শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে রূপায়ণ উত্তরা সিটিতে প্লট বিক্রি

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রীর উদ্বোধন নিয়ে উত্তরাবাসীর নানা প্রশ্ন

প্রকাশের সময় : ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প সংলগ্ন রূপায়ণ সিটিতে চলছে প্লট বিক্রির বাণিজ্য। অন্যের জমি জবর দখল করে বহুল আলোচিত রূপায়ণ সিটির মালিক অবৈধ বাণিজ্যে মেতে ওঠেছে। রাজউকের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এ প্রকল্পের চেয়ারম্যান আদালতের স্থগিতাদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রূপায়ণের উত্তরা সিটিতে বসেছে মেলা। এ মেলা বসিয়ে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্লট বিক্রি করছেন রূপায়ণ কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, আদালতের স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও রূপায়ণের উত্তরা আবাসিক প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন। যদিও উক্ত প্রকল্পটির উপর হাইকোর্টের ৬ মাসের স্থগিতাদেশ রয়েছে। স্থগিতাদেশ অমান্য করে বহুল আলোচিত এ প্রকল্প উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর উপস্থিত হওয়াকে কেন্দ্র করে চলছে নানা সমালোচনা। স্থানীয় বাসিন্দা ও জমির মালিকেরা বলছেন, মন্ত্রী এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে অবৈধ দখলদার ভূমিদস্যুকে তার অবৈধ কার্যক্রমে আরো সহযোগিতা করলেন। এতে করে আইনের প্রতি তাদের কতটুকু সম্মান বা শ্রদ্ধা আছে এ নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, তুরাগের জনৈক মোস্তফা জামান তার নিজ মালিকানাধীন সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে দীর্ঘ দিন ধরে চাষাবাদ করে আসছেন। গত কয়েক বছর আগে এ জমি জবর দখল করে গড়ে তোলা হয় রূপায়ণ উত্তরা সিটি। মালিক প্রতিবাদ করলে বিভিন্নভাবে প্রভাব কাটিয়ে জমি ছেড়ে দেয়ার জন্য মোস্তফা জামানকে চাপ দেয়া হয়। এক পর্যায় জমির উপযুক্ত মূল্য পরিশোধ করে কেনে নেয়ার প্রস্তাব দেয় রূপায়ণ উত্তরা সিটি কর্র্তৃপক্ষ। তাতে রাজি না হলে কৌশলে ও জবর দখল করে বাউন্ডারী ওয়াল তৈরী করে দখলে নেয় রূপায়ণ। পরবর্তীতে ওই জমিতে রাজউক বিল্ডিং করার জন্য প্ল্যান পাস করে দেয় রূপায়ণ কর্তৃপক্ষের অনুকূলে। এ ঘটনায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি মোস্তফা জামান হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেন। পিটিশন নং-৭৫০৬/২০১৫। হাইকোর্টের তিন নং বেঞ্চের বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও আবু তাহের মো: সাইফুর রহমান পিটিশন কারীর অনুকূলে তুরাগের নলভোগ মৌজার সিএস ও এস দাগের ৬১৩,৬১৪,৬১৫,৬১৬,৬১৭,৬১৮ এবং সিএস ও এসএ প্লট নং ১৬৯ এ যে কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণের উপর ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে রূপায়ণ কর্তৃপক্ষ একটি আপিল আবেদন করেন। যা বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিক ও রাজিক আল জলিলের কোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার আপিল আবেদনটি শুনানীর জন্য ৩১৬ নং কার্য তালিকায় অপেক্ষমাণ ছিল। জমির মালিক মোস্তফা জামান অভিযোগ করেন, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে রূপায়ণ কর্তৃপক্ষ উল্লেখিত জায়গার উপর বিল্ডিং নির্মাণ অব্যাহত রাখে এবং গত শুক্রবার ওই জমিতে প্লট বিক্রি শুরু করেন। শুধু তাই নয় সেখানে প্লট নির্মাণ ও নির্মিত বিল্ডিং বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করা হয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেনকে। এ অবস্থায় তিনি কোর্ট কনডেমের একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন গতকাল। এ বিষয়ে কথা বলতে রূপায়ণ সিটির চেয়ারম্যান এল আর মুকুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করেছেন। আপিল এখনো শুনানির অপেক্ষায় থাকলেও আপনি কিভাবে তার বিক্রির জন্য মেলার আয়োজন করলেন, উত্তরে তিনি, পরে কথা বলবো বলে ফোন রেখে দেন।
জানা যায়,উত্তরা ও তুরাগ এলাকার বাসিন্দা মালেক, রমজান ও আবদুল কাদিরসহ আরো কয়েকজনের শত কোটি টাকা মূল্যে জমি জবর দখল করে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে রূপায়ণ উত্তরা সিটি।
জমির মালিক মোস্তফা জামান জানান, রাজউকের সহযোগিতায় রূপায়ণের মালিক আমার ৬০ কাঠা জমি প্রথমে দখল করে। পরে এ নিয়ে আদালতে রিট করি। আদালত ওই সিটিতে সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে ৬ মাসের মাসের স্থগিতাদেশ প্রদান করে। এ আদেশ বহাল থাকা সত্ত্বেও রূপায়ণ-এর মালিক গৃহায়ণ মন্ত্রীকে নিয়ে প্লট বিক্রির জন্য মেলা উদ্বোধন করেন। শুধু তাই নয়, জমির প্রকৃত মালিকদের না জানিয়ে জাল দলির করেও প্রচুর জমি দখল করেছে রূপায়ণ। এ নিয়ে মামলাও রয়েছে।
একাধিক সূত্র জানায়, উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প সংলগ্ন রূপায়ণ সিটি উত্তরা প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০০৬ সাল থেকে। প্রায় দেয় শতাধিক বিঘা জমি নিয়ে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এ সিটির মালিক শুরু দিকে ওই এলাকার মানুষের কিছু জমি নাম মাত্র মূল্যে রেজিষ্টারী করে নেয়।
স্থানীয় মালিকদের বিভিন্ন প্রলোভন দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তাদের দাবি দাওয়া পূরণ করা হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। জমির মালিকদের ওই প্রকল্পের মালিকানা দেয়ার কথা থাকলেও শেস পর্যন্ত তারা মালিক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। অভিয়োগ রয়েছে, এ প্রজেক্টে স্থানীয় নাজিম শাহর ১৫ কাঠা জমি কিছু দিন আগে তিনি বালি ভরাট করে সাইড ওয়াল করেন । কিন্তু ওয়াল করার দুই দিনের মাথায় রাতের আঁধারে রূপায়ণের লোকজন ওই জমির সাইড ভেঙ্গে লেবেল করে জমির দখল নিয়ে নেয়। এ ব্যাপারে স্থানীয় সাধক নামের এক ব্যক্তিকে নানান হুমকি ধামকি দেওয়া হয়। এ ব্যাপরে তিনি থানায় জিডি করতে গেলে থান তার জিডি নিতে অপারগতা প্রকাশ করে।
অনেকের জমির পরিমাণ বেশী হলেও কাগজ পত্র ঠিক নাই বলে পরিমাণ কম ধরা হয়। এ নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে একাধিক সংবাদ প্রচারিত হয়। স্থানীয় হাজী আ: কাদেরের ১৭ শতাংশ জমি রূপায়ণ কর্তৃপক্ষ তার ওয়ালের ভিতরে নিয়ে গেলেও এখনো তার দাম বা রেজি: করে নিচ্ছে না মালিক পক্ষ। এব্যাপারে কাদির হাজি ও স্থানীয় স্বাধক অভিযোগ করেন, রূপায়ণ কর্তৃপক্ষ আমাদের জমি রেজিঃ না করেই তাদের বাউন্ডারির ভিতরে ডুকিয়ে নেয়। আমরা এখন ইচ্ছা করলেও নিজেদের জমিতে যেতে পারছি না।
জমির প্রকৃত মালিকেরা বলছেন, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের অধিকাংশ জায়গায় রূপায়ণের নির্মাণ কাজ চলছে যা বে-আইনি। তাছাড়া এ গ্রুপের মূল গেটের কারণে পশ্চিম পাশের নণভোগ মৌজার মানুষ যাতায়াতের ক্ষেত্রে জিম্মি হয়ে আছে। রূপায়ণ মূল গেট বন্ধ থাকায় এ মৌজার হাজার হাজার মানুষ তাদের শত বছরের পুরোনো রাস্তাটি ব্যবহার করতে পারছে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন