বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

হিজাব : কতিপয় অজুহাত ও তার জবাব

| প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাওলানা এসএম আনওয়ারুল করীম

\ তিন \
সঠিক পথ ও সত্যের ওপর অবিচল থাকার জন্য অন্যতম প্রধান যে দুটি উপায় আছে, আমরা যদি সে দুটি উপায় অবলম্বন করি, তাহলেই পাবো ঈমানের সুমিষ্ট স্বাদ। এরপর আমাদের মনে আর কখনোই একে ছাড়ার ইচ্ছা জাগবে না; বরং একে মেনে চলার ইচ্ছা তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।
সপ্তম অজুহাত : পর্দা পালনে অনাগ্রহী অনেকেই অজুহাত তুলে ধরে যে- ‘হিজাব করলে কেউ আমাকে বিয়ে করবে না। তাই বিয়ে করার আগ পর্যন্ত অন্তত বাধ্য হয়ে হিজাব থেকে দূরে থাকছি।’
জবাব : বিয়ের আগে পর্দা পালনে অনীহা প্রকাশকারিণী তরুণীর অজুহাতে ইসলামী চিন্তাবিদগণ বলেছেন যে, কোনো স্বামী যদি আপনাকে পর্দাহীন রাখতে চায়, জনসম্মুখে আপনার সৌন্দর্য প্রদর্শনে তার কোনো আপত্তি না থাকে, তাহলে সে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করলো। মূলত এ ধরনের পুরুষ আপনার স্বামী হওয়ারই যোগ্য নয়। আল্লাহ আপনাকে যেটি করতে বলেছেন, সেই বিধান রক্ষায় যার কোনো মাথাব্যথা নেই, সে লোক আপনার জান্নাতে প্রবেশের বাধা বৈ আর কিছু নয়; বরং এ ধরনের স্বামীরা আপনার জাহান্নামে যাওয়ার পথকেই আরো সুগম করবে। আল্লাহর অবাধ্যতায় যে ঘরের বুনিয়াদ গড়ে ওঠে, যে পরিবারে অহরহ এমন কাজ করা হয় যাতে আল্লাহ ক্রোধান্বিত হন, এমন ঘরে পার্থিব জীবনে সবসময় দুঃখকষ্ট ও দুর্দশা লেগেই থাকবে। আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে সীমাহীন দুর্ভোগ। কারণ আল্লাহ বলেছেন, ‘যে আমার স্মরণ থেকে বিমুখ হবে তথা এই কুরআনে বিশ্বাস করবে না কিংবা এই কুরআনের বিধিনিষেধ মেনে চলবে না তার জন্য রয়েছে কষ্টের জীবন; আর পুনরুত্থানের দিন আমি তাকে অন্ধ অবস্থায় উঠাবো।’ [সূরা তাহা, ২০ : ১২৪]
একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, বিয়ে আল্লাহর এক বিশেষ অনুগ্রহ। কার সাথে কার বিয়ে হবে এটা আল্লাহর ইচ্ছার অধীন। তাই বিয়ের আগে পর্দা পালনের অজুহাত দায়েরকারিণীর উদ্দেশ্যে ইসলামী চিন্তাবিদগণ আরো বলেছেন যে, আপনি কতজন নারীকে দেখেছেন যারা হিজাব করছেন অথচ তাদের বিয়ে হয়নি? অন্যদিকে কতজন নারীকে দেখেছেন যারা হিজাব করে না এবং অবিবাহিত পড়ে আছে?
যদি মনে করা হয় যে, হিজাব না করার পেছনে মূল কারণ বিয়ের মতো পবিত্র একটা বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া, তাহলে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, অপবিত্র বা খারাপ কাজের মাধ্যমে ইসলামে কখনো ভালো কিছু অর্জন করা যায় না। উদ্দেশ্য যদি আসলেই মহৎ কিছু হয়, তাহলে সেটা অবশ্যই বৈধ ও পবিত্র উপায়ে অর্জন করাই সমীচীন; বাতিল পন্থায় নয়।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, যে বিয়ের ভিত্তি গড়ে ওঠে পাপ ও মন্দ কাজের ওপর, তাতে আল্লাহর কোনো বরকত থাকে না। কাজেই এই খোঁড়া অজুহাতে পরিপূর্ণ পর্দা থেকে বিরত থাকা মোটেও বুদ্ধিমতি নারীর কাজ হতে পারে না।
অষ্টম অজুহাত : যেসব তরুণী পর্দা পালন করতে অনিচ্ছুক তাদের একটি মনগড়া অজুহাত হলো- ‘আমি হিজাব করি না, সুন্দর রেশমি চুল আর আকর্ষণীয় যে সৌন্দর্য দিয়ে আল্লাহ আমাকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছেন আমি সেটি আবৃত না করে প্রকাশ করি।’
জবাব : যাদের মধ্যে আল্লাহ তাআলার প্রেম ও ভয় রয়েছে, তারা কখনো তাঁর বিধান পালনে অনীহা কিংবা অজুহাত দাঁড় করায় না। যেসব তরুণী নিজের রূপকে খোলামেলা রাখার ইচ্ছাটাকে ‘আল্লাহর অনুগ্রহকে প্রকাশ্যে বলো’ অজুহাত দাঁড় করিয়ে দেয় তারা মূলত আল্লাহর এই বাণীর সঙ্গে তামাশায় মত্ত হয়ে পড়ে। কারণ দেখা যাচ্ছে এ বোনটি সেসব ক্ষেত্রে আল্লাহর কিতাবের অনুসরণ করছেন, যেসব ক্ষেত্রে এই কিতাবের বিধিবিধান তার ব্যক্তিগত কামনা ও বুঝের সাথে খাপ খায়। কিন্তু যখন কিতাবের বিধানগুলো তার মনের সাথে মেলে না, তখন তিনি সেগুলো অনুসরণ করেন না। কারণ, যদি তা-ই না হতো, তাহলে তিনি এই আয়াতটি কেন অনুসরণ করছেন না, যেখানে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন- ‘সাধারণত যেটুকু প্রকাশ পায়, তাছাড়া তাদের অন্যান্য সৌন্দর্য যেন প্রকাশ না করে।’ [সূরা আন নূর, ২৪ : ৩১]
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে- ‘হে রাসূল! আপনি স্বীয় স্ত্রী-কন্যা এবং অন্যান্য মুমিন নারীদের স্ত্রী-কন্যাদের বলুন! তারা যেন তাদের শরীরের উপর চাদর টেনে দেয়।’ [সূরা আল আহযাব, ৩৩ : ৫৯]
মূলত যারা এই অজুহাত দেখান, তারা আল্লাহ যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছেন, সেটিই করার বাহানা খোঁজেন। এভাবে তিনি প্রকারান্তরে আল্লাহর দেয়া বিধিবিধান পাল্টে নিজেই নিজের জন্য আইন প্রণয়ন করছেন। মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের ওপর সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ বা নেয়ামত হলো ঈমান ও হেদায়াত। আর এতদুভয়ের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে হিজাব। এতো বড় একটি নেয়ামতের কল্যাণ ও আশীর্বাদ যার মধ্যে ফুটে ওঠে না, সেটি যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য দুর্ভাগ্যজনক তা কি কখনো ভেবে দেখেছি!
নবম অজুহাত : যারা পর্দাবিধান পালন করেন না তাদের আরেকটি বাহানা বড় তাজ্জব করে দেয়। সেটি হলো- ‘আমি জানি যে, পরিপূর্ণ পর্দা বা হিজাব করা নারীদের জন্য ফরয। তবে আল্লাহ যখন আমাকে হেদায়াত করবেন তখনই আমি হিজাব করবো।’
জবাব : গ্রামাঞ্চলে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে যে, কেউ বাঁশ দিতে না চাইলে বলে দেয় যে, রবিবারে আসবেন। মূলত তারাই রবিবারে বাঁশ কাটা নিষেধ বলে কুসংস্কারে বিশ্বাসী। যে বোন আল্লাহ হেদায়াত দিলে হিজাব করবেন বাহানা দাঁড় করান তার কাছে আমাদের প্রশ্ন হলো, আল্লাহর হেদায়াত পাওয়ার জন্য আপনি কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন? বা এজন্য কী পরিকল্পনা করেছেন?
মনে রাখবেন যে, প্রত্যেকটা কাজ হওয়ার পেছনে আল্লাহ তাঁর প্রজ্ঞাগুণে কিছু কারণ বা মাধ্যম ঠিক করে রেখেছেন। এ কারণেই একজন অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ হওয়ার জন্য ওষুধ খেতে হয়। একজন পর্যটককে ঘুরে বেড়ানোর জন্য গাড়িতে চড়তে হয়। এ ধরনের আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে। হেদায়াত বা সঠিক পথের দিকনির্দেশনা পাওয়ার জন্য নিজের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকতে হয়। ইসলামী জ্ঞানার্জনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। এমনকি কায়মনোবাক্যে আল্লাহ তাআলার দরবারে দোয়া করতে হয়। তাইতো প্রতি নামাজের মধ্যে সূরা আল ফাতিহার মাধ্যমে আমরা দোয়া করে থাকি যে, ‘আমাদের হেদায়াত দান করুন।’ [সূরা আল-ফাতিহা, ১ : ৬]
যেসব নারী হেদায়াতের বাহানায় হিজাববিধান পালনে এগিয়ে আসছে না, তাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য অন্যান্য ধার্মিক মুসলিম নারীগণ সুপরিকল্পিতভাবে প্রচেষ্টা চালাতে পারেন। যতোক্ষণ না তিনি দ্বীনের ওপর অটল হচ্ছেন, ততোক্ষণ পর্যন্ত অন্যরা তাকে বারবার আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। তাহলে দৃঢ়বিশ্বাসী এসব মুসলিমাদের সান্নিধ্যে আমাদের এই বোনটির তাকওয়া বা আল্লাহর প্রতি সচেতনতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে। আর এভাবেই তিনি ধীরে ধীরে আল্লাহর বিধিবিধানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করবেন। অর্জন করবেন আল্লাহর সন্তুষ্টি। গড়তে পারবেন আলোকিত জীবন।
দশম অজুহাত : যারা হিজাববিধান পালন করেন না, তাদের আরেকটি বাহানা হলো- ‘আমার বয়স অনেক কম। এখনো হিজাব করার সময় হয়নি।’ কিংবা তারা অজুহাত দাঁড় করায় যে- ‘বয়স হলে হজ করার পর পর্দা করবো।’
জবাব : পৃথিবীতে যত সত্য আছে, তন্মধ্যে মানুষের মৃত্যু অনিবার্য সত্য। এর থেকে পালানোর কারো সাধ্য নেই। কখন কার ডাক পড়ে যায় তারও কোনো ঠিকঠিকানা নেই। মৃত্যুদূত প্রত্যেকের আশপাশেই ঘুরছে। নির্দেশ পাওয়ামাত্রই সে আপনার প্রাণ হরণ করে নেবে। এ প্রসঙ্গে কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে- ‘যখন তাদের মৃত্যুর সময় আসবে, তখন তারা এক মুহূর্তও এদিক সেদিক করতে পারবে না।’ [সূরা আল আরাফ, ৭ : ৩৪]

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন