স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি অন্য কোনো দেশ কিংবা প্রভুদের কাছে মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি করে না বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
তিনি বলেন, আমরা রাজনীতি করি দেশের জনগণ আমাদেরকে পছন্দ করছে কি, করছে না তার উপর ভিত্তি করে। কারণ জনগণই হচ্ছে বিএনপিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনার মালিক। যারা অন্যে কারো কাছে, প্রভুদের কাছে নাকে খত দিয়ে, মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আছে, জনগণ তাদের কাছে কোনো বিষয় নয়। আর এজন্যই এদের (আওয়ামী লীগ) নেতারা বলেন, আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র। এর মানে হচ্ছে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না, জনগণকে বিশ্বাস করে না। বিএনপি নির্বাচনে আসবে, নাকে খত দিয়ে আসবে বলে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ দেখেই বিএনপি ও বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
গতকাল সোমবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।
নতুন নির্বাচন কমিশন ‘চোখ থাকিতে অন্ধ’ এর মতো ভূমিকা পালন করছে বলে জানিয়েছে রিজভী বলেন, কাজী রকিবউদ্দিন আহমদের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বর্তমান কমিশনের তুলনায় করতে গিয়ে তিনি বলেন, কাজী রকিবউদ্দিনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সিইসিসহ নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে যে বড় বড় বুলি ঝেড়েছেন, তা বাস্তবায়নের সম্পূর্ণ উল্টো চিত্রই দেশবাসী প্রত্যক্ষ করছে। এরা মুদ্রা এপিঠ-ওপিঠ। জাতীয় নির্বাচনে যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সিইসির মধুর কানেকশনের প্রতিফলন ঘটবে না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন ইলেকশন কমিশনও রক্তাক্ত পথে হাঁটতে শুরু করেছে। কাজী রকিবউদ্দিনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সিইসিসহ নির্বাচন কমিশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে যে বড় বড় বুলি ঝেড়েছেন তা বাস্তবায়নের সম্পূর্ণ উল্টো চিত্রই দেশবাসী প্রত্যক্ষ করছে।
তিনি বলেন, গতকাল সিলেটে ওসমানী নগর উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রæপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে একজন কিশোর নিহত এবং ২৫ জন আহত হয়েছে। এছাড়া আগামী ৬ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য দেশের মাত্র কয়েকটি উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কলাপাড়া, পাবনাসহ অন্যান্য স্থানে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদেরকে মনোনয়নপত্র দাখিলে বাধাসহ নির্বাচনী প্রচারণায় ভাঙচুর, হামলা এবং প্রার্থীদের জীবননাশের হুমকিও দেয়া হচ্ছে। নির্বাচনী এলাকাগুলোতে নৈরাজ্যকর ও রক্তক্ষয়ী পরিবেশ বিরাজ করছে। লাশ পড়তে শুরু করেছে। বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষ থেকে স্থানীয় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়গুলোতে এসব বিষয় নিয়ে অভিযোগ করা হলেও কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
রিজভী বলেন, নতুন সিইসির অধীনে কমিশনের কর্তৃত্বে নির্বাচনী রক্তাক্ত সহিংসতার তাপমাত্রা যেন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। পূর্বের কমিশনের ন্যায় ‘এরাও চোখ থাকিতে অন্ধ’। সুতরাং বর্তমান সিইসির ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে কানেকশন সম্পর্কে আমরা যা বলেছি তা অক্ষরে অক্ষরে ফলতে শুরু করেছে। সুতরাং পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে যে আওয়ামী লীগের সাথে সিইসির মধুর কানেকশনের প্রতিফলন ঘটবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা যে কথাটি বারবার বলেছি যে কেবলমাত্র আওয়ামী লীগের মনোবাঞ্ছা পূরণ করতেই একজন বিতর্কিত, অযোগ্য ও আওয়ামী ঘরানার লোককে সিইসি করা হয়েছে। আমি বিএনপির পক্ষ থেকে আগামী ০৬ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য দেশের কয়েকটি অঞ্চলে উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে যে সহিংসতা ও হানাহানি শুরু হয়েছে এবং এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সামাল দিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা, দুর্বলতা ও অযোগ্যতাকে ধিক্কার ও নিন্দা জানাচ্ছি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-নেতারা বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় নিয়ে আগাম মন্তব্য করতে শুরু করেছেন। ক্ষমতাসীনদের আজ্ঞাবাহী হয়ে আইনী প্রক্রিয়ার নামে দেশের একজন জনপ্রিয় নেত্রীর বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে পারবে না। বিএনপি চেয়ারপারসনের নামে যে মামলা দায়ের করা হয়েছে সেটি মিথ্যা, বানোয়াট এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য দ্বারা নির্ধারিত। এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার জনগণের কাছে কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। সরকার দায়বদ্ধতা বোধ করে না বলেই নিঃশ্বাস রোধকারী দুঃশাসনের দাপটে সবকিছু তাদের দখলে রয়েছে বলে মনে করে। এমনকি বিচার ও আদালতকেও তাদের টর্চারিং মেশিনের অংশ মনে করে। এবং সেটি দিয়ে তারা গণতন্ত্রে বিরোধীদলের যে অধিকার রয়েছে তা নির্মম নিষ্ঠুরতায় দমন করতে চায়। ক্ষমতাসীনদের কোন ধরনের অশুভ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে না, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্ভিকতা, সংকল্পে অটলতাই তাঁর রাজনৈতিক গন্তব্য।
ধানের শীষে ভোট দিলে জনগণ চিটা পায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যর জবাবে রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে তালাক দিয়েছেন। উনি এসব কথা বলে বেড়ান কারণ জনগণের কাছে কোনো দায়বদ্ধতা নেই। উনি জনগণকে বিশ্বাস করেন না, জনগণকে উনি তালাক দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী যা বলবেন জনগণ তার উল্টোটা ধরে নিবেন, কারণ তিনি কখনো সত্য কথা বলেন না।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আতাউর রহমান ঢালী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, শামা ওবায়েদ, সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, আব্দুল আউয়াল খান, সহ-দফতর সম্পাদক মো. মুনির হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন