মো: শামসুল আলম খান ময়মনসিংহে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এ সময় আটক করা হয়েছে নব্য জেএমবির ৭ সদস্যকে। রক্তপাতহীন এ সফল অভিযানে পুলিশের কব্জায় আটক ৭ সদস্যের একজন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র। সোমবার দুপুর থেকে বিকেল নাগাদ নগরীর কালিবাড়ি এলাকার সোহাগ পার্টি সেন্টারের ঠিক সামনে এক চিকিৎসকের বাসায় চলে এ অভিযান।
পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, আটককৃতরা নব্য জেএমবির সদস্য। তারা হলেন- ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের শহীদুল ইসলাম (৩৫) ও আশিকুর রহমান (২৮), ধোবাউড়া উপজেলার আলামিন (২৫), নেত্রকোনার নাসির উদ্দিন (২৭), একই জেলার জারিয়া এলাকার রুমান মিয়া (২৭), মাসুম আহমেদ (৩০) ও শাহ আলম হোসেন শামীম (২৭)। বাড়ির মালিক চিকিৎসক, পরিবেশ নিরিবিলি
সোহাগ পার্টি সেন্টারের সম্মুখেই একটি সরু গলি। সেই গলি দিয়ে খানিক পথ এগোতেই প্রকান্ড একটি আমগাছ ডালপালা বিস্তার করেছে। গাছটির ছায়ায় ঘেরা হলুদ রাঙা বাড়িটির ওপরে টিনের চাল। আর চার পাশে দেয়াল। বাড়ির মালিক আইনজীবী আসিফ আনোয়ার মুরাদ।
নিরিবিলি পরিবেশের এ বাড়ির ঠিক ডান পাশেই সূর্যের হাসি ক্লিনিক। আর পেছনেই বেকারি। ৩ কক্ষের এ বাড়িতেই সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে অবস্থান করছিলেন নব্য জেএমবির সদস্যরা। তাদের আর শেষ রক্ষা হয়নি। সংঘর্ষ বা রক্তপাত ছাড়াই আটক করা হয়েছে ৭ জঙ্গিকে।
পুলিশ জানায়, দিন-রাত প্রায় সব সময়ই এ বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ থাকত। ভেতরে কোনো টিভি না থাকলেও ছিল ওয়াইফাই রাউটার। ছিল কম্পিউটার। কম্পিউটারে লেখা ছিল-‘ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করার লক্ষ্য।’
বাড়ির ভেতরে ছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মোজাহেদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) প্রধান শায়খ আব্দুর রহমানের লেখা ৫০টি জেহাদী বই।
পুলিশ এ বাড়িটি ঘেরাও করার পর থেকেই শুরু হয় কৌতূহল। স্থানীয় শত শত মানুষ ভিড় করে দূর থেকে বাড়িটি দেখার জন্য। তারা তো বটেই আশপাশের বাসিন্দারাও জানত না নব্য জেএমবির সদস্যরা এ বাড়িটিতে দীর্ঘদিন যাবত বসত গড়েছেন।
ওই বাড়ির লাগোয়া সূর্যের হাসি ক্লিনিকের জরুরি বিভাগে কর্মরত রীতা প্রসাদ ও মনিরা বেগম জানান, এ বাড়িতে লোকজনের যাতায়াত ছিল খুবই কম। প্রায় বেশিরভাগ সময়ই ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ থাকত।
আমরা জানতাম তারা বেকারি ব্যবসা করেন। কারণ তাদের ঘরের সামনে প্রায় সময়ই বেকারি ভ্যান থাকত। এ কথা বলতে বলতেই যেন কেঁপে ওঠেন তারা। আতঙ্ক কাটিয়ে রীতা প্রসাদ বলেন, আমরা জানতাম না জঙ্গিরা এ বাড়িতে থাকছে।
জরুরি বিভাগের মনিরা বেগম বলেন, দুই বছর আগেও এ বাড়িতে থাকতেন বাড়ির মালিক আসিফ আনোয়ার মুরাদ। তার বাবা ছিলেন সাবেক এমএলএ আনোয়ারুল কাদির। মুরাদ ঢাকায় থাকেন বলে শুনেছি।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, এ বাড়ি থেকে আটক সবাই নব্য জেএমবির সদস্য। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে বাড়ির মালিক আইনজীবী মুরাদকে এখন পর্যন্ত ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে খোঁজা হচ্ছে।
ছলচাতুরি জঙ্গি মাসুমের
এ সময় আটক জঙ্গি সদস্য মাসুম প্রথমে পুলিশের কাছে দাবি করে বাড়িটি তার নিজের। এরপর বাড়ির মালিককে নিজের ভাই এবং সবশেষ খালাতো ভাই বলে পরিচয় দেন। মাসুম আদৌ বাড়ির মালিকের আত্মীয় নাকি বিভ্রান্তি ছড়াতেই এমন তথ্য দিচ্ছে এসব বিষয়ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
একই সঙ্গে মাসুম পুলিশকে জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে তারা বাড়িটিতে অবস্থান করছেন। মাসুমের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ বাড়ির পেছনের ভেকু ফুড, প্রাণ আরএফএলের দু’টি গ্রæপ ও গেøাব বিস্কুট কোম্পানির অফিসে প্রবেশ করে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এ সময় পুলিশের ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন কথা বলেন ভেকু ফুডের এরিয়া সেলস ম্যানেজার আশিক হাসানের সঙ্গে। এ সময় তারা কোম্পানির প্রতিটি কক্ষ ঘুরে ঘুরে দেখেন।
আশিক হাসান জানান, দুই-আড়াই বছর যাবত ভেকু ফুড ছাড়া অন্যান্য কোম্পানির সঙ্গে কাজ করেছেন মাসুম। ৯ মাস আগে তিনি ভেকু ফুডের পরিবেশক হিসেবে কাজ করতেন।
পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, জঙ্গি আস্তানার বাড়িটিতে মাসুম ছাড়া আরো ৬ জন থাকলেও তাদের সঙ্গে ওই কোম্পানির লোকজনের যোগাযোগ ছিল না। মূলত মাসুম জঙ্গিদের হয়ে পুরো এলাকা রেকি করত। নিজেদের জঙ্গি কর্মকান্ড আড়াল করতেই মাসুম ওই কোম্পানির পরিবেশকের দায়িত্ব পালন করতেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন