বিশেষ সংবাদদাতা : হত্যা ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চার্জশীটের পরে বিচারের সম্মুখিন হওয়ায় বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক অঙ্গন বিরোধী দল শূন্য করার কর্মকা- শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের এ অভিমতের সাথে একমত পোষণ করছেন বরিশালের ২০দলীয় জোটের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ। আর সরকারি দল ও তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হামলা মামলার ভয়েও অনেক বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এখন মাসের পর মাস নিজ এলাকায় যান না বলেও মন্তব্য করছেন। ২০১৪ ও ১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনে ২০ দলীয় জোট নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেড়শতাধিক মামলায় আসামির সংখ্যা ৫ সহস্রাধিক।
অপরদিকে ২০১৪-এর শুরু থেকে রাজনৈতিক সহিংশতার মধ্যে একতরফা নির্বাচনে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি আসনের বেশিরভাগেই বিনা প্রতিদন্ধীতায় নির্বাচিত এমপি’দের অনেকই ইতোমধ্যে এলাকার সাথে জনপ্রতিনিধি সূচক আচরণ করছেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে। ভোট বিহীন নির্বাচনের এসব এমপিদের সাথে জনগণের দুরত্বও ক্রমশ বাড়ছে বলে অভিযোগ এলাকায়। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এমপি সাধারণ জনগণসহ ভোটারদের প্রতি কতটুকু দায়বদ্ধ তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
২০০৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বরিশাল মহানগরীর পশ্চিম প্রান্তে দীর্ঘদিনের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও এলাকার ত্রাস ‘ট্যারা শাহজাহান’ গণপিটুনিতে নিহত হয়। ঐ ঘটনায় দায়েরকৃত একটি মামলায় কোতয়ালী পুলিশ আসামিদের চিহ্নিত করতে না পেরে দু’দফায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয় আদালতে। শুনানী শেষে আদালত তা গ্রহণও করে।
কিন্তু ১/১১ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরে ঐ হত্যা মামলাটি পুনরোজ্জীবিত করে অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে তৎকালীন সিটি মেয়র ও জেলা বিএনপি সভাপতি মুজিবুর রহমান সারোয়ার এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতিকসহ ৫১জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করে। ঐ হত্যা মামলা তদন্তে সে সময় সারোয়ারকে তিন দফায় প্রায় ১৫দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশের চেয়ে ১/১১ সরকারের একটি সক্রিয় গোয়েন্দা সংস্থার ঐ মামলাটি নিয়ে তৎপড়তা তখন অনেকটাই প্রকাশ্যে ছিল। পরবর্তিতে ঐ মামলাটির কার্যক্রম উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতের পাশাপাশি সারোয়ারসহ অন্য আসামিদের জামিনও দেয়া হয়।
সম্প্রতি সে মামলাটির কার্যক্রম পুনরায় সচল করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বরিশালের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে ৪৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে আগামী ২৯ মার্চ থেকে সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেছে বিজ্ঞ আদালত। মামলাটির ২ আসামি ইতোমধ্যে মারা গেছেন। জামীনপ্রাপ্ত সকল আসামিই চার্জ গঠনের দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জামায়াত ইসলামীর মহানগর আমীর অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হুসাইন হোলালসহ ২২ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চার্জশীট দিয়েছে কোতয়ালী পুলিশ। এসব নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ২০১৪-এর সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময়ও আরো একাধিক মামলা রয়েছে। ২০১৪-এর ১৪ আগস্ট রাতে নগরীর তোরাব আলী খান সড়কের একটি বাসায় বৈঠক করার সময় মহানগর পুলিশ ঐ ২২নেতা-কর্মীকে আটক করে। সেসময় তাদের কাছ থেকে ২২টি মোবাইল ফোন সেট, নগদ ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং কয়েকটি রশিদ বইও উদ্ধার করে পুলিশ। ঐ রাতেই পুলিশ বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করে। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের অনুমোদন নিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে অভিযুক্তেদের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করল পুলিশ।
উল্লখিত দুটি মামলায়ই একাধিক সাক্ষী রয়েছে। যাদের জবানবন্দী গ্রহণ করে এসব চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। খুব সহসাই এসব মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশনের আইনজীবীসহ পুলিশের দায়িত্বশীল মহল। আর এসব মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করে সাজা নিশ্চিত করা গেলে বরিশাল বিভাগীয় সদর বিরোধী দলীয় নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়বে বলে আশাবাদী শাষক জোটের অনেক নেতা-কর্মী। ফলে গত কয়েক বছরের বিরোধী দল প্রকাশ্য তৎপড়তা শূন্য দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক ময়দান আরো নিষ্কন্টক হবে বলেও আশাবাদী মহাজোটের অনেক নেতৃবৃন্দ।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মতে, যেসব মামলায় বিরোধী দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত তা সবার কাছেই অনেক আগে থেকে পরিষ্কার। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতিতে জামাত ইসলামীর তেমন কোন প্রভাব না থাকলেও মহাজোট কি কারণে তাদের দমনে তৎপর, সে বিষয়টিও পরিস্কার নয় মহলটির কাছে। উপরন্তু ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনে বর্তমান মহাজোটের মূল শরিক দলের স্থানীয় নেতৃবন্দের সাথে জামাত নেতৃবৃন্দের কিছুটা ভাল সম্পর্কও গড়ে ওঠে। সেসময় থেকে এখানে জামাতের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে দলটির অনেক নেতার সু সম্পর্ক অব্যাহত থাকলেও এখন জাতীয় রাজনীতির কারণেই পরিস্থিতি ভিন্নতর।
তবে অতি সম্প্রতি ২০দলীয় জোটের স্থানীয় শীর্ষ নেতবৃন্দের বিরুদ্ধে এ দুটি মামলার বিচার কাজ শুরুকে দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক ময়দান থেকে বিরোধী দলকে বিতাড়নের আইনগত পদক্ষেপ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতৃবৃন্দ নাম প্রকাশ না করে মামলাগুলোর বিচার কাজের সাথে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই বলে দাবি করেছেন।
আর ২০দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ বরিশাল মহানগরীর শীর্ষ সন্ত্রাসী ট্যারা শাহজাহান গণপিটুনীতে নিহত হবার বিষয়টি সর্বজনবিদিত বলে দাবি করে এর সাথে সারোয়ারসহ দলীয় কোন নেতা-কর্মী সম্পৃক্ত নয় বলে জানিয়েছেন। তবে জামায়াত নেতৃবন্দের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা সম্পর্কে দলটির কারো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। জামাতের দায়িত্বশীল বেশীরভাগ নেতাই আত্মগোপনে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন