বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ইউপি নির্বাচন : মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে মিলবে বিদ্যুৎ সংযোগ

প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:১৩ এএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

আফজাল বারী : আন্দোলন দমাতে দুই বছর আগে ৩১ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ের বিদ্যুৎ, সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছিলো সরকার। এবার চেয়ারম্যান প্রার্থীর বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে ইউপি নির্বাচনের প্রতিপক্ষ। মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য এই প্রায়শ্চিত্ব ভোগ করতে হচ্ছে। তবে পুনঃসংযোগ দেয়া হবে যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা হয়। এ শর্তের মুখোমুখি মোড়লগঞ্জ উপজেলার তেলিগাতী ইউপি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আলমগীর হোসেন। গত তিনদিন ধরে তার বাসায় আলোজ্বলছে না। এ চিত্র বাগেরহাট জেলার। একই চিত্র বিরাজ করছে ভোলা, ফেনী, লক্ষিপুর, নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে অভিনব কৌশলের দেখা মিলছে এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। প্রতিদ্বন্দ্বির বাসার আঙ্গিনায় ফাঁকাগুলি, ককটেল বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগসহ আত্মগোপনে থাকা চেয়ারম্যান প্রার্থীর স্বজনদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন ইউনিয়নে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়, গুলশান কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকা সূত্র-এসব তথ্য এসেছে ইনকিলাবের হাতে।
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে ব্যস্ততার মধ্যে আজব ঘটনাবলী হাজির হচ্ছে বিএনপি কার্যালয়ে। রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছে। কমিটির সদস্য এমরান সালেহ প্রিন্স ও আব্দুল আওয়াল জানান, সমস্যার সাগরে তাদের প্রার্থীরা। অভিযোগ দেয়ার জন্য তাদের প্রার্থীরা কমিশনে যাওয়া তো দূরের কথা আলোতে বের হতে পারছেন না। যাদের দায়িত্ব অভিযোগ শুনে ব্যবস্থা গ্রহণ করার তারাই প্রতিপক্ষে রূপ নিয়েছেন। শাসক দলের তা-বের জ্বলন্ত চুলায় শুকনো খড়ি ঠেলে দিচ্ছেন তারা।
অভিযোগে জানা যায়, আলমগীর হোসেন প্রথমধাপে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী। গত ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি স্থানীয় রির্টানিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি তার বাসায় হামলা চালায় প্রতিপক্ষের লোকজন। পরদিন আলমগীর হোসেনের বাবাকে মারধর করে। ২৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যায় ফাকাগুলি বর্ষণ করে ত্রাসের সৃষ্টি করা হয়। পরে ওই প্রার্থীর বাসার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। গত তিনদিন ধরে আলো জ্বলছে না ওই বাড়িতে। তবে প্রার্থী এখন এলাকা ছাড়া।
জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম অভিযোগ করেছেন, বাগেরহাট জেলার ৭৪টি ইউনিয়নের চিত্র প্রায় একই। এই জেলায় ২ইউপিতে শরিক দল জামায়াতকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তারা কোনটিতেই মনোনপত্র পারেনি। ৪২টিতে বিএনপির মনোনয়নপত্র দাখিল করা গেলেও অভিনব কায়দায় তা বাতিল করা হচ্ছে। প্রাথীর বাসার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ফাঁকাগুলি বর্ষণ করে আতঙ্ক ছড়ানোসহ পিতা-মাতা, চাচা, ভাইপো এবং নিজ সজনদের মারপিট করা হয়েছে। রির্টানিং অফিসারের অফিসেই বিএনপির প্রার্থীর মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নিয়েছে। জেলে ও আত্মগোপনে থাকা প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে এসে এক আইনজীবী সহকারী মারপিটের শিকার হয়ে এখন হাসপাতালে। অস্ত্রেরমুখে প্রার্থী ও তার প্রস্তাবককে অপহরণ করে নিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করানোমতো ঘটনা ঘটছে বাগেরহাটে।
তিনি বলেন, শাসক দলের এমপি, এমপির ব্যক্তিগত সহকারী, স্থানীয় নেতাসহ তাদের লোকজন প্রতিনিয়ত তা-ব করছে। তারা আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ও প্রশাসনের কাছে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন-এই জেলার ৭৪ ইউনিয়নেই তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে।
এম এ সালাম জানান, খোন্তাকাটা ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী মতিয়ার রহমানের ভাতিজাকে মারধর করেছে প্রতিপক্ষ। রায়েন্দা ইউনিয়নের প্রার্থী ফরিদ উদ্দিনের চাচাকে পিটিয়েছে প্রতিপক্ষরা। দৈবজ্ঞহাটিতে বিএনপির প্রার্থী খান হায়দার আলীকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে নিজ বাড়িতেই বাকী সময় কাটাতে হবে বলে হুমকি দিয়ে এসেছে শাসক দলীয় লোকজন। কয়েক প্রার্থীকে জিম্মি করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের কাগজে সই করে নিয়েছে শাসক দলীয়রা। এম এ সালামের ভাষ্য-শেষ পর্যন্ত ৭৪টি ইউনিয়নেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হবে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা।
দক্ষিণাঞ্চলের আরেক জেলা ভোলা। সেখানে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে আগে থেকেই অভিনব কৌশল নিয়েছে প্রতিপক্ষরা। বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বীর বিক্রম ভোলার বাসিন্দা। গতকাল তিনি বলেন, কী নির্বাচন আমরা পাচ্ছি? ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমার নির্বাচনী এলাকায় তজিমুদ্দিন উপজেলার শম্ভুপুর ইউনিয়ন একটি ঘটনা ঘটেছে শুনলে মানুষ অবাক হয়ে যাবেন। সেখানে বর্তমানে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী যিনি তিনবার চেয়ারম্যান হয়েছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান এবং বিএনপির প্রার্থী দুইজনকে দুরের আরেকটি উপজেলায় গোপনে ভোটার করা হয়েছে। যার ফলে তাদের দুইজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেছে। তারা এখন দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে। নির্বাচন কমিশনের কী বিশৃঙ্খলা। টাকার বিনিময়ে কী না করা যায়, এর একটি উদাহরণ শম্ভুপুর ইউনিয়ন। সুতরাং আরেক আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। এ হচ্ছে নির্বাচনের নাটক।
প্রথম ধাপের ৭৩৮ ইউপিতে ভোট গ্রহণ করা হবে ২২ মার্চে। ইতোমধ্যে ১১৪ টিতে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এখন দ্বিতীয় ধাপের প্রার্থী বাছাই পর্ব চলছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
ফজলুল হক ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১:১৭ এএম says : 1
কিছু বলার নাই............................... তারা ক্ষমতায়................................
Total Reply(0)
Shahin ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:৫৮ পিএম says : 0
deshe ke suru hoylo
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন