২০০১ সালে বিএনপি প্রতিবেশী দেশের কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল
বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত জোট দেশটিকে ভিক্ষুকের সর্দারের মতোই পরিচালনা করেছে। তাদের নীতিটাই ছিল নিজেদের স্বার্থে দেশের মানুষকে আজীবন ভিক্ষুক বানিয়ে রাখা। তারা কখনও চাইত না যে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে বিএনপি-জামায়াতের নীতিটাই আলাদা ছিল। তারা কখনই চায়নি বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে। কারণ, তাদের সবসময় লক্ষ্য ছিল ব্যবসা-বাণিজ্য। চাল আমদানি করে দু’পয়সা কামাই করবে এটাই তাদের লক্ষ্য ছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের (কেআইবি) উদ্যোগে আয়োজিত ‘ডিপ্লোমা কৃষিবিদ মহাসম্মেলন-২০১৭’ তে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নীতি ছিল দেশের মানুষ যত গরিব থাকবে, জীর্ণশীর্ণ থাকবে ততই লাভ। তাদের দেখিয়ে বিদেশ থেকে টাকা এনে ভাগাভাগিটা করা যাবে। দেশ খাদ্যে স্বনির্ভর হলেতো আর টাকা আসবে না। কিন্তু তার দল আওয়ামী লীগ বিএনপি’র মতো ভিক্ষুকের সর্দার হয়ে থাকতে চায় না। আমরা শাসক নয়, সেবক হয়ে দেশ পরিচালনা করেই দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যেতে চাই। আর এখানেই আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি’র মধ্যে পার্থক্য। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া নাকি ভালো নয়, তাহলে বিদেশের সাহায্য পাওয়া যাবে না, ক্ষমতায় থাকাকালীন এটাই ছিল বিএনপি নেতা, মন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের অভিমত।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন কৃষিমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের সাবেক মহাসচিব আফম বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি। ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের সভাপতি এটিএম আবুল কাশেম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা উড়িয়ে ডিপ্লোমা কৃষিবিদ মহাসম্মেলন ২০১৭-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন, এ সময় সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়।
সম্মেলনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারো বললেন, ২০০১ সালে বিএনপি প্রতিবেশী দেশের কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। গ্যাস বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জিততে দেওয়া হয়নি। তিনি আরো বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পেছনে বেশ ভালো একটা চুক্তি ছিলোÑ বাংলাদেশের সম্পদ গ্যাস। এই সম্পদ গ্যাস বিক্রি করতে চাইল আমেরিকা, কিনবে ভারত; আমেরিকান কোম্পানি গ্যাস তুলবে, ভারতের কাছে বিক্রি করবে। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব তার কাছেই দিয়েছিলেন জানিয়ে নিজেকে ওই ‘ঘটনার প্রত্যক্ষ’ সাক্ষী হিসেবে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে সফরে আসা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের সৌজন্যে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা লতিফুর রহমানের সরকারি বাসভবন যমুনায় মধ্যাহ্নভোজের স্মৃতিচারণ করেন শেখ হাসিনা। ওই মধ্যাহ্নভোজে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জিল্লুর রহমান এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মান্নান ভূইয়া উপস্থিত ছিলেন। সেখানে গ্যাস বিক্রির বিষয়টি আলোচনায় আসার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ওখানেও এই আলোচনা। আমি বলে দিলাম, আমার যা বলার ছিল; আমি তা আপনাদের প্রেসিডেন্টকে বলে দিয়েছি। তিনি যখন ঢাকায় আসলেন তখনও বলেছি, আমাকে যখন রাষ্ট্রীয় সফরে দাওয়াত দিয়ে আমেরিকায় নিয়ে গেলো; তখনও একই কথা বলেছি। আমার এই নীতির কোনো পরিবর্তন হবে না।
এই আলোচনা যখন এক পর্যায়ে শেষ হলো, আমরা চলে আসলাম। বিএনপির নেতারা ওখানে থেকে গেলেন। তারপর, তাদের মধ্যে গ্যাস বেচার চুক্তি করেই ২০০১ এ তারা ক্ষমতায় আসলো। ভোটের দিক থেকে আওয়ামী লীগ কিন্তু বেশি ভোট পেয়েছে, কিন্তু সিট পেল না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তর-পরবর্তী সরকারগুলো এদেশের উন্নয়নে কোনো কাজ না করে শুধু নিজেদের ভাগ্য গড়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, যেহেতু অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে তারা ক্ষমতায় এসেছিল তাই ক্ষমতাকে কীভাবে ধরে রাখবে এই কাজেই তারা ব্যস্ত ছিল। দেশের মানুষের দিকে তাকানোর কোন ফুরসৎ ছিল না। সাথে সাথে যেসব শিল্প-করকারখানা ছিল, এমনকি আমাদের কৃষিভিত্তিক শিল্প যেগুলো পাকিস্তানিরা ফেলে যাওয়ার পরে জাতির পিতা জাতীয়করণের মাধ্যমে স্বাধীনতার পর চালু করেন, সেগুলো একে একে সেই শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়। অর্থাৎ আমাদের দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে রাখাই তাদের লক্ষ্য ছিল। শুধু তাই নয়, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী বিএডিসি বন্ধ করে দেবার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি সরকার।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পায়। আমরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করি। সব কৃষি উপকরণ অতিদ্রæত কৃষকদের হাতে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়। সারসহ সব উপকরণ কৃষকের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা হয়। কৃষিতে ভর্তুকি পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়। কৃষি কারিগরি শূন্যপদে লোক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৩ কোটি টনে পৌঁছে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালে ক্ষমতায় এলে কৃষি উৎপাদনে আবার স্থবিরতা নেমে আসে। সারের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, কৃষি উপকরণের দুষ্প্রাপ্যতা, অনিয়ম, অনাচার ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আবার খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত হয়। কৃষিতে ভর্তুকি, সকল প্রকার সারের মূল্য কমানো, বীজ ও সেচ ব্যবস্থাপনা, গবেষণা, প্রণোদনা, মৃতপ্রায় বিএডিসি-কে শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নের গতিকে আমরা ত্বরান্বিত করি।
প্রধানমন্ত্রী কৃষির স¤প্রসারণে তার সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, আজ সারের পেছনে কৃষককে দৌড়াতে হয় না। কৃষকের যাবতীয় উপকরণ প্রাপ্তি সহজ করার জন্য ২ কোটি ৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৭৭ জন কৃষককে কৃষি উপকরণ কার্ড প্রদান করা হয়েছে। মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে ১ কোটি ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৪৮ জন কৃষকের ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)-এর বীজ সংরক্ষণ ও সরবরাহ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ১ লাখ ৭০ হাজার ২৮২ মেট্রিক টনে উন্নীত করা হয়েছে। তাছাড়া কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে উচ্চফলনশীল উন্নতজাতের বীজ উৎপাদন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সরকার প্রধান বলেন, দেশের চাষ ব্যবস্থা আধুনিকায়নের মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধি ও উৎপাদন ব্যয় হ্রাস ও কৃষি শ্রমিকের অভাব মেটানোর জন্য কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে ১৬৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা ভর্তুকি প্রদান করা হচ্ছে। ২৫ শতাংশ কম মূল্যে ৩৮ হাজার ৩২৪টি বিভিন্ন আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকের মাঝে সরবরাহ করা হয়েছে এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ আজ সারাবিশ্বের কাছে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। আমরা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভাগ্য উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। প্রায় ৬ লক্ষাধিক নারীকে ফসল উৎপাদন প্রযুক্তি, ফসলের বালাই ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণ, সংগ্রহ উত্তর ব্যবস্থাপনা এবং বিপণন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন