শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভূরাজনীতি ও ভূঅর্থনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব বিস্তারে ভারতীয় উদ্যোগ

প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গতকাল মঙ্গলবার থেকে ভারতের রাজধানীতে শুরু হচ্ছে রাইসিনা ডায়ালগ। রাইসিনা ডায়ালগেই এশিয়ার নানা দেশের নীতিনির্ধারক, বিশেষজ্ঞ বা সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গেই যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। ডায়ালগে অংশ নিতে গতকাল সকালে তিনি ঢাকা ছাড়েন এবং সন্ধ্যায় দিল্লির তাজ প্যালেস হোটেলে উদ্বোধনী আলোচনা সভায় তিনি ছিলেন অন্যতম প্রধান বক্তা। চলতি সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে কথা রয়েছে।
জানা গেছে, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দেশটির প্রথম সারির স্ট্র্যাটেজিক থিঙ্কট্যাঙ্ক অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে দিল্লির রাইসিনা ডায়ালগ এমন এক আন্তর্জাতিক সংলাপের প্রক্রিয়া, যা সিঙ্গাপুরের বিখ্যাত বার্ষিক ‘সাংগ্রিলা ডায়ালগে’র সঙ্গে পাল্লা দিতে চাইছে। দিল্লির ক্ষমতার দুই অলিন্দ, নর্থ ব্লক আর সাউথ ব্লককে দু’পাশে রেখে যে রাস্তাটা রাজপথ থেকে উঁচু হয়ে সোজা রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছে, সেই প্রশস্ত, পিচঢালা সড়কটারই নাম রাইসিনা হিলস। রাইসিনা শব্দটা যেন ভারতীয় রাষ্ট্রযন্ত্রের ক্ষমতা আর গর্বের প্রতীক। আর সেই ব্যঞ্জনা থেকেই অবতারণা ‘রাইসিনা ডায়ালগে’র।
এ ডায়ালগে অন্যান্যের মধ্যে থাকছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই, শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা ও সেশেলস-এর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জেমস ম্যানকাম। এ ছাড়া সংলাপে চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ৪০ দেশের ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা যোগ দেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও সংলাপে দেশটির তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ, বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ড. এস জয়শঙ্কর, সাবেক কূটনীতিক ও লেখক শশী থারুরসহ ৪০০ ব্যক্তিত্ব অংশ নেন।
বাংলাদেশ সেখানে বিশেষভাবে আমন্ত্রিত ঠিকই, তবে রাইসিনা ডায়ালগের পরিসর শুধু ভারত-বাংলাদেশের গ-িতে সীমিত থাকছে না, বরং এশিয়া মহাদেশের অন্তত ৩৫টি দেশকে নিয়ে একটি সমন্বয়ের রূপরেখা তৈরি করতে চাইছে এই সংলাপ-প্রক্রিয়া।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, এশিয়া মহাদেশের দেশগুলো কীভাবে নিজেদের মধ্যে অধিকতর সমন্বয় গড়ে তুলতে পারে এবং বাকি বিশ্বের সঙ্গে এশিয়ার সমন্বয় কীভাবে আরও জোরালো হতে পারে, রাইসিনা ডায়ালগ তারই উত্তর খুঁজবে। আর সেই প্রচেষ্টায় একটা বড় ভূমিকা থাকবে ভারত মহাসাগর তীরবর্তী দেশগুলোর। ভারত এখানে একটা কেন্দ্রীয় অবস্থানে আছে ঠিকই, কিন্তু বাংলাদেশ বা দ্বীপরাষ্ট্র সেশেলসের ভূমিকাও তাতে কোনও অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়!
এ নিয়ে দিল্লিতে সাংবাদিকদের কাছে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বলেছেন, দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্ক এখনো সর্বকালের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সময় অতিক্রম করছে। রাইসিনা ডায়ালগের মঞ্চে দিল্লি ও ঢাকার পার্টনারশিপ সেই সম্পর্ককে আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে, তা নিয়ে সাউথ ব্লকের (ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) অন্তত কোনও সন্দেহ নেই!
তবে সোজা কথায়, এশিয়ার ভূরাজনীতি আর ভূঅর্থনীতিতে একটা দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলার চেষ্টা এই রাইসিনা ডায়ালগ, যাতে ভারত সামিল হয়েছে বাংলাদেশসহ আরও অনেক মিত্র দেশকে নিয়ে। ফলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এবারের দিল্লি সফর (১-৩ মার্চ) যতটা না দ্বিপাক্ষিক, তার চেয়ে অনেক বেশি বলা যেতে পারে আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক।
রাইসিনা ডায়ালগের ঠিক আগেই মাহমুদ আলী গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ তাজ প্যালেস হোটেলেই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন সুষমা স্বরাজের সঙ্গে। যদিও ভারত মূলত এসবকে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলেই বর্ণনা করছে, তবে এটাও যোগ করতে ভুলছে না দুই মন্ত্রী চাইলে যে কোনও দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়েই কথা বলতে পারেন। কিন্তু কয়েকদিন আগেই দুদেশের সচিব পর্যায়ে বৈঠক হওয়ায় এত তাড়াতাড়ি কোনও বিষয়ে নতুন করে কিছু হওয়ার সম্ভাবনা সেখানে কম। মানে তিস্তা নিয়ে মন্ত্রীরা কথা বলতেই পারেন, কিন্তু তাতে যে নতুন কোনো ‘ডেভেলপমেন্ট’ নেই সেটা তারা দুজনেই ভাল জানেন। ফলে এই সফরে ফোকাস তিস্তা নয়, বরং ভারত মহাসাগর তথা রাইসিনা ডায়ালগ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন