ইনকিলাব ডেস্ক : সিরিয়ায় দীর্ঘ পাঁচ বছর গৃহযুদ্ধ চলার পর গতকাল শনিবার মধ্যরাত থেকে সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। গত পাঁচ বছরে এই প্রথম একটি ঘুমন্ত রাত পেল সিরিয়ানরা। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর এদিন কোনো গুলি বা বোমার শব্দ শোনা যায়নি। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো এটি মেনে চললে এটাই হবে বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে লড়াইয়ের প্রথম বিরতি। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সব পক্ষকেই যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্তাবলী মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার তৈরি এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অবশ্য সিরিয়ার সরকার ও রাশিয়াকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সারা বিশ্ব বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে। তবে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের সময়সীমার আগের দিন অর্থাৎ গত শুক্রবারেও রাশিয়ান বিমানগুলো সিরিয়ার বিদ্রোহীদের অবস্থানের ওপর জোরদার আক্রমণ চালিয়েছে। সিরিয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূত স্ট্যাফান ডি মিসটুরা বলেছেন, সকল পক্ষ যুদ্ধবিরতি মেনে চললে আগামী ৭ মার্চ থেকে শান্তি আলোচনা আবার শুরু হবে।
এএফপির অপর এক খবরে বলা হয়, সিরিয়ার আল কায়েদা সমর্থিত শক্তিশালী বিদ্রোহী গ্রুপ আল নুসরা ফ্রন্টের প্রধান মোহাম্মদ আল জোলানি প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরোধী সকল গ্রুপগুলোর প্রতি যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করে লড়াই অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। এক অডিও বার্তায় তিনি এই যুদ্ধবিরতিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং পাশ্চাত্যের ধূর্তামি হিসাবে অভিহিত করে বিদ্রোহী গ্রুপগুলো প্রতি শত্রুর বিরুদ্ধে হামলা আরো জোরদার করার আহ্বান জানান। কিন্তু তার এই আহ্বান সত্ত্বেও শনিবার মধ্যরাত থেকে সিরিয়ায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।
এদিকে, যুদ্ধবিরতি কতটা কার্যকর হবে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্লেষকেরা। তারা বলছেন, বিদ্রোহীদল, আইএস ও আল নুসরার ওপর হামলা চলতে থাকলে সিরিয়ার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়া কঠিন। তাদের একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, ওই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে আল-কায়েদা সমর্থিত আল-নুসরা ফ্রন্টের বিরুদ্ধে হামলা অব্যাহত রাখার সুযোগ রাখা হয়েছে। নুসরার যোদ্ধারা বিদ্রোহীদের দখলে থাকা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
পাঁচ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ ও রক্তপাতের পর দেশটিতে প্রথম এ ধরনের বড় চুক্তি কার্যকর হলো। বার্তা সংস্থাগুলো জানায়, গত শুক্রবার মধ্যরাতে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের শহর আলেপ্পোতে গোলাগুলি বন্ধ হয়ে যায়। দেশটির মানবাধিকার-বিষয়ক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলছে, উত্তরের লাত্তাকিয়া প্রদেশ এখন শান্ত। হোমস ও হামা প্রদেশও শান্ত রয়েছে। আলেপ্পোর দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্রোহী অধ্যুষিত আল কালাসেহ শহরের বাসিন্দা মোহাম্মদ নোহাদ বলেন, গত শুক্রবার রাতে তিনি জেগে যান। তখন যুদ্ধবিমানের শব্দে মনে হয়েছিল কাল আর বেঁচে থাকবেন না। জাতিসংঘের দূত স্তাফান দ্য মিসতুরা বলেন, যুদ্ধবিরতি বজায় থাকলে ও ঐকমত্যে পৌঁছানোর অন্যতম শর্ত ত্রাণ বাড়ানো হলে ৭ মার্চ থেকে শান্তি আলোচনা শুরু হবে।
মার্কিন দূত সামান্থা পাওয়ার বলেন, যুদ্ধবিরতি কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে সহিংসতা কমার আশা রয়েছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার রুশ-মার্কিন পরিকল্পনায় পুরোপুরি সমর্থন দিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। সিরিয়ায় পাঁচ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। সমঝোতা অনুযায়ী সিরীয় সরকার ও বিদ্রোহী পক্ষগুলোর মধ্যে এই যুদ্ধবিরতি হলেও সেখানে ইসলামিক স্টেট (আইএস) আল-কায়েদার সঙ্গে যুক্ত নুসরা ফ্রন্টকে রাখা হয়নি। গত শুক্রবার নুসরা ফ্রন্ট তার সমর্থকদের সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে জোর হামলা চালানোর আহ্বান জানিয়েছে। সিরিয়ায় বিবদমান প্রায় ১০০ বিদ্রোহী গোষ্ঠী যুদ্ধবিরতির এই চুক্তিকে সম্মান জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সিরিয়ার বিরোধী আমব্রেলা গ্রুপ এইচএনসি জানিয়েছে। এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন