স্টাফ রিপোর্টার : প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ব্যাপারে আপত্তি থাকলেও সামনে কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমেই নতুন নির্বাচন কমিশনের (ইসির) কর্মকান্ড দেখবে বিএনপি। গতকাল বুধবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় দলের এই অবস্থানের কথা জানান স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, একজন চিহ্নিত আওয়ামী লীগ সমর্থক সাবেক সরকারি কর্মকর্তাকে নির্বাচন কমিশনের প্রধান করেছে। আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। এখনো বলছি, এই ব্যক্তির অধীনে এই দেশে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। আওয়ামী লীগ সরকার একই উদ্দেশ্যে আবার বিনা ভোটে নির্বাচিত হওয়ার, বিনা ভোটে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র করে এই রকীব (সদ্য বিদায়ী সিইসি কাজী রকীবউদ্দিন আহমদ) মার্কা নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছে।
তারপরও আমরা দেখতে চাই, এই নির্বাচন কমিশনের কর্মকান্ড। সামনে কয়েকটি নির্বাচন আছে। সেই নির্বাচনগুলোর মাধ্যমে প্রমাণিত হবে, এই নির্বাচন কমিশনও সেই রকীব মার্কা নির্বাচন কমিশন হয়েছে।
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে সিইসি এম নুরুল হুদা কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের শূন্য ২ আসনে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। এই দু’টি নির্বাচন হবে ৩০ মার্চ।
২০০৯ সালে ২৫-২৬ ফেব্রæয়ারি বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। রক্তাক্ত ওই বিদ্রোহের পর সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নাম বদলে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের নেত্রী পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, একটি নির্বাচন কমিশনই সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারে না, যদি সেই সময়ের সরকার নিরপেক্ষ না হয়। প্রমাণ এই সরকার দিয়েছে, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন হতে পারে না। এর প্রমাণ এ সরকার হয়েছে এবং এর আগের নির্বাচনগুলোও আমরা দেখেছি। এদেশে যদি রাজনৈতিকভাবে একটি সমঝোতার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক সঙ্কটের মোকাবেলা করতে হয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হয়, জনগণের ভোটের অধিকার জনগণকে ফিরিয়ে দিতে হয়, তাহলে নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, যদি শেখ হাসিনা সেই দিকে (নির্বাচনকালীন সরকার) না গিয়ে গায়ের জোরে নিজে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য আবার ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, তার জন্য দেশের জনগণ ভবিষ্যতে বসে থাকবে বলে আমরা মনে করি না। সেই কারণে দেশে যদি বিশৃঙ্খলা হয়, অশান্তি হয়, নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়, তাহলে শেখ হাসিনাকে এককভাবে দায়-দায়িত্ব নিতে হবে।
আমরা আশা করি, সরকার তাদের সামনের যে চ্যালেঞ্জ, এটাকে ভালো করে উপলব্ধি করবে। জনগণের প্রত্যশা অনুযায়ী আগামী নির্বাচন হবে সকল দলের অংশগ্রহণে এবং জনগণ যাদের চাইবে, তারা সরকার গঠন করবে।
বিডিআর হত্যাকাÐের ঘটনা সরকারের গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে উল্লেখ করে ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ২৫ ফেব্রæয়ারির ঘটনা একটি কলঙ্কময় একটি দিন। সেদিন ৫৭ জন সামরিক বাহিনীর চৌকস কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাদের পরিবার-পরিজনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ১/১১ এর মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকার ষড়যন্ত্র করে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা দিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই তাদের যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছিল, সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ নিলো এই পিলখানা ট্র্যাজেডি। ঘটনার দিন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর অফিসে বসা ছিলেন। তিন বাহিনীকে ডেকে সেখানে বসিয়ে রেখেছিলেন। উপরের থেকে হুকুম হলে আধা ঘণ্টার মধ্যে পিলখানা বিদ্রোহ দমন করা যেতো। কিন্তু তা করা হয়নি। এজন্য করা হয়নি, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে।
সভাপতির বক্তব্যে জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া হতে দেয়া হবে নাÑ এটা আমাদের সাফ কথা।
দলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় সংগঠনের সহসভাপতি আবু মোজাফফর মো. আনাছ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান খান আসাদ, কেন্দ্রীয় নেতা শেখ জামালউদ্দিন, শেখ ফরিদউদ্দিন, নজরুল ইসলাম বাবলু, রাকিবুল ইসলাম রুবেল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন