আফজাল বারী : দলীয় কাউন্সিলের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। ১৯ মার্চই দলটির টার্গেট। স্থান সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা মেলেনি। তবে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউশন (আইইবি) মিলনায়তন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান-এই দুটি স্থান বিবেচনায় রেখেই চলছে প্রস্তুতি। গঠিত ১১ উপ-কমিটি ইতোমধ্যে তাদের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে কাউন্সিলের আহ্বায়ক বিএনপি চেয়ারপার্সনের কাছে রিপোর্ট দিয়েছেন। পেশ করা রিপোর্ট অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দলীয় চেয়ারপার্সন ও সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য আগামী ৪ মার্চ তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশনার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।
দীর্ঘদিন বহন করা ভার মুক্ত করে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেই মহাসচিবের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত একজন ডাক্তারের কাছে এ বিষয়ে নিজের মনোভাবের কথা প্রকাশ করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। তবে সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে কাউন্সিল পর্যন্ত।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ এবং নিবন্ধন বিধিমালা (আরপিও) অনুযায়ী, যথাসময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাউন্সিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিএনপির সর্বশেষ পঞ্চম কাউন্সিল হয়েছিল ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর, শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। দলীয় গঠনতন্ত্রে তিন বছর পর পর কাউন্সিল অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও ছ্য় বছরের বেশি সময় পর দলটির ষষ্ঠ কাউন্সিল হতে যাচ্ছে। এর আগেও প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিলো কিন্তু প্রতিকূল পরিবেশের কারণে তা সম্ভব হয়নি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছিল ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর। এবার তারা জাতীয় সম্মেলন করতে যাচ্ছে আগামী ২৮ মার্চ।
বিএনপির কাউন্সিলের স্থান সম্পর্কে এখনো অন্ধকারে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। নিবন্ধিত দল হিসেবে সরকারের কাছে তিনি জানতে চেয়েছেন বিএনপির কাউন্সিল হবে কোথায়? কোথাও স্থান না পেলে তার বাসা কিংবা কার্যালয়েই কাউন্সিল হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়েই দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। প্রস্তুতিও শেষের পর্যায়ে। বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রিজভী আহম্মেদ বলেছেন, ১৯ মার্চ বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল। এটি একটি মহাকর্মযজ্ঞ। যে দল বার বার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে, সে দলের কাউন্সিলের স্থান দেয়া হচ্ছে না। যেখানে স্থান চাচ্ছি, সেই কর্তৃপক্ষকে সরকার নির্দেশ দিচ্ছেন যেন আমাদের সেই স্থান না দেয়া হয়। এই ধরনের বিভিন্ন কথা আমরা শুনতে পাচ্ছি। আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, ওইদিন ঢাকায় কাউন্সিল হবে ইনশাল্লাহ, আমরা কাউন্সিল করবোই।
১৯ মার্চ দিনক্ষণ বিবেচনায় রেখেই কাউন্সিলে সার্কভুক্ত দেশসমূহ এবং বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাবশালী এশিয়া, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের আমন্ত্রণ জানাবে বিএনপি। গতকাল রোববার গুলশান কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক উপ-কমিটির বৈঠকে বিদেশি অতিথিদের আমন্ত্রণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহ্বায়ক সাংবাদিক শফিক রেহমান। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান এবং ব্রিটেনের প্রভাবশালী কয়েকজন সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন সেখানে চিকিৎসারত ভাইস-চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা।
সূত্রমতে, কাউন্সিলের আগে অন্যতম প্রধান কাজ দলের চেয়ারপার্সন ও সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচন। স্থান নির্ধারণ না হওয়ায় সেটিও থমকে আছে। গতকাল দলের নীতিনির্ধারকদের কয়েকজনের সাথে বৈঠক করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। আগামী ২/৩দিনের মধ্যে তিনি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন। এ সংক্রান্ত সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন তিনি। তার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আছেন দলের ভাইস-চেয়ারম্যান হারুন-আল রশিদ। কমিশনের সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার আমিনূল হক।
দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচনের জন্য দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণার ৭ দিনের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করর কথা ছিলো কিন্তু প্রতিবন্ধকতার জন্য তা সম্ভব হয়নি। তবে ৪ মার্চ তফসীল তফসিল ঘোষণর পর ১৫ দিনের মধ্যে ঘোষিত পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, দাখিল, যাচাই-বাছাইসহ প্রার্থীর কোন অভিযোগ থাকলে তার শুনানী ও নিস্পত্তির কাজটিও সম্পন্ন করা হবে। এরপরই কাউন্সিলে নির্বাচনের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।
গত ২৩ জানুয়ারি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় মার্চের তৃতীয় সপ্তাহেই কাউন্সিল করা হবে। পরদিনই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের কথা গণমাধ্যমে জানান। তবে সেদিন তিনি তারিখ ঘোষণা করেননি। গত ৫ ফেব্রুয়ারি দলের যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহম্মে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানান, আগামী ১৯ মার্চ দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গত আগেই দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠানের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়ে তিনটি আবেদন করে বিএনপি। স্থান হিসেবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউশন মিলনায়তন ব্যবহারের জন্য আবেদন করেছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের জন্য অনুমতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে পুলিশের অনুমোদনের শর্ত দিয়েছেন। সে শর্তমতে পুলিশের কাছ থেকে এখনো কোনো অনুমতি পায়নি বিএনপি।
জানা গেছে, এবারো কাউন্সিলের জায়গা হিসেবে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রকে। এখানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং রুদ্ধ্রাদ্বার কাউন্সিল অনুষ্ঠানে সু ব্যবস্থা রয়েছে। দলের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রটি পাওয়ার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। চেষ্টায় ব্যর্থ হলে কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশন (উদ্বোধন) করবেন সোহরাওয়ার্দিতে দ্বিতীয় অধিবেশন (কাউন্সিলরদের মতামত বা ভোট) করবেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউশন মিলনায়তনে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন