শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রতীকের আগেই প্রচারণা

প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আজিবুল হক পার্থ : আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের আগেই চলছে প্রচারণা। আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করে প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন প্রভাবশালী প্রার্থীরা। এসব নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চোখে পড়ছে না। ইসি দেশের কোনো নির্বাচনী এলাকায় অনিয়ম খুঁজে পাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি সুস্পষ্ট আচরণ বিধির লঙ্ঘন। এর মাধ্যমে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট হবে। বিধি-ভঙ্গের মহোৎসবের মধ্যেই আজ বুধবার শেষ হচ্ছে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার। আগামীকাল প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে।
আসন্ন ইউপি নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল মোতাবেক প্রথম ধাপে আজ শেষ হচ্ছে প্রার্থিতা প্রত্যাহার। আগামীকাল দেওয়া হবে প্রতীক বরাদ্দ। এইদিনেই সার্বিক পরিস্থিতি পর্যলোচনা ও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে বৈঠকে বসবে।
এদিকে তফসিল ঘোষণার শুরু থেকেই আচবিধি লঙ্ঘন হয়েছে চলেছে। তফসিল আগে থেকে আগাম প্রচারণা চালিয়ে আসছে সম্ভাব্য প্রার্থিতা। আর মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকে প্রতীক নিয়ে প্রচারণায় নেমেছে রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দেশের বিভিন্ন জেলায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে প্রার্থীরা নিয়মিত প্রতীক নিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। সেই সাথে সড়কে পথসভা, শুভেচ্ছা মিছিল, মোড়ে মোড়ে রঙিন পোস্টার সাঁটিয়েছেন।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন এটা আচরণ বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সুষ্ঠু ভোটের আতঙ্ক সৃষ্টি করবে। ইসি নিবন্ধিত পর্যবেক্ষণ সংস্থা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক ড. মো. আব্দুল আলিম ইনকিলাবকে বলেন, এটা নির্বাচনী বিধির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। এটা নির্বাচনের কমিশনের এবং স্থানীয় রিটার্নিং অফিসারের দেখার কথা ছিল। তফসিলের পরে বিধি মোতবেক নিষিদ্ধ এই সময়ে প্রচারণা চালানোর ফলে একদিকে যেমন আচরণ সমান সুযোগ নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ভোটারদের মাঝে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। প্রচারণার ক্ষেত্রে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের মাধ্যমে প্রার্থীরা ইসির আদেশ মানবেন না বলে জানান দিচ্ছেন বলেও তিনি মনে করেন। যদিও এসব বিষয়ে ইসির দৃষ্টি নেই। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী এলাকায় কোনো অনিয়ম খুঁজে পায়নি। শাহ নেওয়াজ বলেন, আমাদের পর্যবেক্ষকরা এখনো প্রতিবেদন জমা দেওয়া শুরু করেনি বা অভিযোগ দেয়নি। তবে কিছু অভিযোগ ঢালাওভাবে এসেছে। সেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কিছু কিছু তদন্ত করেছি। যেখানে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন সেখানে নেবো। যেহেতু আমাদের দায়িত্ব রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় ভিত্তিক, সেখানের কোনো অভিযোগ পায়নি। এছাড়া বাইরে যা ঘটবে তা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবস্থা নেওয়া জন্য বলেছি।
শাহ নেওয়াজ বলেন, নির্বাচনে সবাই যেন সমান সুযোগ পায়, আমরা এটাই চাইবো। অসম প্রচারণার সুযোগ থাকবে এটা মনে করি না।
খোজ নিয়ে দেখা গেছে, দেশের প্রায় সব ইউনিয়নের নৌকার পোস্টার সাঁটানো রয়েছে। চলছে নিয়মিত পথসভা। অথচ নির্বাচনী আইন মোতাবেক তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রতীক বরাদ্দের আগ পর্যন্ত কোন ধরনের প্রচারণা চালানো যাবে না। সেই হিসাবে আগামী সকাল পর্যন্ত প্রচারণা নিষিদ্ধ। কিন্তু প্রার্থীরা এসব নিয়ম মানছেন না। এসব প্রার্থীরা আচরণ বিধির তোয়াক্কা না করে ফেসবুকে প্রতীকসহ নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা।
সিলেট সদর উপজেলার টুলটিকর, খাদিমপাড়া, খাদিমনগর, মোগলগাঁও, জালালাবাদ, হাটখোলা, কান্দিগাঁও ও টুকেরবাজার ইউনিয়নে ভোট হবে প্রথম ধাপে। এসব ইউনিয়নে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের প্রতীক নিশ্চিত থাকায় আগে-ভাগেই তারা পোস্টার লিফলেট ছাপিয়ে বাসায় রেখে দিয়েছেন। স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সদস্যরা যারা প্রতীকের জন্য এখন অপেক্ষায় আছেন, তারাও নীরব প্রচারণায় ব্যস্ত।
এসব বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের সাথে সুর মিলাচ্ছেন তৃণমূলের কর্মকর্তারা। সিলেটের আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেণ, আগামী ৩ মার্চ প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। এর আগেই কিছু কিছু প্রার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের প্রতীকসহ ভোট চাইছেন। এসব বিষয়ে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ আমরা পেয়েছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের আমরা মৌখিকভাবে বলে দিয়েছি তারা যাতে এরকম আর না করে।
শুধু ফেসবুকে ভোট চাওয়ায় সীমাবদ্ধ নেই প্রার্থীদের ভোট চাওয়া। বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী সভা, সমাবেশ চলছে সমানতালে। ওই সব সভায় ব্যাপক শো ডাউন করা হচ্ছে। ব্যানার টানিয়ে হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে সরাসরি দলীয় প্রতীকে ভোট চাওয়া হচ্ছে।
খুলনার ৬৭টি ইউনিয়নের ভোট হবে প্রথম দফায়। এর মধ্যে ডুমুরিয়া উপজেলার বেশ কযেকটি ইউনিয়ন, ফুলতলা উপজেলা, দীঘলিয়া, রূপসাসহ অন্যান্য উপজেলায় দেদারছে প্রতীক বরাদ্দের আগেই প্রচার প্রচারণা চলছে। এছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে চলছে নির্বাচনী প্রচারণা। সে সকল সভা সমাবেশে উপজেলা, জেলা ও মহানগর নেতারা উপস্থিত থাকছেন। এক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরাও পিছিয়ে নেই।
খুলনা জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচার প্রচারণা চালানো যাবে না। যদি কোনো প্রার্থী প্রচার প্রচারণা করে, তবে তা আচরণবিধি লঙ্ঘনের সামিল। এ সংক্রান্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিতে হবে। তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন