সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

আশকোনায় ‘আটক’ যুবকের হাসপাতালে মৃত্যু

| প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০১৭, ১:১৭ এএম

খিলগাঁওয়ে র‌্যাবের চেকপোস্টে মোটরসাইকেল আরোহী যুবক মারা গেছে গুলিতে

স্টাফ রিপোর্টার : আশকোনায় র‌্যাবের ব্যারাকে গত শুক্রবার এক যুবক আত্মঘাতী হওয়ার পর আরেক যুবককে গ্রেফতার করেছিল র‌্যাব, যার মৃত্যু হয়েছে  হাসপাতালে। শুক্রবার হামলার পর কাউকে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়নি। গতকাল শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে লাশ আসার পর বিষয়টি প্রকাশ পায়। অপরদিকে গতকাল খিলগাঁওয়ে র‌্যাবের চেকপোষ্টে মোটরসাইকেল আরোহী যুবক মারা গেছে গুলিতে।
র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বলেন, শুক্রবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে আশকোনা এলাকা থেকেই ওই যুবককে সন্দেহভাজন হিসাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গ্রেফতারের পরপরই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। র‌্যাব ওই ব্যক্তিকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় কিছুক্ষণ পরই সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়। এরপর লাশ ওই হাসপাতালেই ছিল। প্রায় ২২ ঘণ্টা পর শনিবার বিকালে তার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। ঢাকা মেডিকেলে সন্ধ্যার আগেই লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। লাশটি রয়েছে মর্গের মর্চুয়ারিতে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংরক্ষণ করা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির নাম আবু হানিফ মৃধা (৩২) এবং তার বাড়ি বরগুনার আমড়াগাছিয়া বলে প্রাথমিকভাবে জেনেছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা। র‌্যাব মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ বলেন, আবু হানিফের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। তার পরিচয় পাওয়ার চেষ্টা চলছে।
গতকাল খিলগাঁওয়ে র‌্যাবের চেকপোস্টে মোটরসাইকেল আরোহী যুবক মারা গেছে গুলিতে। ময়নাতদন্ত শেষে সোহেল মাহমুদ বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়েই ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে চারটি গুলি বিদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি বুকে ও একটি পায়ে বিদ্ধ হয়েছিল। সবকটি গুলি তার শরীর থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। তিনি আরো বলেন, ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নিহতের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই যুবক হামলার আগে শক্তিবর্ধক কিছু খেয়েছিল কি না তা জানার জন্য ভিসেরা পরীক্ষা করা হবে। এজন্যও আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, শনিবার ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে এক যুবক মোটরসাইকেলে করে র‌্যাব-৩ এর খিলগাঁও শেখের জায়গা এলাকার চেকপোস্ট পার হচ্ছিলেন। র‌্যাব সদস্যরা তাকে থামার সংকেত দিলে তিনি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় র‌্যাব সদস্যরা তাকে আটক করতে এগিয়ে গেলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন ওই যুবক। এতে দুই র‌্যাব সদস্য আহত হন। র‌্যাব পাল্টা গুলি ছুড়লে ওই যুবক নিহত হন। পরে ওই যুবকের কাছে থাকা কয়েকটি বিস্ফোরক উদ্ধার করে। যা র‌্যাব নিস্ক্রিয় করে। নিহত যুবকের পরিচয় এখনো জানতে পারেনি র‌্যাব। ওই যুবক কোনো জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা হচ্ছে।
অপরদিকে শুক্রবার আশকোনায় র‌্যাবের নির্মাণাধীন সদর দফতরে হামলাকারী যুবক মারা গেছে আত্মঘাতী ভেস্টে থাকা বোমার বিস্ফোরণে। আশকোনায় পৃথক ঘটনায় নিহত দুই যুবকের লাশের ময়না তদন্তশেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ একথা বলেন।
শুক্রবার দুপুরে র‌্যাবের নির্মাণাধীন সদর দফতরে নিহত যুবকের লাশ গতকাল শনিবার  ময়না তদন্ত শেষে ঢামেকের ফরেনসিক মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, এতটা ছিন্নভিন্ন দেহ এর আগে আর দেখিনি। আত্মঘাতী ভেস্টে থাকা বোমার বিস্ফোরণেই যুবকটির মৃত্যু হয়েছে। বিস্ফোরণে নিহত ব্যক্তির বুক ও পেট ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। তার পেটে বেল্ট বাধা ছিল। হাতের কনুই পর্যন্ত অংশ উড়ে গেছে। তার পেটে ইলেকট্রিক ও্যায়ার পাওয়া গেছে। কাপড়চোপড় পেটের ভেতর ঢুকে গেছে। ডিএনএ টেস্টের জন্য ওই আত্মঘাতী হামলাকারীর দাঁত, চুল ও ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার লিভার ও পাকস্থলীর কিছু অংশ পাওয়া গেছে। একটা কিডনি আছে। হামলার আগে সে শক্তিবর্ধক কিছু খেয়েছিলো কিনা জানতে রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। সোহেল মাহমুদ জানান, তার নেতৃত্বে ফরেনসিক মেডিসিনের প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস ও প্রভাষক ডা. কবীর সোহেলকে নিয়ে একটি ময়না তদন্ত বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডের মাধ্যমে ময়না তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
এদিকে নিহত ওই যুবককে নিজের ছেলে বলে দাবি করেছেন আমিরন নামের এক নারি। গতকাল শনিবার আমিরন র‌্যাবের ব্যারাকে যান। সেখানে গিয়ে তিনি র‌্যাবের কাছে দাবি করেন, তাদের বাড়ি পিরোজপুরে। নিহত যুবক তার ছেলে।  নাম রফিক। ঢাকায় রফিক চায়ের দোকানে কাজ করতো। পাঁচ দিন আগে বাড়ি থেকে বের হয় রফিক। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ মেলেনি। র‌্যাব জানায়, ওই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ওই ঘটনাায় র‌্যাব বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করেছে। বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আজমের ভাষ্য, মামলায় কোনো আসামির নাম উেেল্লখ বরা হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন