শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

লিখিত বক্তব্যে তুষ্ট নয় ইসি চায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ

প্রকাশের সময় : ১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

প্রার্থীদের ওপর চাপ বাড়ছে চলছে হামলা-মামলা গ্রেফতার তুচ্ছ কারণে হচ্ছে বাতিল কাল শেষ হচ্ছে প্রত্যাহার
আজিবুল হক পার্থ : আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনের প্রথম ধাপে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া প্রার্থীদের ওপর হামলা-মামলা এবং গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। নানাবিধ হুমকির পাশাপাশি আর্থিক প্রলোভন দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানোর অভিযোগ রয়েছে। বিএনপি এবং সরকারি দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের হুমকি, হামলা-মামলা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের আর্থিক প্রলোভন দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করানো হচ্ছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে নীরব নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি এতদিন লিখিত অভিযোগ চাইলেও রোববার বিএনপির অভিযোগের প্রেক্ষিত তারা লিখিত এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ চেয়েছে। ফলে কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অন্যদিকে মাঠপর্যায়ের নির্বাচন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উঠেছে পক্ষপাতিত্বের ঘোরতর অভিযোগ। এসব অনিয়ম ও অব্যাহত চাপের মাধ্যমে আগামীকাল বুধবার প্রথম ধাপের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শেষ হচ্ছে।
যদিও নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ মনে করেন, ইউপি নির্বাচন আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়, কোনো সংর্ঘষ হবে না। এর পরও আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর থাকতে বলেছি। আগামী বৃহস্প্রতিবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ বিষয়ে এরা কোঠর আদেশ দেওয়া হবে। কোন বাহিনীর গাফলতি সহ্য করা হবে না। এছাড়া আপতত একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট দেয়ার চেষ্টা করেছি। নির্বাচনের সময় এ সংখ্যা আরো বাড়বে।
জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া সরকার বিরোধী প্রার্থীদের ওপর চাপ ক্রমশই বাড়ছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সম্ভব্য প্রার্থীদের ওপর হুমকি-হামলার ঘটনা ঘটেছে। মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দিয়েছে সরকারী দলের কর্মীরা। সরকার বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় নাশকতার অভিযোগ এনে শতাধিক সম্ভব্য প্রার্থীদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রচারণায় অংশগ্রহণ করায় সহস্রাধিক কর্মীকে গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটেছে। এমন অবস্থায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন জেলায় প্রার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে এবং রিটার্নিং কর্মকতারাদের কাছে প্রতিকার চেয়ে পাননি। সর্বশেষ গত রোববার বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল ইসিতে গিয়ে লিখিত আকারে সারাদেশের বেশ কয়েকটি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অভিযোগ করেন।
বিএনপির অভিযোগ থেকে জানা যায়, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার মাদবরচর ইউপিতে বিএনপির মনোনিত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র ছিনিয়ে নেয় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর কর্মীরা। সব বাধা উপেক্ষা করে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিলেও যাচাই-বাছাইয়ের দিন প্রার্থী ও তার প্রতিনিধিরা উপস্থিত নেই এমন অভিযোগে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়। একই উপজেলার বন্দরখোলা ইউপিতে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া খোকন বেপারীকে মনোনয়ন জমা দেয়ার আগের রাতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী নিজাম বেপারীর লোকজন রাতের মধ্যেই তাকে এলাকা ছাড়তে বলেন। প্রাণ বাঁচাতে ওই রাতেই তিনি এলাকা ছেড়ে ঢাকায় পালিয়ে আসেন। এর ফলে তার মনোয়নপত্র জমা দেয়া সম্ভব হয়নি। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার চারটি ইউনিয়ন যথাক্রমে কুশল, বর্নি, পাটগাতি ও গোপালপুরে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র আওয়ামী লীগের বাধার মুখে জমা দেয়া সম্ভব হয়নি। তাদের সবার মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এ ধরনের প্রায় অর্ধশত ঘটনা উল্লেখ করে দেশের প্রায় দেড় শতাধিক ইউপিতে এ ধরনের হাঙ্গামা হয়েছে উল্লেখ করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান।
এ প্রেক্ষিত ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম জানান, বিএনপির অভিযোগ ঢালাও। ঘটনার বিবরণ আছে Ñ কেন, কাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তার বর্ণনা নেই। ফলে ইসি ব্যবস্থা নিতে পারছে না। সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ পেলে ইসি ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে খোদ ইসি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. নুরুল আমিন ২২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র দাখিল করে রিসিভ কপি চাইলে কর্তব্যরত কর্মকর্তা তাকে জানান, রিসিভ করা তার কাজ নয়। পরের দিন তাকে জানিয়ে দেয়া হয় যে, তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া স্বাক্ষরের ঘরের মধ্যে শুরু হয়ে বাইরে শেষ হওয়ায় প্রার্থিতা বাতিলের ঘটনা ঘটেছে, যা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আবেদনপত্রে করণিক ভুলের কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করা যায়। নির্দেশনায় সুষ্পষ্ট বলা আছে। কমিশনার শাহনেওয়াজও এমন ইঙ্গিত দেন। তবে মাঠ পর্যায়ে এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে আগামিকাল বুধবার শেষ হচ্ছে প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার। প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথে বাড়ছে সরকারী দল সমর্থিত প্রার্থীদের প্রত্যাহারের চাপ। সরকার বিরোধী শতাধিক প্রার্থীকে ইতোমধ্যে প্রত্যাহার করানো হয়েছে। আগামিকাল পর্যন্ত এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। একইভাবে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনেও দেশের বিভিন্ন ইউপিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটছে। নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না প্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশনার মোঃ শাহনেওয়াজ বলেন, আমরা চাই না নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের অভিযোগ আসুক। কিছু কিছু জায়গা ধেকে মনোনয়নপত্র জমা না দিতে পারার অভিযোগ এসেছে। আর তাই প্রত্যেক দলীয় প্রার্থীরা যেন বিনা বাধায় মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারে, এ লক্ষ্যে আমরা এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। সিদ্ধান্ত হলেই চূড়ান্ত হবে বিকল্প স্থানগুলো কোথায়। আপাতত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়কে বিকল্প হিসেবে ভাবা হচ্ছে।
বিএনপির অভিযোগ প্রসঙ্গে শাহ নেওয়াজ বলেন, তারা সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ দেয়নি। তাদের অভিযোগ ঢালাও। ঢালাও অভিযোগে তদন্ত করা কষ্টকর। এর পরও আমরা কয়েকটি অভিযোগের তদন্ত করেছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন