মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

‘ইসলাম’ সন্ত্রাস নয়, শান্তি ও নিরাপত্তার ধর্ম

| প্রকাশের সময় : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

\ তিন \
আল্লাহ বলেন: “যারা দেশে সীমালংঙ্ঘন করেছিল এবং সেখানে অশান্তি বৃদ্ধি করেছিল। “আল-কুরআন, ৮৯:১১-১২” অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন: “তোমরাই তো পুরুষ উপগত হচ্ছ, তোমরাই তো রাহাজানি করে থাক এবং তোমরাই তো নিজেদের মজলিসে প্রকাশ্যে ঘৃণ্য কাজ করে থাক। উত্তরে তার স¤প্রদায় শুধু এই বলল, আমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি আনয়ন কর- যদি তোমরা সত্যবাদী হও।” “আল-কুরআন, ২৯:২৯”
৩। আগ্রাসনের ফলে সৃষ্ট বিপর্যয়। সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসনের ফলে যে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয় তাও ফাসাদ। আল্লাহ বলেন: “সে বলল, রাজা-বাদশাহরা যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে তখন তাকে বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানকার মর্যাদাবান ব্যক্তিদের অপদস্থ করে, এরাও এরূপই করবে।” “আল-কুরআন ২৭:৩৪।” অন্য স্থানে আল্লাহ বলেন, “আর সেই শহরে ছিল এমন নয় ব্যক্তি, যারা দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি করত এবং সৎকর্ম করত না।” “আল-কুরআন, ২৭:৪৮।”
৪। জুলুম, অবিচার ও লুটতরাজের কাজে প্রশাসনিক ক্ষমতার ব্যবহার করা। যে ধরনের শাসন ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় প্রশাসনিক ক্ষমতাকে মহৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের পরিবর্তে জুলুর, অবিচার ও লুটতরাজের কাজে ব্যবহার করা হয় তাকে আল-কুরআন ‘ফাসাদ’ নামে অভিহিত করেছে। আল্লাহ বলেন: ‘‘যখন সে প্রস্থান করে তখন সে পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টির এবং শস্যক্ষেত্র ও জীবজন্তু নিপাতের চেষ্টা করে। আর আল্লাহ অশান্তি পছন্দ করেন না।” “আল-কুরআন, ২: ২০৫।”
৫। সন্ত্রাসের মাধ্যমে যারা সমাজে অশান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায় আল-কুরআন তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত আখ্যায়িত করেছে। আল্লাহ বলেন: “যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণœ রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং দুনিয়ায় অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।” “আল-কুরআন, ২: ২৭”
৬। অন্যায়ভাবে বা পৃথিবীতে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে হত্যা করা সমগ্র মানব জাতিকে হত্যা করার শামিল। আল্লাহ বলেন: “এই কারণেই বনী ইসরাঈলের প্রতি এই বিধান দিলাম যে, নরহত্যা অথবা দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কার্য করার কারণে ব্যতীত কেউ কাউকেও হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষকেই হত্যা করল।” “আল-কুরআন, ৫: ৩২”
৭। পৃথিবীতে সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের শাস্তি ও পরিণতি প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন: “যারা আল্লাহ তাঁর রসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায় এটা তাদের শাস্তি যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে অথবা বিপরীত দিক হতে তাদের হাত ও পা কেটে ফেলা হবে অথবা তাদেরকে দেশ হতে নির্বাসিত করা হবে। দুনিয়ায় এটাই তাদের লাঞ্ছনা ও পরকালে তাদের মহাশাস্তি রয়েছে।” “আল-কুরআন, ৫: ৩৩”
হাদীসে সন্ত্রাস প্রসঙ্গ ঃ ইসলামী আইনের দ্বিতীয় উৎস আল-হাদীসের সন্ত্রাস শব্দটি সরাসরি ব্যবহৃত না হলেও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিভিন্ন দিক বুঝাতে বেশ কিছু পরিভাষার ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। সেসব পরিভাষার অন্যতম হলো, আল-কতলু বা হত্যা, আয-যুলম বা অত্যাচার, আত-তারভী, বা ভয় প্রদর্শন, হামলুছ ছিলাহ বা অস্ত্র বহন করা, আল-ইশারাতু বিছ-ছিলাহ বা অস্ত্র দ্বারা ইঙ্গিত করা ইত্যাদি। তবে এসব পরিভাষা ছাড়াও বিভিন্ন প্রেক্ষিতে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে সন্ত্রাসীদের কর্মকান্ডকে হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সন্ত্রাস প্রসঙ্গ বুঝাতে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে তার কয়েকটি নিম্নে উদাহরণ হিসেবে পেশ করা হলো।
১। একে অপরের প্রতি অত্যাচার করা নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে রাসূল সা. বলেছেন, আল্লাহ বলেন: “হে আমার বান্দাগণ! আমি আমার জন্য অত্যাচার হারাম করেছি এবং তা তোমাদের জন্যও হারাম করে দিয়েছি। সুতরাং তোমরা পরস্পর অত্যাচারে লিপ্ত হয়ো না।” “ইমাম মুসলিম, সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: কিতাবুল বিররি ওয়াস সিলাতি ওয়াল আদাবি, অনুচ্ছেদ: তাহরীমুয যুলুম, বৈরূত: দারু ইহইয়াইত তুরাছিল আরাবি, তা.বি., খ. ৪, পৃ. ১৯৯৪।”
২। স্বাভাবিকভাবে একজনের রক্ত, সম্পদ, সম্মান হানী করা অপরজনের জন্য হারাম। রাসূল সা. বলেন: তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ, তোমাদের সম্মান পরস্পরের জন্য ঐরূপ হারাম যে রূপ হারাম তোমাদের এই শহর, তোমাদের এই মাস এবং তোমাদের এই দিন “ইমাম বুখারী, সহীহ আল-বুখারী, অধ্যায়: আল-ঈমান, অনুচ্ছেদ: কওলিন নাবিয়্যি সা. রুববা মুবাল্লাগিন আও’আ মিন সামিঈন, বৈরূত: দারু ইবনু কাছীর, ১৯৮৭, খ. ১, পৃ. ৩৭।”
৩। কোন মুসলিমকে আতঙ্কিত করা অবৈধ। রাসূল সা. বলেন: “কোন মুসলিমের জন্য অপর মুসলিম ভাইকে আতঙ্কিত বা সন্ত্রস্ত করা বৈধ নয়।” “ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, অধ্যায়: আল-আদাব, অনুচ্ছেদ: মাই ইয়াখুযুশ শাইআ ‘আলাল মিযাহি, বৈরূত: দারুল কিতাব আল- আরাবিয়্যা, তা.বি.খ. ৪, পৃ. ৪৫৮”
৪। কোন মুসলিমের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণকারী ব্যক্তি মুসলিম উম্মাহর সদস্য নয়। এ মর্মে রাসূল সা. বলেন: “যে ব্যক্তি তোমাদের (মুসলিমদের) বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।” “ইমাম বুখারী, সহীহ আল- বুখারী, অধ্যায়: আদ- দিয়াত, অনুচ্ছেদ: কওলুল্লাহি তা’আলা ওয়া মান আহইয়াহা/ আল-মায়িদাহ- ৩২, প্রাগুক্ত, খ. ৬, পৃ. ২৫২০”
৫। কোন মুসলিমে অস্ত্র দ্বারা হুমকি দেয়া নিষিদ্ধ। রাসূল সা. বলেন: “তোমাদের মাঝে কেউ যেন তার মুসলিম ভাইয়ের প্রতি অস্ত্র দ্বারা হুমকি না দেয়। কেননা হতে পারে তার অনিচ্ছা সত্তে¡ও শয়তান তার হস্তদ্বয় আঘাত হানার ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটবে; অতঃপর সে এ অপরাধের কারণে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে”। “ইমাম বুখারী, সহীহ আল-বুখারী, অধ্যায়: আল-ফিতান, অনুচ্ছেদ: কওলুন্নাবিয়্যি স. মান হামালা আলান্নাস সিলাহা ফা লাইসা মিন্না, প্রাগুক্ত, খ. ৬, পৃ. ২৫৯২”
রাসূল সা. বলেন: “কোন ব্যক্তি যদি লোহা দ্বারা তার ভাইকে হুমকি দেয় তবে তা থেকে বিরত না হওয়া পর্যন্ত ফিরিশতাগণ তার প্রতি অভিশাপ করতে থাকেন যদিও হুমকি প্রদানকৃত ব্যক্তি তার সহোদর ভাই হয়।” “ইমাম মুসলিম, সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: আল- বিররি ওয়াস সিলাতি ওয়াল আদব অনুচ্ছেদ: আন-নাহইউ আনিল ইশারাতি বিসসিল্লাহি ইলা মুসলিমিন, প্রাগুক্ত, তা.বি, খ. ৪, পৃ. ২০২০।”
৬। আত্মঘাতী হামলার মাধ্যমে আত্মহত্যাও হারাম। রাসূল সা. বলেন: “যে ব্যক্তি পৃথিবীতে নিজেকে কোন বস্তু দ্বারা হত্যা করবে কিয়ামতের দিন তাকে সে বস্তু দ্বারা শাস্তি দেয়া হবে।” “ইমাম বুখারী, সহীহ আল- বুখারী, অধ্যায়: আল- আদাব, অনুচ্ছেদ : মা ইউনহা ‘আনিস সিবাবি ওয়াল লা’নি, প্রাগুক্ত, খ. ৫, পৃ. ২২৪৭।” রাসূল সা. আরো বলেন: “যে ব্যক্তি নিজেকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করবে তাকে জাহান্নামে অনুরূপভাবে শাস্তি দেয়া হবে। যে ব্যক্তি নিজেকে আঘাত করে আত্মহত্যা করবে তাকেও জাহান্নামে অনুরূপভাবে আঘাত করা হবে।” “ইমাম বুখারী, সহীহ আল- বুখারী, অধ্যায়: আল-জানাইয, অনুচ্ছেদ: মা জা‘আ কাতিলিন নাফস, প্রাগুক্ত, খ. ১, পৃ. ৪৫৯”
৭। শুধু মুসলিম ব্যক্তি নয়, কোন চুক্তিবদ্ধ অমুসলিমে হত্যা করাও নিষিদ্ধ। রাসূল সা. বলেন: “যে ব্যক্তি মুসলিম জনপদে বসবাসকারী চুক্তিবদ্ধ কোন অমুসলিমকে হত্যা করবে সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না, অথচ চল্লিশ বছরের পথের দূরত্ব হতেও তার সুগন্ধ পাওয়া যাবে।” “ইমাম বুখারী, সহীহ আল- বুখারী, অধ্যায়: আল- জিযইয়া ওয়াল মাওয়াদিআতি, অনুচ্ছেদ: ইছমু মান কাতালা মু‘আহিদা বিগাইরি জুরম, প্রাগুক্ত, খ. ৩, পৃ. ১১৫৫”
৮। সন্ত্রাসীর অন্তরে দয়ামায়া থাকে না, তাই সে হতভাগা। রাসূল সা. বলেন: “একমাত্র দুর্ভাগা ব্যক্তি হতেই দয়া ছিনিয়ে নেয়া হয়”। “ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, অধ্যায়: আল- আদাব, অনুচ্ছেদ: ফির রহমাতি, প্রাগুক্ত, খ. ৪, পৃ. ৪৪১”
৯। ইচ্ছাকৃত কোন মু‘মিনকে হত্যা করা বড় গুনাহসমূহের অন্যতম যার গুনাহ আল্লাহ মা‘ফ করবেন না। রাসূল সা. বলেন: “আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপনকারী ও ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মু‘মিন ব্যক্তিকে হত্যার গুনাহ ব্যতীত অন্য যে কোন গুনাহকে আল্লাহ হয়তো ক্ষমা করে দিবেন।” “ইমাম আবু দাউদ, আস- সুনান, অধ্যায়: আল ফিতান, অনুচ্ছেদ: ফী তা’যীমি কতলিল মু‘মিনি, প্রাগুক্ত, খ. ৪, পৃ. ১৬৭”

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন