মাওলানা মুহাম্মদ ওয়াছেক বিলাহ
\ শেষ কিস্তি \
এক ব্যক্তির ছেলেমেয়ে পাঁচজন। পাঁচজনের একজন রীতিমত বাড়িঘরে থাকত না। ঐ ছেলে বাড়িঘরে না থাকা অবস্থায় পিতার সম্পত্তি তাকে বাদ দিয়ে চারজনের পক্ষে অসিয়তনামা লিখে নিল। যে ছেলে বাড়িঘরে থাকে না সে ঘরে এসে জানতে পারে পিতা তাকে কোন সম্পত্তি দিয়ে যায়নি।
সব সম্পত্তি অন্যান্য ছেলেমেয়ের পক্ষে অসিয়তনামা লিখে গেছেন এবং পিতা মারা গেছেন। বঞ্চিত ছেলে আশপাশের লোকজনের কাছে গিয়ে বলে এখন আমি থাকব কোথায় আপনারা আমার ভাইদের থেকে আমার প্রাপ্য অংশ উদ্ধার করে আমার থাকার ব্যবস্থা করুন। কেউ সাড়া দিন না। একজন উঠে বলল তোমার ভায়েরা উগ্র বদ মেজাজি তারা আমাদের কথা শুনবে না। তুমি সাহস করে একটি কাজ করতে পারলে তোমার পাওনা সম্পত্তি উদ্ধার করা সহজ হবে। তা কি? লোকটি বলল তুমি বাগানে যাও এবং একটি নারিকেলের গোদা (নারিকেল গাছের শুকনো পাতার গোড়ার অংশ) সংগ্রহ কর। তা দিয়ে তোমার পিতার কবরের উপর মারতে থাক। গোদার আওয়াজ শুনে লোকজন জড়ো হয়ে গেল। তাকে এমন করছ কেন তা জিজ্ঞাস করলে সে উত্তর দেয় আমি আমার পিতার ওয়ারিস আমার হক আমাকে দিয়ে যায়নি। এখন আমার হক উসুল করতেছি।
তার ভাই-বোনেরা দেখল অবস্থা বেগতিক। সবাই একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিল তার অংশ তাকে দিয়ে দেয়া হোক। না দিলে মানইজ্জত সবই যাবে। যে সিদ্ধান্ত সে কাজ। বঞ্চিত ভাই তার অংশ পেল।
এক ব্যক্তির ছেলেরা পিতার মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে একত্রিত হয়ে পরামর্শ করল বোনদেরকে বঞ্চিত করে তাদের নামে অসিয়তনামা লিখে বাপের স্বাক্ষর নেবে। সব ছেলে একমত, একজন ছাড়া সে বলে, আমি হাদিস শরিফে পড়েছি যে ব্যক্তি তার ওয়ারিসকে মীরাছ দেয়া থেকে মাহরুম করে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে জান্নাতের মীরাছ থেকে মাহরুম রাখবে। পিতাকে জান্নাতের মীরাছ থেকে মাহরুম করা হবে এমন পাপের অংশীদার আমি হতে পারব না। আজকাল অহরহ বোনদেরকে মাহরুম করা হচ্ছে।
কোরআন পাক কন্যাদেরকে অংশ দেয়ার প্রতি এতটুকু গুরুত্ব আরোপ করেছে যে, কন্যাদের অংশকে আসল ভিত্তি সাব্যস্ত করে এর অনুপাতে পুত্রদের অংশ ব্যক্ত করেছে এবং দুই কন্যার অংশ এক পুত্রের সমপরিমাণ বলার পরিবর্তে এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমপরিমাণ বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। অনেকেই বোনদেরকে অংশ দেয় না এবং বোনেরা একথা চিন্তা করে অনিচ্ছাকৃত স্বত্তে¡ও চক্ষুলজ্জা। খাতিরে ক্ষমা করে দেয় যে, যে পাওয়া যখন যাবেই না, তখন ভাইদের সাথে মন কষাকষির দরকার কি। এরূপ ক্ষমা শরিয়তের আইনে ক্ষমাই নয়। ভাইদের জিম্মায় তাদের হক পাওনা থেকে যায়। যারা এভাবে ওয়ারিসী স্বত্ব আত্মসাৎ করে তারা কঠোর গোনাহগার।
(তাঃ মাঃ কোরআন)
অনেকে বৃদ্ধ পিতার জীবিত অবস্থায় বোনদেরকে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে মাহরুম করার জন্য ফন্দি-ফিকির করে। যেমন পিতাকে শিখায় আমার সম্পত্তি যা আছে তা ছেলেদের টাকায় খরিদ করা হয়েছে। এখন অসিয়তের মাধ্যমে ছেলেদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে যাচাই-বাছাই করলে দেখা যায় সম্পত্তি যখন খরিদ করা হয় তখন ছেলেরা উপার্জন তো দূরের কথা লেখাপড়াও শুরু করেনি বা কেউ লেখাপড়া শুরু করেছে মাত্র। অথচ পিতার অবৈধ অসিয়তকৃত সম্পত্তি পেয়ে আনন্দিত। তাতে নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতলা ভবন। অপরদিকে বোনদের কেউ থাকে নির্র্মাণাধীন ভবন সংলগ্ন মাঠের পাশে ভাড়া বাসায়। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বোনেরা বলে যেহেতু আমরা মেয়ে সেহেতু পিতার সম্পত্তিতে ভবন নির্মাণ তো দূরে থাকুক পা রাখার অধিকারও আমাদের নেই।
যারা ইহকালের সাময়িক সুখের জন্য লোভের বশিভ‚ত হয়ে ছলে বলে কৌশলে, ফন্দি-ফিকির করে অবৈধ অসিয়ত বা হেবার মাধ্যমে বোনদের পৈতৃক সম্পত্তি থেকে মাহরুম করে তাদের বোঝা উচিত ইহকাল ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু পরকাল চিরস্থায়ী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন