ভাই দোস্ত বুযুর্গ! পৃথিবীতে যত জিনিস পয়দা হয়েছে, যত মানুষ দুনিয়াতে এসেছে এবং যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে সবই আল্লাহ তায়ালার হুকুমে হয়েছে। এগুলোর অস্তিত্ব বাকি থাক বা না থাক সবই আল্লাহ করেন এবং সার্বিক লালন পালনের দায়িত্বভারও তাঁর কুদরতি হাত দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। হযরতজী মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী (রহ.) বলেন- আল্লাহ এগুলো পয়দা করে ছেড়ে দেননি; বরং এগুলোর উপকার অপকার তার দ্বারা করে দেখিয়েছেন। উপকারী জিনিস দ্বারা উপকার আর অপকারী জিনিস দ্বারা অপকার করার ক্ষমতা একমাত্র তার নির্দেশের উপর নির্ভরশীল।
মুহতারাম দোস্ত বুযুর্গ! মেহমান বলেন- কোনো জিনিস আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে নয়। নীল দরিয়া প্রবাহিত হওয়া, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ হওয়া, মেঘের গর্জন সবই আল্লাহর হুকুমের গোলাম। হযরত ইবরাহীম (আ.) ঈমানের সব স্তর অতিক্রম করে গেছেন। অগ্নিকুÐে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। তিনি তাঁর মাকে বললেনÑ মা! তোমাকে কে খাওয়ায় কে পালে? হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর মা বললেনÑ তোমার বাবা। তিনি আবার বললেনÑ বাবাকে কে খাওয়ায় কে লালন-পালন করে? তার মা বললেনÑ তোমার বাবাকে খাওয়ায় ফেরআউন। এভাবে হযরত ইবরাহীম (আ.) প্রশ্ন করতে করতে ঈমানের উঁচুস্তরে পৌঁছে গেছেন আর আল্লাহকে পেয়ে গেছেন।
ভাই দোস্ত বুযুর্গ! দুটো জিনিস সব সময় মানুষের কাছাকাছি থাকে। এক. নজর, দুই. খবর। নজর হলো ধোঁকা। এটাই বাস্তবতা। কারণ আমার নজর আমাকে ধোঁকা দেয়। হুজুর (সা.) তার সাহাবিদের খবরের কথা দ্বারা নজরকে অস্বীকার করার কথা শিখিয়ে গেছেন। এভাবেই তারা তাদের ঈমান পয়দা করেছেন। হযরত আবু দারদা (রা.) তখন মসজিদে নববীতে অবস্থান করছিলেন। এমন অবস্থায় এক ব্যক্তি এসে বললেনÑ হে আবু দারদা! তোমার ঘরে আগুন লেগেছে। তিনি বললেনÑ এটা কখনও হতে পারে না। আবারও দ্বিতীয় ব্যক্তি এসে বললেনÑ হে আবু দারদা! তোমার ঘরে আগুন লেগেছে। পরপর তৃতীয়বারও একই হালতের কথা এসেছে আর তিনি অস্বীকার করেছেন। চতুর্থবার যখন অন্য এক ব্যক্তি এসে বললেনÑ হে আবু দারদা! তোমার ঘরে তো আগুন লাগেনি। তখন সাথে সাথে আবু দারদা (রা.) বললেনÑ হ্যাঁ আমার ঘরে কোনো আগুন লাগেনি। এটাই সত্য। মুহতারাম দোস্ত বুযুর্গ! মানুষের সামনে সবসময় দুটি হালত বিরাজ করে। একটি হলো ঐ রাস্তা যার উপর কদম কদম ফায়দা আসে। যেমন ব্যবসায় অনেক বড় ব্যক্তিত্ব অর্জন করা। সুখে জীবনযাপন করা। ক্ষমতা অর্জন করা। নমরুদ ফেরাউন হামান উতবা সাইবা তারা সবসময় এগুলোর মধ্যে মোবতালা ছিল। এগুলোর মধ্যে কোনো কামিয়াবী নেই। দ্বিতীয়টি হলো ঐ রাস্তা যার মধ্যে আসে বিপদ মসীবত আর হতাশা। যেমন মানুষের মধ্যে রোগ ব্যধি হওয়া। মানুষ বিপদ-আপদে নিপতিত হওয়া। মুসিবতে পড়ে ধৈর্য ধারণ করা। আর এটাই কামিয়াবির পথ। সুতরাং যে রাস্তায় কোনো মোজাহাদা নেই সে রাস্তা ফেরাউনের রাস্তা। যে রাস্তা মেহনতÑমোজাহাদা আর বিপদ আপদে পরিপূর্ণ সে রাস্তা যদিও বাহ্যিকভাবে নাকামী মনে হয় তবে সেটাই নবীওয়ালা রাস্তা। সাহাবাদের রাস্তা। হযরত মুসআব বিন উমাইর (রা.)-এর বিদেশী জুতা ও খুশবু ছিল। তার মাথায় ছিল সুন্দর শোভামÐিত চুল। যখন তিনি দাওয়াতের মেহনতের দ্বারা ঈমানের মতো মূল্যবান দৌলত অর্জন করেন তখন তার গায়ের জামা তুলে নেয়া হয়। যখন রাসূল তাকে ভালোবাসেন তখন তার ঘরে শরীর ঢাকারও কোনো কাপড় ছিল না।
ভাই দোস্ত বুযুর্গ! এমন এক সময় আসবে দাওয়াত ছেড়ে দেয়ার কারণে আল্লাহ বান্দার কারণে নারাজ হয়ে যাবেন। এভাবে মেহনত করে আল্লাহর নারাজীকে রাজীতে পরিণত করাই বান্দার কাজ। হযরত আসাদ (রা.)-এর মেহনতে মদীনার মতো শহর চমকে গেছে। এ কাজের বরকতে যার উপর আল্লাহর রহমতের নজর পড়েছে সে কামিয়াব হয়ে গেছে। সুতরাং সুখ-শান্তিতে কোনো কামিয়াবী নেই। এ মেহনতের মাকসাদ যেন দ্বীন জিন্দা হয় আর উম্মতও যেন ঐ স্তরে পৌঁছে যায়। হযরতজী মাওলানা ইউসুফ (রহ.) বলেনÑ তোমরা আমাকে সাহাবাদের মতো লোক তৈয়ার হওয়া একটি এলাকা দাও! আমি সারা দুনিয়াকে ডেকে বলতামÑ হে দুনিয়াবাসী! তোমরা দেখ তাদের সাথে লড়াই করে! দেখি কে পারে?
মুহতারাম দোস্ত বুযুর্গ! মেহমান বলেনÑ হুজুর বেশি বেশি ইনফেরাদী দাওয়াত দিতেন। মক্কায় ১৩ বছর কষ্ট করেছেন। আর মদীনায় ১০ বছর মেহনত করেছেন। তিনি বেশি বেশি ঈমানের ইনফেরাদী দাওয়াত দিয়েছেন। কারণ ইনফেরাদী দাওয়াত দ্বারা জেহেন তৈরি হয়। দাওয়াতের মেহনতে যখন কোনো স্থানে ভালো পরিবেশ তৈরি হবে তখন সেখানে খারাপ কাজ করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। গুনাহ করার পরিবেশ থাকবে না।
তরতীব হলো বছরে চার মাস। এটা তো আমাদের প্রথম ধাপ। আর মাসে দশ দিন। দৈনিক আট ঘণ্টা। এভাবে মেহনত করলে আল্লাহ চাহেন তো ঈমানের বেশি ফায়দা হবে। আল্লাহ আমাদের কবুল করে নিন। আমীন।
মূল : ইউসুফ বিন সাদ
অনুবাদ : মাওলানা মনির বিন ইউসুফ
অনুলিখন : মিযানুর রহমান জামীল
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন