মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

আদর্শ সমর নায়ক হযরত মুহাম্মদ (সা.)

| প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো : আহসান হাবিব : এ বিশ্ব জগতে সকল গুণে বিভূষিত, অলংকৃত সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ মহা মানব হলেন- হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি মেহরাবে দাঁড়িয়ে যেমন ইমামতি করেছেন, মসজিদে নববীর প্রাঙ্গণে বসে আল্লাহর দ্বীন শিক্ষা দিয়েছেন, রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, তেমনি জিহাদের ময়দানে প্রধান সেনাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি ছিলেন একাধারে ধর্মবেত্তা, রাষ্ট্রনায়ক এবং সেনাপতি। তার এক হাতে যেমন ছিল সুখ-শান্তি-মঙ্গলময় শাশ্বত জীবন বিধান সম্বলিত আল-কুরআন তেমনি অন্য হাতে ছিল আল্লাহর জমিনে দ্বীন প্রতিষ্ঠার বাধাদানকারী অপশক্তির বিরুদ্ধে তরবারি। তবে সে তরবারি থাকত সর্ব সময় কোষবদ্ধ। কখনও তা পূর্বে ব্যবহার হত না। কেবল শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই তা ব্যবহার হতো। চেঙ্গিস খাঁন, হালাকু খান, হিটলার, নেপোলিয়ান, মুসেলিনি সম্পদ লণ্ঠন ও সা¤্রাজ্য দখলের জন্য অন্য দেশে আগ্রাসন চালিয়েছিল।
একবিংশ শতাব্দির এ সভ্যতার যুগে যারা আজকের দিনে ধর্মের নামে- জিহাদের নামে মানুষ হত্যা করে তারা তাদেরই দোসর। গণতন্ত্র মানবাধিকার রক্ষার মুখোশধারী আমেরিকা ও ব্রিটেন বিশ্ব মানবতা ও জাতিসংঘকে অগ্রাহ্য করে অন্যায়ভাবে তৈল সম্পদ লুণ্ঠনের জন্য স¦াধীন সার্বভৌম দুর্বল দেশ ইরাক আক্রমণ করে ধ্বংস করল। প্রতিষ্ঠা হলো আইএস যা কিনা প্রতিষ্ঠা করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। অভিযোগটি উত্থাপন করেছেন দেশটির রিপাবলিকান দলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ট ট্রাম্প। আইএসকে কেন্দ্র করে সুকৌশলে ধ্বংস করা হচ্ছে, মুসলিম কৃস্টি-কালচার। কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সা.) সংগ্রাম করেছিলেন পার্থিব সম্পদ বা অন্য দেশ দখলের বা সংস্কৃতি ধ্বংসের জন্য নয় বরং অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও ভ্রান্ত বিশ্বাস আচ্ছন্ন সমাজের পরিবর্তন আনার জন্য, আল্লাহর একত্ববাদ, সার্বভৌমত্ব, তিনিই যে একমাত্র ¯্রস্টা, লালনকর্তা, রিযিক দাতা, উপাস্য ও পরকালের বিচারক তা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য এবং তার দেয়া বিধান অনুযায়ী জীবন নির্বাহ করার মাধ্যমে পৃথিবীতে সাম্য, মৈত্রী, সত্য, ন্যায়, ভ্রাতৃত্ব প্রেম, ভক্তি, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য। ঐতিহাসিকদের কারও মতে মহানবী (সা:) সর্বমোট ২৭টি যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। তার মধ্যে তিনি ৯টি যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। সেগুলো হলো বদর, ওহোদ, খন্দক, বনী কোরাইজা, মুস্তালিক, খায়বার, হোনায়েন, তায়েফ ও মক্কা বিজয়। এ সকল যুদ্ধে তার সামরিক যুদ্ধাস্ত্র খুবই কম এবং সৈন্য সংখ্যাও ছিল অতি সামান্য। কিন্তু তার প্রধান শক্তি ছিল মহান আল্লাহর ওপর নিখাঁদ বিশ্বাস ও একমাত্র ভরসা।
সব যুদ্ধেই মুসলিম সৈন্য সংখ্যার তুলনায় শত্রæর সৈন্য দিগুণ, তিনগুণ কিংবা আরও অধিক সংখ্যক হওয়া সত্তে¡ও আল্লাহর মদদে মুসলমানরাই জয় লাভ করে। রাসূল (সা.) ছিলেন তদানিন্তন সময় কালীন এক তুখোড় রনকৌশলী ও সফল সমর বিদ। সু² পর্যবেক্ষণ ও সামরিক দুরদর্শিতার গুণে ওহোদ যুদ্ধে প্রথমে বিজয় লাভ করার পরও তাঁর তথা মহানবী (সা.) এর আদেশ/নির্দেশ অমান্য করার কারণে মুসলিম সৈন্যরা পাহারারত জায়গা ছেড়ে যাওয়ায় ঐ যুদ্ধে পরাজিত হয়। মুসলমানদের এ পরাজয় ছিল সেনাপতির নির্দেশ অমান্য করার পরিণতি। খন্দক যুদ্ধে পরিখা খনন ছিল আরেকটি বিচক্ষণ সমর কৌশল। শত্রæ সেনাপতি আবু সুফিয়ানের দশ হাজার সৈন্যের বিপরীতে মুসলিম সৈন্য অতিক্রম হওয়া সত্তে¡ও রক্তপাতহীন বিজয়, রণকৌশলেরই দৃষ্টান্ত। মদীনার উপকণ্ঠে চারদিকে ৬ হাজার হাত দীর্ঘ, ১০ হাত গভীর ও দশ হাত প্রস্থ পরিখা খনন শত্রæ বাহিনীকে হতভম্ব করে দেয়। শত্রæরা দুই সপ্তাহ অবরোধ করে রাখার পর প্রচÐ ঝড় ও বৃষ্টিতে অবরোধ তুলে নিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। মক্কা বিজয়ও ছিল মুসলমানদের সেনাপতি রাসূল (সা.)-এর আরেক সমর প্রজ্ঞার পরিচয়। বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় বিশ্ব বিকেক দেখেছে কি? কিন্তু কি আশ্চর্য, কোন আক্রোশ নেই, এত বছর যে মক্কাবাসী মহানবী (সা.) এবং তার সাহাবীদের ওপর যে অমানবিক নির্যাতন, নিপীড়ন, কষ্ট দিয়েছিলো, এমনকি দেশান্তরিতও করেছিল তিনি প্রতিশোধ নেয়ার পরিবর্তে সবাইকে (ক্ষমার অযোগ্য কয়েকজন ছাড়া) ক্ষমার যে আদর্শ প্রদর্শন করেছিলেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে আজও অন্য কেউ দেখাতে পারেনি। ক্ষমা, উদারতা, মহানুভবতায় বিমুগ্ধ হয়ে সমস্ত মক্কাবাসী ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
সবুজ ২২ নভেম্বর, ২০২০, ৯:৪৩ এএম says : 0
রাসূল সাঃ কতটি যুদ্ধে সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেন?
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন