ইনকিলাব ডেস্ক : সাধ করে রাজনীতিতে পদার্পণ করেছিলেন সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তী। পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির আহŸানে সাড়া দিয়ে ভারতের সংসদে পা রেখেছিলেন। কিন্তু রাজনীতির ময়দানে তার অভিজ্ঞতা মোটেই মধুর হয়নি।
দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে তদন্তকারী সংস্থার একের পর এক নোটিশ এবং দলের নেতাদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়া - এসব কারণে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রাজনীতি থেকে সরে এসেছেন তিনি। চুপিসারে রাজ্যসভার সদস্যপদ ত্যাগ করেছেন। এ বিষয়ে প্রকাশ্যে আসতে নারাজ টলিউড ও বলিউডের জনপ্রিয় তারকা মিঠুন। তবে বিরোধী দল বিজেপির সংসদ সদস্য অভিনেত্রী রূপা গাঙ্গুলী বলছেন, ‘বীতশ্রদ্ধ হয়ে রাজনীতি ও সংসদের সদস্যপদ ত্যাগ করেছেন মিঠুন। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য বছরের পর বছর ধরে মিঠুন চক্রবর্তী নিঃশব্দে যে কাজ করে গেছেন, তা অনেকেই জানেন না। অথচ তার গায়ে কালি পড়েছে। কয়েক দশকের কঠোর সাধনা ও পরিশ্রমের দ্বারা তিনি যে সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করেছেন, রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতি তাকে কালিমালিপ্ত করেছে। অন্যের দুর্নীতির দায় নিজের ঘাড়ে নিয়ে বেঁচে থাকা যায় না। কোনো স্বচ্ছ ও স্বাধীনচেতা মানুষের পক্ষেই সেটা মেনে নেয়া সম্ভব নয়। উনিও মেনে নিতে পারেননি’।
রাজ্যসভায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে মিঠুনের ছেড়ে দেয়া পদটিতে উপ-নির্বাচন হবে ১৭ মার্চ। মাস দেড়েক আগে অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী রাজ্যসভার এমপি পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর, গত মঙ্গলবার ওই পদে উপ-নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে দেশের জাতীয় নির্বাচন কমিশন। কমিশনের প্রধান সচিব বারীন্দ্র কুমার এ বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। কলকাতা বিধানসভায় ভোটগ্রহণ হবে ১৭ মার্চ, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। সেদিনই বিকেল ৫টায় ভোট গণনা হবে। নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি হবে ২৮ ফেব্রæয়ারি। এছাড়া মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ৭ মার্চ, বাছাই ৮ মার্চ। প্রার্থীপদ প্রত্যাহারের শেষ দিন ১০ মার্চ। আর ২০ মার্চের মধ্যে সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
অন্ধপ্রদেশের সাত এবং তেলেঙ্গানার তিনজন বিধানপরিষদ সদস্যের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৯ মার্চ। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে এই দুই রাজ্যের ১০টি আসনে নির্বাচন হবে।
বিশিষ্টজনদের তৃণমূলে যোগ দিয়ে পরে বীতশ্রদ্ধ হয়ে সরে আসার ঘটনা এই প্রথম নয়। ২০০৬-০৭ সালে সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে উঠেছিল সংগীতশিল্পী কবির সুমনের। ২০০৯ সালে তিনি যাদবপুর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের লোকসভার এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু দলের নেতাদের সঙ্গে ঠোকাঠুকি বেঁধে যায় শুরুতেই। ২০১০ সালের মার্চে দল ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি। এমপি পদটিও ছাড়তে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর অনুরোধে আর পদ ছাড়েননি। অর্থাৎ ২০১৪ সালে তার মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত এমপি ছিলেন সুমন।
এদিকে রাজ্যসভায় মিঠুনের পদটি ফাঁকা হওয়ায় আরও সাড়ে তিন বছর এমপি পদে কাকে আনা হবে, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। নিয়মানুযায়ী, কোনো সংসদ সদস্যের পদ ফাঁকা হলে পরবর্তী ছ’মাসের মধ্যে সেই পদটি পূরণ করতে হয়। ফলে তৃণমূল মিঠুনের জায়গায় নতুন সংসদ সদস্য নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছে। দলীয় সূত্রের খবর, ফাঁকা পদে দলের প্রার্থী হিসেবে যে কয়েকটি নাম উঠে এসেছে, তার মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন দেবপ্রসাদ রায়। চলতি বছরের মাঝামাঝি বাংলার আরও কয়েকজন রাজ্যসভার সাংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সেক্ষেত্রে দিল্লির এক প্রভাবশালী বাঙালি কংগ্রেস নেত্রী তৃণমূলে যোগ দিয়ে তৃণমূলের টিকিটেই রাজ্যসভায় যেতে আগ্রহী বলেও দাবি করেছে তৃণমূলের সূত্রটি। তালিকায় রয়েছেন মানস ভুঁইয়া, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মহুয়া মৈত্ররাও।
প্রায় সাড়ে তিন বছর মেয়াদ থাকতেই গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে রাজ্যসভার সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন অভিনেতা সংসদ সদস্য মিঠুন চক্রবর্তী। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হামিদ আনসারির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন। চিঠিতে শারীরিক অসুস্থতার কথা লিখেছিলেন তিনি। নিজে না আসতে পারার কারণও জানিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, দীর্ঘদিন ধরে শিরদাঁড়া ও অগ্ন্যাশয়ের অসুখে ভুগছেন এই তারকা। ঘনিষ্ঠ মহলে একাধিকবার মিঠুন বলেছেন যে, রাজনীতি তার প্রকৃত জায়গা নয়। তিনি সরে আসতে চান। বছর দুয়েক ধরেই তিনি সংসদে অনুপস্থিত ছিলেন। প্রতিবার সংসদ অধিবেশনে নিজের অসুস্থতার প্রমাণপত্র-সহ চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন। রাজ্যসভার নিয়ম অনুযায়ী পদত্যাগ করতে হলে সংসদ সদস্যকে সশরীরে উপস্থিত থেকে ইস্তফাপত্র জমা দিতে হয়। এ নিয়মের অন্যতম কারণ হলো, পদত্যাগী সংসদ সদস্য সত্যিই নিজে পদত্যাগ করতে চাইছেন কিনা এবং বিশেষ কারও চাপের মুখে পড়ে তিনি পদত্যাগ করছেন কিনা যাচাই করা। মিঠুনের আবেদন গ্রহণ করেছিলেন হামিদ আনসারি। সূত্র : ডয়েচে ভেলে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন