রিজেক্ট সিরিঞ্জের সুঁচও ফোটানো হয় শরীরে : শজিমেক কর্তৃপক্ষের দুঃখ প্রকাশ : তদন্ত কমিটির কাজ শুরু
মহসিন রাজু , বগুড়া থেকে : শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সিরাজগঞ্জ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আলাউদ্দিন সরকার (৬০)-এর ছেলে রউফ সরকারকে পর্যায়ক্রমে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধর এবং কান ধরে ওঠবস করার ঘটনায় গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। বুধবার থেকে শুরুর পরবর্তী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে শজিমেকের পরিচালকের পক্ষ থেকে মিডিয়ায় পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সৃষ্ট অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি মেডিক্যাল ইন্টার্নদের হাতে লাঞ্ছিত- অপমানিত রউফের পরিবারকেই ঘটনার জন্য দায়ী করে মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর খবর প্রচারের অভিযোগ করা হয়েছে।
গতকাল (বুধবার) তদন্ত কমিটির প্রধান বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, ‘বুধবার থেকে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে রিপোর্ট দিতে হবে। তদন্ত কমিটিতে তিনি ছাড়া আরো যাদের রাখা হয়েছে তারা হলেনÑ সহকারী অধ্যাপক ডা: নিতাই, ডা: মনিরুজ্জামান আশরাফ, ডা: শাহারুল ও সহকারী পরিচালক কামরুল আহসান।’
শজিমেকের পরিচালকের অফিস কক্ষেই যখন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা মারধরের ঘটনা ঘটায় তখন পরিচালক এবং আপনিসহ আরো কয়েকজন সিনিয়র চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ওই রুমে সিসি ক্যামেরা আছে। গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ঘটনার ভিডিওচিত্র রয়েছে। তারপরও ৭ দিন ধরে তদন্তের নামে কালক্ষেপণের কোনো প্রয়োজন আছে কি না , তা জানতে চাইলে ডা: নির্মলেন্দু বলেন, পদ্ধতিগতভাবে যাকে মারা হয়েছে তার কাছ থেকে অভিযোগ শুনতে হবে এবং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের কথাও শুনতে হবে। তারপর তো রিপোর্ট করতে হবে।
অপরদিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মাসুদ আহসান স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রোগী আলাউদ্দিনের ছেলে মহিলা ইন্টার্ন চিকিৎসকের সাথে কথা কাটাকাটি এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। এ সময় অন্য এক ইন্টার্ন চিকিৎসক এলে তাকেও মারধর করা হয়। ওই ঘটনা মীমাংসার জন্য পরিচালকের রুমে সিনিয়র চিকিৎসক, বিএমএ, স্বাচিপ নেতৃবৃন্দ, পুলিশসহ বসা হয়। কিন্তু সেখানে রোগীর আত্মীয়রা হুমকি প্রদান করলে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সৃষ্ট অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে আরো বলা হয়, মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চলছে, যা চিকিৎসা কার্যক্রমের জন্য অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এদিকে সিরাজগঞ্জ সদরের কোনাগাঁতি গ্রামে রউফ সরকারের বাড়িতে শজিমেকে চিকিৎসা নিতে এসে তার অসুস্থ পিতার মৃত্যু, সেসহ তার আরো ৭ আত্মীয়কে শারীরিকভাবে নাজেহাল হওয়ার ঘটনায় চলছে যুগপৎ শোক, মাতম ও আহাজারি। লজ্জায় অধোবোধিত পুরো পরিবার। যোগাযোগ করা হলে গতকাল বুধবার রউফ সরকার বলেন, ‘ওই দিন ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতে শুধু তিনি একা নন, তার স্ত্রী, ২ ছোট ভাই, বোন জামাই, বোন ও শ্যালিকাও মারধরে আহত হন। মেডিসিন ওয়ার্ডে তাকে দলেবলে মারধরের সময় ছোটাছুটিতে তার অসুস্থ বাবা বুকে প্রচ- আঘাত পান। সম্ভবত ওই আঘাতের কষ্টের সাথে বয়ষ্ক ছেলের লাঞ্ছিত-অপমানিত হবার অনুভূতি থেকেই অসুস্থতা গুরুতর রূপ নিয়ে তার মৃত্যু হয়’।
এক প্রতিবেশি বলেন, রউফের পরিবার ভোটের সময় নৌকায় ভোট দেয়। তবে মন্ত্রী নাসিম সাহেবের সাথে তাদের কারো পরিচয় নেই। তারপরও বিপদে পড়ে জান ও মান বাঁচাতে মন্ত্রী নাসিমের নাম বলে হয়তো তারা পরিত্রাণ পেতে চেয়েছিলেন, যা তাদের জন্য হিতে বিপরীত হয়। সরকার সমর্থক ইন্টার্ন ডাক্তারদের রাগ আরো বেড়ে যায়, তারা আরো উন্মত্ত ও হিং¯্র হয়ে ওঠে। তিনি আরো বলেন, উন্মত্তরা বর্বরের মতো শুধু মারধরই করেনি, মারের পাশাপাশি রিজেক্ট সিরিঞ্জের সুঁচও ফোটানো হয়েছে তাদের শরীরে।
মৃত আলাউদ্দিনের স্ত্রী ও রউফ সরকারের মা শান্তি বেওয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের এমন কারো সাথে পরিচয় বা আত্মীয়তা নেই, যার কাছে যাব বিচার চাইতে। আল্লাহই এর বিচার করবে। তবে দোয়া করি চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যেয়ে আর কাউকেই যেন এভাবে অপমানিত হতে না হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন