তিস্তা চুক্তি সময়ের ব্যাপার
স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপিকে নির্বাচনে জেতার ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ এর নিশ্চয়তা সরকার দিতে পারবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না হলে নির্বাচন হবে না বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন হলে চলবে? আসলে বিএনপির লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড মানে তাদেরকে নির্বাচনে জেতার নিশ্চয়তা দেয়া। এই নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারবো না। এটা দিতে পারে এ দেশের জনগণ।
গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে কৃষক লীগের আয়োজনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীর এক আলোচনা সভায় দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন কাদের।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর দেশের স্বার্থে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে না হয় কিছুদিন পড়ে হলেও তিস্তা চুক্তি হবে। গঙ্গা চুক্তি যার হাত দিয়ে হয়েছে তিস্তা চুক্তিও তার (শেখ হাসিনা) হাত দিয়ে হবে। ৪১ বছরের অনিশ্চয়তার সীমান্ত চুক্তি যেহেতু হয়েছে তিস্তা চুক্তিও হবে। এটা এখন সময়ের ব্যাপার। সময় মত হবে। সময় হলেই সবই হবে।
তিনি বলেন, এত শান্তিপূর্ণভাবে সীমান্ত চুক্তি পৃথিবীর কোথাও নজির নেই। আর এই চুক্তিতে আমরা লাভবান হয়েছি। এমনকি সমুদ্র চুক্তিতেও আমাদের পাওনা আমরা বুঝে পেয়েছি। ভারতীয় সরকার সেখানেও কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করেনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২১ বছর ধরে যে অবিশ্বাস আর সন্দেহের দেয়াল শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদী তা ভেঙ্গে দিয়েছে। এটাই আজকে অনেকের সহ্য হচ্ছে না। আমরা ভারতের সঙ্গে সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে বন্ধুত্ব চাই না, আমরা সমতার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব চাই। তিনি বলেন, চুক্তি হোক সামরিক বা অসামরিক সব চুক্তি হবে বাংলাদেশের স্বার্থে। চুক্তি হবে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বার্থে। এর বাইরে কোন চুক্তি হবে না।
ভারত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বিএনপি দেশের অনেক ক্ষতি করেছে দাবি করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, জাতীয় স্বার্থে যত বেশি চুক্তি করবো আমি তত লাভবান হবো। ২১ বছর ভারত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে জাতির অনেক ক্ষতি আপনারা (বিএনপি) করেছেন। আমরা আজ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক করতে চাই, তা সমতার ভিত্তিতে।
ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার ‘জঙ্গিবাদ ইস্যু’কে অতিরঞ্জিত করছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আসলে জঙ্গিবাদকে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করে, যাদের মদদে জঙ্গিবাদ হচ্ছে তাদের এখন অন্তর্জালা, গা জ্বালা শুরু হয়ে গেছে।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে সরকারপন্থীরা হেরে যাওয়ায় অসন্তোষ জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সারা বাংলাদেশে ৯০ ভাগ জেলার আইনজীবী সমিতির নির্বাচন জিতেছি আমরা। ঢাকায়ও আমাদের জেতার সম্ভাবনা যেখানে বেশি, সেখানে আমরা শেষ পর্যন্ত জয় ঘরে তুলতে পারলাম না।
তিনি জানান, এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত আইনজীবীদের কিছু দুর্বলতা ছিল, সেটিই এখন সত্য প্রমাণ হয়েছে।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট হয়। শুক্রবার সকালে ঘোষণা করা হয় ফলাফল। এই নির্বাচনে ১৪টি পদের মধ্যে সভাপতি ও সম্পাদকসহ মোট আটটি পদে জয়ী হয়েছে বিএনপিপন্থী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল। অন্যদিকে কোষাধক্ষ্যসহ ছয়টি পদে জয়ী হয়েছেন সরকার সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ। সভাপতি পদে সাবেক আইনমন্ত্রী ও সাবেক আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক আবদুল মতিন খসরু ও সম্পাদক পদে বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ সুপ্রিম কোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম বুদু হেরেছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুরে নির্বাচন চলাকালে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে কিছু দুর্বলতা দেখিয়ে জানিয়ে যে সংশয় প্রকাশ করেছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচনের ফলাফলে সে সংশয়ই সত্য হলো।
আগামী নির্বাচনের আগে দলের ভেতরের এসব দুর্বলতা দূর করতে চান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি কাজের মানুষ, কাজ করতে চাই। আমি দলতে সুসংগঠিত করতে চাই। নেত্রী আমাকে সে দায়িত্বই দিয়েছেন। দলকে সুশৃঙ্খল করতে চাই। সুসংগঠিত করতে চাই, আরও স্ট্রংগার করতে চাই। আরও স্মার্টার করতে চাই, আরও আধুনিক করতে চাই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী জাতীয় নির্বাচনে একটি আধুনিক সুশৃঙ্খল, সুসংহত, শক্তিশালী স্মার্ট আওয়ামী লীগ নিয়ে নির্বাচনে যাব এবং বিজয়ের লক্ষ্যে কাজ করতে চাই।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, শেখ হাসিনার চেয়ে পার্টির জনপ্রিয়তা অনেক কম। আমার লক্ষ্য হচ্ছে, আমার কাজ হচ্ছে, আপনাদেরকে নিয়ে। উন্নয়ন করবেন নেত্রী আমাদের সরকার। কিন্তু পার্টির কাজ হচ্ছে উন্নয়নের সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া এবং এই দেশের জনগণকে আমাদের আচার, আচরণ, ব্যবহার, কর্ম দিয়ে তাদেরকে খুশি রাখবো যারা আমাদেরকে আগামী নির্বাচনে জয়ী করবে। সে কাজটি করতে হলে আমাদেরকে আজ নিজেদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। আজকে সেøাগান দিয়ে এই লক্ষ্য আমরা অর্জন করতে পারবো না। পার্টিটাকে পার্টির মত করতে হবে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কৃষক লীগের সভাপতি আবদুস সালামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক প্রমুখ।
কারাগারে আলোকচিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন
দ্বিতীয়বারের মতো শুরু হলো পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কারাগারে আলোকচিত্র প্রদর্শনী। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কারাগারের স্মৃতিবিজড়িত অংশে ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ শিরোনামের এই প্রদর্শনী প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টায় পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থেকে চলবে ২৭ মার্চ পর্যন্ত। পাকহানাদারদের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করে সমগ্রবিশে^র মানুষের মানবিক দৃষ্টির প্রত্যাশায় ভিনদেশী বন্ধুদের কর্মতৎপরতার দুর্লভ আলোকচিত্র নিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনটি। শুক্রবার বিকালে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এর উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন, আয়োজক সংস্থা জার্নির চেয়ারম্যান ড. খন্দকার বজলুল হক, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের চেয়ারপার্সন মাহফুজা খানম, ডাকসুর সাবেক জিএস মাহবুব জামান, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি একেএম আবদুল মমিন ও জার্নির কিউরেটর নাজমুল হাসান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা ইতিহাসকে জবর দখল করে রাখতে চায় তাদের অনুরোধ করবো তারা যেন এই প্রদর্শনী দেখে। আমার দৃঢ় বিশ^াস এই প্রদর্শনী দেখলে তাদের দৃষ্টির সামনে যে ধুয়াশা রয়েছে তা কেটে যাবে।
মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আমাদের সমাজে তথা রাষ্ট্রের আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে কিন্তু আমরা সহনশীলতা ও উদারতা থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছি। এই প্রদর্শনী দেখে জাতির জনকের মতো মানুষের জীবন সংগ্রাম থেকে শিক্ষা নিয়ে অযাচিত চিন্তা সরিয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।
প্রদর্শনীটি সম্পর্কে সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, এতে বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য নেতৃত্ব এবং ঐতিহাসিক ঘটনার আলোকচিত্র প্রদর্শিত হবে। টিকিট বিক্রির টাকা দিয়ে পুরো প্রদর্শনীর ব্যয় বহন হবে। এ ছাড়াও টিকিট বিক্রির অর্থের একটি অংশ কাশিমপুর কারাগারের ডে কেয়ার সেন্টারের শিশুদের জন্য খেলাধুলার সামগ্রী ও বই কেনায় ব্যয় করা হবে।
প্রদর্শনীতে মোট ১৭১টি দুর্লভ আলোকচিত্র থাকবে। এসব ছবিতে ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাঙালির ইতিহাস ও বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বঙ্গবন্ধুর অসামান্য নেতৃত্বের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন