আফতাব চৌধুরী
\ শেষ কিস্তি \
আমাদের সামাজিক ভারসাম্য আজ এ সব কারণেই বিঘিœত। সামাজিক বন্ধন যদি এই সব কারণে ঢিলে হয়ে যায়, তাহলে সামাজিকভাবে অন্যায়ের প্রতিরোধ করার ক্ষমতা লোপ পায়। সমাজের লোকেরা যদি পরস্পরের মধ্যে বিশ্বাস ও ভাল ধারণা পোষণ করতে পারে, সেখানে শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থিতিশীল হয়। মহানবী (সা.) বলেন, “তোমার ভাইকে দেখে তুমি স্মিতহাস্য উপহার দিলে তা হবে সদকার সাওয়াব তুল্য।” তিনি আরো বলেন, “মুমিনের বৈশিষ্ট হলো উজ্জ্বল অবয়ব-হাসিমুখ।”
কিন্তু কথা হচ্ছে যেখানে সমাজের অত্যন্ত গভীরে সন্ত্রাস তার মূল বিস্তার করে সেখানে এটা কি এত সহজেই উপড়ানো সম্ভব? এর উত্তর আগেই বলেছি যে, ভারসাম্য সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে পরস্পরের মধ্যে, সর্বক্ষেত্রে। খুন, রাহাজানি, ছিনতাই, ডাকাতি, ত্রাস সঞ্চার করা ইত্যাকার যে সন্ত্রাসী কর্মকাÐ আমাদের সমাজে চলছে, তা কেবল পুলিশি ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন সকলের সার্বিক সহযোগিতা। পরিবারের অভিভাবক, মসজিদের ইমাম সাহেব, স্কুলের শিক্ষক, সমাজে সমাজপতিরা যদি স্ব স্ব দায়িত্ববোধ নিয়ে এগিয়ে আসেন তাহলে সন্ত্রাস এভাবে ডালপালা বিস্তার করতে পারবে না।
আল্লাহ রাসূল (সা.) বলেছেন, “পরস্পরকে উত্তম ও পরিচ্ছন্ন কাজে সহযোগিতা কর, পাপ ও সীমা অতিক্রমী কোন কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না।” আজ আমাদের কোন পথিক রাস্তার চলমান জন¯্রােতের মধ্যেও কোন ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে আর্তচিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসে না, আসতে সাহস করে না। জনতার সম্মিলিত প্রতিরোধ প্রয়াসের সামনে সন্ত্রাসীর আগ্নেয়াস্ত্র ভোঁতা এটা প্রমাণ করার সময় এসেছে। সন্ত্রাসীদের সামাজিকভাবে বয়কট করাও একটি অস্ত্র হতে পারে। তবে মহানবী (সা.)-এর অনুসরণে আমরা যদি সত্যিকারভাবে এ সব লোকদের দাওয়াত দিতে পারি তাহলে তারা ফিরে আসবে। সাথে সাথে যদি সে সব কারণ দূরীভ‚ত করা যায়, যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সন্ত্রাস জন্ম দেয় বা লালন করে তাহলে এ সমস্যার সমাধান কোন কঠিন কাজ নয়।
মহানবী (সা.) যেসব লোককে তাঁর অনুপম আদর্শে উজ্জীবিত করে সোনার মানুষ করেছিলেন, তারা এক সময় ছিল দাগী সন্ত্রাসী ও জঘন্য অপরাধী। নিজের শিশু কন্যাদের তারা নিজ হাতে জ্যান্ত কবর দিত, তারা লুণ্ঠন করেই জীবিকা নির্বাহ করতো, খুন আর ব্যভিচার ছিল তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। সমাজে যদি বিচারপ্রার্থীকে নাজেহাল হতে না হয়, মজলুমের হক যদি ফিরে পাবার ব্যবস্থা হয়, উৎকোচের মাধ্যমে যদি নিরপেক্ষতা বিঘিœত না হয়, সর্বোপরি কারো ন্যয় অধিকারের নিজস্ব শক্তিতেই প্রতিষ্ঠা পায়, তাহলে পেশী শক্তির প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে যাবে।
নবিজি যেভাবে বেকার সাহায্যপ্রার্থীকে তার কম্বল বেচা অর্থ দিয়ে কুড়াল কিনে নিজে হাতল লাগিয়ে দিয়েছিলেন, সেভাবে যদি নিজের কিছু পুঁজি আর সরকারি সহায়তায় আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্পের আওতায় যুব সমাজকে আমরা কাজে লাগাতে পারি তাহলে সন্ত্রাস আপনা আপনিই দূর হয়ে যাবে। আমাদের যুব সমাজের মধ্য থেকে হতাশা দূর করে বিশ্বাসের চেরাগ জ্বালাতে হবে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, “তোমরা হতবল হয়ে না, হতাশ হয়ো না, তোমরাই তো সুউচ্চ, যদি তোমরা বিশ্বাস হয়ে থাক।”
বিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে কাজ করে যেতে হবে সবাইকে। আল্লাহতায়ালা বলেন, “আপনি তাদের বলে দিন- হে রাসূল! তোমরা কাজ করে যাও, অচিরেই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং মুমিনগণ দেখবেন।” তাই আমাদের কাজ করে যেতে হবে। সন্ত্রাস কোন কাজ নয়, এটা হচ্ছে অপকর্ম। রাগান্বিত হয়ে শক্তি প্রদর্শন করা কোনো বীরত্ব নয়। মহানবী (সা.) বলেছেন, “যে ক্রোধের সময় নিজেকে সংযত রাখতে পারে সেই প্রকৃত বীর।” তিনি আরো বলেন, “মুসলিম তো সেই, যার হাত ও মুখ থেকে মুসলমানরা নিরাপদ থাকে।” একজন মুসলমান যদি প্রকৃতই তাঁর নবীর অনুসারী হয়, তাহলে অন্যায়ভাবে সে কোন মানুষ এমন কি পশুপাখিরও এতটুকু ক্ষতি করতে পারে না।
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন