঁচ দিন পর ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে গ্রামের পার্শ্ববর্তী ইছাবিল নামক বালু মহাল এলাকা থেকে বালু মিশ্রিত অবস্থায় মাটিচাপা দেয়া ওই চার শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে আটক শাহেদ মিয়াকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হবিগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্থান্তর করে র্যাব। পরে চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মোকতাদির হোসেন রিপন দুপুর দেড়টায় শাহেদ মিয়াকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউছার আলমের আদালতে হাজির করেন। আদালত শুনানি শেষে শাহেদ মিয়ার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ মোকতাদির হোসেন রিপন জানান, শাহেদ মিয়াকে রিমান্ডে এনে জিঞ্জাসাবাদ করা হলে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। তাই ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছিল। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন