শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেবীগঞ্জে পুরোহিত হত্যার ‘হোতা’সহ ৩ জন গ্রেপ্তার

প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা : রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি হুমায়ুন কবির গতকাল সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ‘পুরোহিত’ হত্যাকা-ের সাথে মোট আটজন জড়িত। এছাড়া তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথাও জানান তিনি। এসময় উদ্ধার করা অস্ত্র প্রদর্শন করা হলেও গ্রেপ্তারদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। ঘটনার দিন গ্রেপ্তার হওয়া ও রিমান্ডে থাকা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয় বলে জানান তিনি। ডিআইজি বলেন, ‘ঘটনায় সরাসরি জড়িত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই এ বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার হলো। এরা জেএমবির স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের নেতা। তাদের মধ্যে হত্যাকা-ের হোতাও রয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।’ সাম্প্রতিক সময়ে উত্তরাঞ্চলে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার সবকটির সঙ্গে জেএমবির সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ওই হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত দুটি পিস্তল, তিনটি ম্যাগাজিন, তিনটি হাতবোমা, তিনটি ছুরি, পাঁচটি গুলি এবং যে বাইসাইকেলে নজরদারি করা হয়েছে সেটিও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান ডিআইজি। গ্রেপ্তার তিনজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকা-ে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে পুরো ঘটনার বিবরণ দিয়েছে বলেও দাবি করেন হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, ‘আইএস জঙ্গি নয়, জেএমবি সদস্যরা এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে।’ ডিআইজি বলেন, মূলত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও দেশকে অস্থিতিশীল করতে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খরা বাহিনীর তৎপরতা ও জনগণের সহায়তায় মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ সফল হয়েছে। এ সময় পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীন মোহাম্মদ ও সহকারী পুলিশ সুপার মো. কফিলউদ্দীন উপস্থিত ছিলেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি দেবীগঞ্জের সোনাপোতা গ্রামের সন্তগৌরীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়কে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তাদের গুলি ও বোমার বিস্ফোরণে আহত হন আরও দুজন। ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই রবীন্দ্রনাথ থানায় হত্যা মামলা করেন। অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে পুলিশ আরেকটি মামলা করে। দুটি মামলাতেই অজ্ঞাত পরিচয় তিনজনকে আসামি করা হয়। মামলার পর খলিলুর রহমান ও বাবুল হোসেন নামে দুই জেএমবি সদস্য এবং জাহাঙ্গীর হোসেন নামে এক শিবির নেতা ও নাজমুস সাকিব নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে আটক করে পুলিশ। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হত্যাকা-ের সঙ্গে নাজমুস সাকিবের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি হুমায়ুন কবির বলেন, যজ্ঞেশ্বর রায়কে হত্যার জন্য তিন হামলাকারী ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে মোটরসাইকেলে করে মঠ এলাকায় যায়। তাদের মধ্যে একজন এশিয়ান হাইওয়েতে অবস্থান নেয় এবং অন্যজন সন্তগৌরীয় মঠের সীমানায় ঢোকে। তারা মন্দিরের উত্তরে টিনশেড ঘরের বাইরে যজ্ঞেশ্বর রায়কে গলা কেটে হত্যা করে এবং পিস্তল দিয়ে একটি গুলি করে। মন্দিরের পূজারি গোপাল চন্দ্র রায় এগিয়ে এলে তাকেও গুলি করা হয়। এরপর হামলাকারীরা সড়কে ফিরে গিয়ে মোটরসাইকেলে উঠে ককটেল ফাটিয়ে ওই এলাকা ত্যাগ করে। তারা মঠের সামনে একটি হাতবোমা ও একটি চাপাতি ফেলে যায় বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। আহত গোপাল ঘটনার বিবরণ দিয়ে হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমাকে দেখামাত্র ওই দুজন কোমর থেকে পিস্তল বের করে বলতে থাকে, ‘ওই ঘরে যাবি তো তোকেও কতল করব। তোর গুরুজিকে কতল করা হয়েছে। তোরা বড় আনন্দে আছিস, রান্নাঘরে কীর্তন গাইছিলি,’ বলেই আমার বুক বরাবর গুলি ছুড়তে থাকে ওরা। হামলাকারী যে তিনজন ছিল এবং তারা যে মোটরসাইকেলে করে এসেছিল, তা অন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের কথাতেও এসেছে। পুলিশের দাবিমতে, এই হত্যার ঘটনা উদঘাটিত হয়েছে। তবে এলাকায় এখনো আতঙ্ক কাটেনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন