বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অমর একুশে বইমেলা : সকালে কিনেছে শিশুর জন্য বিকালে নিজেরটা

প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও মেলার শেষ শুক্রবার হওয়ায় পুরো দিনই বইমেলা ছিলো জমজমাট। শেষ সময়ে বড়দের পাশাপাশি ভিড় ছিলো শিশুদেরও। প্রতিটা পিতা-মাতা নিজের কথা আগে না ভেবে, ভাবেন সন্তানের কথা। এই ভাবনা থেকেই শেষ শিশুপ্রহরে কিনেছেন সন্তানের জন্য বই, আর বিকালে মেলার মূল কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরপরই কিনেছেন নিজের জন্য। বই মেলায় জুড়েই গতকাল এ রকম দৃশ্য ছিলো চোখে পড়ার মতো।
বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে গতকাল শিশুরা এসেছে অমর একুশে বইমেলায়। শিশুদের এমন উপস্থিতিতে যেন বইমেলাটিই রূপ নেয় শিশু মেলায়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যারাই মেলায় এসেছেন তাদের বেশিরভাগই এসেছেন শিশুদেরকে সঙ্গে নিয়ে। এই সব শিশুর মধ্যে বই কী জিনিস তাও হয়তো জানা নেই অনেক শিশুর। তারপরও বইমেলায় চলে এসেছে তারা। কারণ আজ অমর একুশে বইমেলার ‘শিশু প্রহর’।
প্রথম শ্রেণিতে পড়ে শিশু মারিয়া। বইমেলায় এসেছে তার মায়ের সঙ্গে। বিনোদনের স্থানগুলো পরিভ্রমণ শেষে কয়েকটি শিশুদের বই নিয়েছে মারিয়া। ছড়া কবিতা জানে কি না জানতে চাইলে বেশ কয়েকটি কবিতা আবৃতি করে শোনায় সে। মিরপুর থেকে তামান্নাকে নিয়ে মেলায় এসেছে তার বাবা। তিনি জানান, শিশু প্রহর হওয়ায় সন্তানকে নিয়ে মেলায় এসেছি। সকালে বাচ্চার জন্য বই কিনেছি। এখন নিজের ও পরিবারের জন্য বই কিনবো।
এবারের বইমেলার শেষ শিশুপ্রহর উপলক্ষ্যে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে খুলে দেয়া হয় মেলার প্রবেশদ্বার। শিশুরা জড়ো হয় সিসিমপুর বটতলায়। বাংলা একডেমি জুড়েই ছিলো শিশুদের পদচারণা। পুরো পরিবেশে হয়ে উঠে মুখরিত। বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ যারাই শিশুদের বই নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছের তাদের বিক্রি ভালো বলেও জানান প্রকাশকরা।
দেখা যায়, পুরো বইমেলা জুড়ে শিশুদের প্রধান আকর্ষণ ছিল হালিম, টুকটুকি, ইকরিরা। এসব চরিত্র শিশুদের আনন্দে মাতিয়ে রাখে। সিসিমপুর কিডস কর্নারে সবুজ কার্পেটে তৈরি সিসিমপুর কিডস কর্নারে শিশুরা লাফিয়ে দৌড়ে আনন্দ উপভোগ করে। তাদের অভিভাবকরাও শিশুদের কিডস কর্নারে জড়ো হয়।
এদিকে অমর একুশে বইমেলার আয়োজন ও পরিচালনার ভার প্রকাশকদের হাতে ছেড়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। বাংলা একাডেমীর অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সমিতির নেতারা। গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে শিলাঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশনা সংস্থাগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়ারও দাবি জানানো হয়।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বরাবর ১২ দফার একটি অভিযোগপত্র দেয় প্রকাশক সমিতি। ওই অভিযোগপত্রে মেলায় বিভিন্ন স্টলে পাইরেটেড বই বিক্রি, ভারতীয় লেখকদের বই বেআইনিভাবে বিক্রি, মেলার স্টলবিন্যাস, ধুলোবালি নিয়ন্ত্রণে পানি ফেলার কাজ সুচারুরূপে না হওয়া, আলোকসজ্জায় ঘাটতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেন তারা। এসব সমস্যার সমাধানে বাংলা একাডেমী আন্তরিক নয় বলেও দাবিও করেন প্রকাশক সমিতি। তবে এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন শামসুজ্জামান খান । তিনি বলেছিলেন, আগামী বছর তাদের হাতে বইমেলা ছেড়ে দেব। দেখি কী করতে পারে। তারা কোনো দায়িত্বের বেলায় নেই, শুধুই অভিযোগ করে। বাংলা একাডেমী ও প্রকাশকদের এমন পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যই গত বুধবার শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয় বিভিন্ন প্রকাশনা স্টলের। স্টল বিন্যাসে অনিয়ম ও বাংলা একাডেমীর উদাসীনতার কারণেই ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে বলে মনে করেন তারা। এর বাইরে ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে মেলার সময় বৃদ্ধির আবেদন করলে একাডেমী কর্তৃপক্ষ নামেমাত্র সময় বৃদ্ধি করেন। এমন পরিস্থিতিতে বাংলা একাডেমীকেই মেলা আয়োজনের ক্ষমতা প্রকাশকদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার আহবান জািিনয়েছেন প্রকাশক সমিতির নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য ও অনুপম প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী মিলন কান্তি নাথ। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সমিতির সভাপতি ও আগামী প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী ওসমান গনি। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আগামী বছর থেকেই যেন মেলার ভার প্রকাশকদের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়। কারণ, তারা মনে করেন বইমেলা প্রকাশকদের এবং বর্তমানে বইমেলা আয়োজনের সক্ষমতা অর্জন করেছে প্রকাশকরা। এ ছাড়া প্রকাশকদের দাবি, বইমেলার বাকি ৩ দিন যেন মেলার সময় রাতে এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়। অর্থাৎ তাদের দাবি, মেলা যেন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে।
এই বছর মেলায় দৈনিক ইনকিলাবের সাংবাদিক মিজানুর রহমান তোতার ক্ষতবিক্ষত বিবেক নামের একটি বই এসেছে। বইটি পাওয়া যাচ্ছে মেলায় উদ্যানের অংশে ৫৭৯-৫৮০ নং স্টলে। বইটি প্রকাশ করেছেন এইচ ডেভেলপমেন্ট পাবলিশিং হাউস। লেখক বইটি উৎসর্গ করেছেন তার পিতা ও মাকে। এর আগে ২০০৮ সালে লেখকের মাঠ সংবাদিকতা নামের একটি বই প্রকাশ হয়েছিল।
অভিজিৎ স্মরণে নীরবতা পালন: গতকাল লেখক অভিজিৎ রায়ের স্মরণে পুরো বইমেলায় এক মিনিট নীরবতা পালিত হয়েছে। তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে উপলক্ষে বাংলা একাডেমিতে মেলার মূলমঞ্চে মহাপরিচালক (ডিজি) প্রফেসর শামসুজ্জামান খান এ ঘোষণা দেন। তারপর নীরবতা পালন করা হয়। পাশাপাশি অবিলম্বে অভিজিৎ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসি সংলগ্ন রাস্তায় খুন হয় অভিজিৎ।
পুরস্কার প্রদান: অমর একুশে উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সংগীত, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে গতকাল সকাল ১০ টায় মেলার মূল মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন একাডেমির উপপরিচালক রহিমা আখতার কল্পনা।
আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ২০২১ সালের বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড. খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং রাশিদ আশকারী। সভাপতিত্ব করেন শিক্ষাবিদ প্রফেসর এ. কে. আজাদ চৌধুরী।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন লাবণ্য আহমেদের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘গীতিমালিকা’-এর শিল্পীবৃন্দ। এছাড়াও সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী ফকির আলমগীর, আবদুল জব্বার, তিমির নন্দী, মনোরঞ্জন গোষাল, নমিতা ঘোষ, শিবু রায়, বিশ্বজিৎ রায়, মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন চৌধুরী, শফিউল আলম রাজা, পল্ল­বী সরকার মালতী এবং আরিফ রহমান।
আজকের অনুষ্ঠানসূচি:
গ্রন্থমেলা শুরু হবে সকাল সাড়ে ১০ টায় এবং শেষ হবে রাত ৮ টায়। বিকেল ৪ টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ৬ দফার পঞ্চাশ বছর শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর হারুন-অর-রশিদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ড. আবুল বারকাত, সুভাষ সিংহ রায় এবং অজয় দাশগুপ্ত। সভাপতিত্ব করবেন ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন