মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের বইয়ে ভুল আর ভুল

প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ খুরশীদ উদ্দীন : বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ইবতেদায়ী ৫ম শ্রেণীর আকাইদ ও ফিকহ বইয়ে অনেক ভুল আছে।
নি¤েœ ভুলের কিছু নমুনা তুলে ধরা হলো :
১। বইটির ৩০ পৃষ্ঠায় ‘ফরজে কিফায়া’ সম্পর্কে বলা হয়েছে ‘যেসকল বিধান পালন করা সকলের জন্য আবশ্যক নয়’ আবার শেষ লাইনে বলা হয়েছে যদি ফরজে কিফায়া কেউই পালন না করে তবে সবাই ফরজ ত্যাগকারী হিসেবে গুনাহগার হবে’। এখানে প্রশ্ন হলো যে, যদি বিধানটি পালন করা সকলের জন্য আবশ্যকই না হয়ে থাকে তবে কেউ তা পালন না করলে সবাই গুনাহগার হবে কেন? মূলত: বইটিতে ফরজে কিফায়ার সংজ্ঞা লিখতেই ভুল করা হয়েছে। প্রকৃত সংজ্ঞাটি হবে ফরজে কিফায়া এমন বিধানকে বলে, যা সমষ্টিগতভাবে সকল মুসলমানের উপর ফরজ, তবে সমাজের কিছু সংখ্যক ব্যক্তি তা পালন করলে বাকিরা দায়মুক্ত হয়ে যাবে। কেউ না করলে সবাই ফরজ অনাদায়ে দায়ী হবে।
২। বইটিতে ‘মুবাহ’ কাজ সম্পর্কে ৩৩ পৃষ্ঠায় বার্ণিত হয়েছে পরিভাষায় ‘মুবাহ’ হলো এমন বৈধ কাজ যা করলে কোন সওয়াব নেই, আবার না করলেও কোন গুনাহ নেই। যেমন ক্রয়-বিক্রয়। এখানে ‘মুবাহ’-এর সংজ্ঞা লিখতেও মারাত্মক ভুল করা হয়েছে। কারণ বইটিতে মুবাহ কাজের উদাহরণ দেয়া হয়েছে ক্রয়-বিক্রয় করা। অর্থাৎ ব্যবসা বণিজ্য করা। ব্যবসা বাণিজ্যে সওয়াব নাই কেন? রাসূলুল্লাহ (সা.) তো ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কে বলেছেন, ‘আত্তাজিরুল সাদিকুর আমিনু মাআন্নাবিয়্যিনা ওয়াস্ সিদ্দিকিনা- ওয়াশ্ শুহাদায়ে ওয়াস সালিহীন’। একজন সত্যবাদী ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী ও ছিদ্দিকগণের সাথে থাকবে এখানে উদাহরণ হতে পারতো ভ্রমণ করা।
৩। বইটার ৩৯ পৃষ্ঠায় ‘নাজাসাত’ সম্পর্কে বলা হয়েছে ‘নাজাসাত’ দু প্রকার। যথা- (১) নাজাসাতে হাকিকিয়াহ, প্রকৃত নাপাকি। (২) নাজাসাতে হুকমিয়াহ বিধানগত নাপাকি। এইরূপ ফিকাহ শাস্ত্রের পরিভাষা নয়। এ সম্পর্কে ফিকহ্-এর কিতাব দ্রষ্টব্য। এখানেও একটি প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে যে, ২ নম্বরে ‘নাজাসাতে হুকুমিয়াহ’-কে বিধানগত নাপাকি বলা হয়েছে। তবে কি ১ নম্বরে বর্ণিত ‘নাজাসাতে হাকিকিয়াহ’ বিধানগত নয়? এ অধ্যায়ের ছত্রে ছত্রে ভুলের ছড়াছড়ি।
৪। বইটির ৫০ পৃষ্ঠায় ‘জুমআ’ বানাটি কখনও ‘জুমা’ আবার কখনও ‘জুমআ’ লিখা হয়েছ্।ে বিশেষ করে পাঠ্য বইয়ে যেকোন এক ধরনের বানান কাম্য।
৫। বইটির ৫২ পৃষ্ঠায় ‘বিতর’-এর সালাত বুঝাতে গিয়ে এশার নামাজের পর তিন রাকাত ওয়াজিব নামাজকে ‘বিতর’ বলা হয়েছে এবং শেষ সময়সীমা বর্ণনা করা হয়েছে সুবেহ সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত। এশার নামাজের পরপর বিতর নামাজ পড়লে সুবহে সাদিক পর্যন্ত সময় থাকা শুদ্ধ নয়। এটি তাহাজ্জুদের সাথে পড়ার স্বতন্ত্র নিয়ম। কারণ এশার নামাজ মধ্যরাতের পূর্বে পড়তে হয়, এরপরে পড়লে মাকরূহ হবে। তবে বিত্র এর কথা পৃথক করে ফিকাহ্ এর কিতাবে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে সেভাবে বলা উচিত ছিল।
৬। বইটির ৫৪ পৃষ্ঠায় ‘জানাজা’ সম্পর্কে যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তা সঠিক নয়। কারণ বইটিতে লিখা হয়েছে যে, ‘মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পূর্বে তাকে সামনে রেখে চার তাকবীরের সাথে যে নামাজ পড়া হয় তাকে সালাতুল জানাজা বলে’। এতে মৃত ব্যক্তির প্রকৃত অবস্থা বোধগম্য হয়নি।
এভাবে বলা উচিৎ ছিল যে, ‘মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিয়ে কাফন পরিয়ে দাফনের পূর্বে তার জন্য দোয়া স্বরূপ যে নামজ পড়া হয় তাকে জনাজার নামাজ বলে’। এখানে মৃত ব্যক্তির গোসল ও কাফনের কথাটি উল্লেখ না থাকায় জানাজার বেলায় মৃত ব্যক্তির গোসল, কাফন ও দাফনের অবস্থাটি স্পষ্ট হয়নি।
৭। ‘সাওম’ সম্পর্কে ৫৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে যে, ‘রোজার নিয়্যতে সুবেহ সাদিক থেকে সূর্যান্ত পর্যন্ত পনাহার ও যাবতীয় পাপাচার থেকে বিরত থাকাকে সাওম বলে’। এই সংজ্ঞাটিও ফিকহসম্মত হয়নি। কারণ এখানে যাবতীয় পাপাচার থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু একজন স্বামী-স্ত্রীর যৌন সম্ভোগ করাতো পাপাচার নয় এবং অবৈধও নয়। তা হলে কি রোজার দিনে স্বামী-স্ত্রী যৌনাচার করতে পারবে? নিশ্চই না।
(ক) রোজা ভঙ্গের কারণের কথা উল্লেখ করে ১০ নম্বরে বলা হয়েছে ‘নিদ্রিত অবস্থায় কোন বস্তু খেয়ে ফেললে’ রোজাদার জাগ্রত অবস্থাতেই হউক অথবা নিদ্রিত অবস্থাতেই হউক কোন কিছু খেলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে এখানে নিদ্রিত অবস্থায় খওয়ার কথা উল্লেখের কারণ কি? নিদ্রিত অবস্থায় সপ্নে কিছু খাওয়ার কথা বলা হয়ে থাকলে তো এ কথার কোন অর্থ হয়নি। কেননা নিদ্রিত অবস্থায় কিছু খেলে তো রোজা ভঙ্গ হয় না।
৮। ‘ইতিকাফ’ সম্পর্কে ৫৮ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ‘শরিয়তের পরিভাষায় একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের আশায় মসজিদে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে।’ ইতিকাফের এ সংজ্ঞাটিতেও মারাত্মক ভুল হয়েছে। কারণ ইতেকাফ করতে হবে রমজান মাসের শেষ দশ দিন। রমজানের এই সময়সীমার মধ্যে ইতকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। কিন্তু বইটিতে রমজানের কথা উল্লেখই নেই।
৯। ‘হজ’ সম্পর্কে ৬১ পৃষ্ঠায় লিখা হয়েছে ‘পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে যিলহাজ মাসের নির্ধারিত দিনসমূহে নির্ধারিত পদ্ধতিতে জিয়ারত ও বিশেষ কার্যাদি সম্পাদন করাকে হজ বলে’। উল্লিখিত ‘পরিভাষায়’ শব্দটি দ্বারা কিসের পরিভাষা বুঝানো হয়েছে? বাংলা একাডেমির পরভাষা? না বিজ্ঞানের পরিভাষা? না ইসলামী শরিয়তের পরিভাষা? তা ষ্পষ্ট করে লিখা প্রয়োজন ছিল ফিকহের পরিভাষা কিংবা শরিয়তের পরিভাষা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন