চট্টগ্রাম ব্যুরো : মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে ‘রাবিশ’ বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। সেই সাথে তিনি এধরনের বক্তব্য প্রতিহত করা হবে বলেও জানান। গতকাল নগরীতে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আপনার কথা বলার স্বাধীনতা আছে বলে আপনি বাংলাদেশে ৩০ লাখ শহীদ হয়েছে কিনা জানা নেই বলে বক্তব্য দেবেন? এ ধরনের বক্তব্য রাবিশ। এগুলো প্রতিহত করতে হবেÑ প্রতিরোধ করতে হবে। জাতির সত্য ইতিহাস নিয়ে বিতর্ক করার অধিকার কারও নেই। এই দুঃসাহস হয় কিভাবে? এটা কোন গণতন্ত্র নয়।’
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বেগম জিয়ার নাম উল্লেখ না করে মিজানুর রহমান বলেন, কতগুলো বিষয় আছে ঐতিহাসিক সত্য। সেই স্বীকৃত মীমাসিংত বিষয়কে বিতর্কিত করা দুরভিসন্ধিমূলক। জাতীয় স্বার্থে, রাষ্ট্রীয় স্বার্থে, জনগণের ঐক্যের স্বার্থে এগুলোকে বিতর্কিত করা উচিৎ নয়। যে সংবিধানে ৩০ লাখ শহীদের কথা লেখা আছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা সংবিধানকে অবজ্ঞা করার শামিল। যিনি সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছিলেন তিনি সংবিধানের বিরুদ্ধে কিভাবে কথা বলেন?’
গত ২১ ডিসেম্বর রাজধানীতে একটি আলোচনা সভায় খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, আজকে বলা হয় এত লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে, আসলে কত লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নানা বই-কিতাবে নানারকম তথ্য আছে। তার ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আদালতে ইতোমধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছে।
এর আগে বেসরকারি চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির আইন অনুষদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। এরপর তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সেখানে ইসলামের বিরুদ্ধে চরম কটূক্তি করে মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারানো লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষ নিয়ে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার দেশী-বিদেশী যারা সোচ্চার তাদের একহাত দিয়েছেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমি আশ্চর্য হয়ে যাই, একজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের নিয়ে যখন দেখি কোন কোন বিদেশী সংস্থাও সরকারকে বলে যে যেসব মামলা হয়েছে সেগুলো তুলে নাও। ব্যক্তি মামলা করলে সেগুলো প্রত্যাহার করে নেয়ার ক্ষমতা কি রাষ্ট্র কিংবা সরকারের আছে? তাদের কথা শুনলে মনে হবে রাষ্ট্র কোন ব্যক্তিকে দিয়ে মামলাটি করিয়ে নিচ্ছে, এই ধারণা তো অমূলক।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা এখন এত উৎসাহ দেখাচ্ছেন, একই উৎসাহ লতিফ সিদ্দিকীর ক্ষেত্রে দেখালেন না কেন? তিনিও তো একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেই বক্তব্য নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে। কিন্তু তখন তাকে যেভাবে অপদস্থ করা হয়েছিল সেটা নিয়ে আপনারা প্রশ্ন তুললেন না কেন?’
২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতির এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা লতিফ সিদ্দিকী ইসলাম, মহানবী (সা.) ও হজ নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেন। মিডিয়ায় তা প্রকাশের পর দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে। বিভিন্ন মহলের দাবির মুখে অক্টোবরেই লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দিয়ে দল থেকেও বহিষ্কার করা হয়। দলীয় পদ ও মন্ত্রিত্ব খোয়ানোর পর লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় মামলা হতে থাকে। এসব মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়। দেশে ফিরে কারাবন্দি লতিফ সিদ্দিকী মুক্তি পান গত বছরের সেপ্টেম্বরে।
মাহফুজ আনামের নাম উল্লেখ না করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, জনৈক সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলার হিড়িক পড়েছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র কিন্তু কোন মামলা দায়ের করেনি। ব্যক্তি উদ্যোগে অতি উৎসাহী হয়ে কেউ কেউ মামলা করছে। ব্যক্তিরা যখন মামলা করে সেখানে তো রাষ্ট্র কিংবা সরকারের কোন হাত থাকে না। আইনগত প্রতিকার চাওয়া তো ব্যক্তির অধিকার। তবে কথা বলার স্বাধীনতা ব্যাহত করার জন্য কেউ যদি এসব মামলা করে থাকেন তার নিন্দা জানাই।
একটি বিশেষ সময়ে পত্রিকায় কিছু অসত্য, বিকৃত তথ্য দেয়া হয়েছে। পত্রিকার সম্পাদক, উনি ক্ষমা চেয়েছেন। এটা উনার মহত্ত্ব। উনার প্রশংসা করছি। কিন্তু বিকৃত তথ্যের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত ও হয়রানির শিকার হয়েছেন তাদের প্রতিকার কী? এই বিষয়টা আইনের উপরই ছেড়ে দেয়া উচিৎ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন