শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

রামপুরায় ভাই-বোনের মৃত্যু-খাদ্য বিষক্রিয়ায় নয় শ্বাসরোধ করে হত্যা ৭ জন আটক

প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর রামপুরার বনশ্রীতে নিহত সেই শিশু দুই দুই ভাই-বোনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে তাদের খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছিলো। শিশু দু’টির লাশের ময়না তদন্ত শেষে এ কথা বলেন চিকিৎসকরা। তবে অবুঝ এ শিশুদের ঘাতক এবং খুনের কারণ এখনও অন্ধকারে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাব ও পুলিশ ৭ জনকে আটক করেছে। আপন ভাই-বোনের লাশ দাফনের উদ্দেশ্যে গতকালই তাদের গ্রামের বাড়ি জামালপুরে নেয়া হয়েছে। আমান-জেসমিন দম্পতির দুই সন্তান অরণী ও আলভীকে হারিয়ে ওই পরিবারে চলছে এখন চলছে শোকের মাতম।
গত সোমবার বনশ্রী বি ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ৯ নম্বর বাসায় ঘুমের মধ্যেই মৃত্যু ঘটে নুসরাত আমান অরনী (১২) ও আলভী আমান (৬) নামের ওই দুই ভাই-বোনের। তারা গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আমানউল্লাহ আমান ও গৃহিণী জেসমিন আক্তার দম্পতির দুই সন্তান। দুই ভাইবোনের মৃত্যুর পর তাদের বাবা-মা ও স্বজনরা বলেছিলেন, ঘটনার আগে স্থানীয় কিন্ট চায়নিজ রেস্টুরেন্ট থেকে আনা খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছিলেন দুই শিশু। এজন্যই পরিবারের সদস্যরা বলেছিলেন, হোটেল থেকে আনা চায়নিজ খাবার খেয়ে খাদ্যে বিষক্রিয়ায়ই তাদের মৃত্যু হয়েছে। অরনী সিদ্ধেশ্বরীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী এবং আলভী আমান হলিক্রিসেন্ট স্কুলের নার্সারির শিক্ষার্থী (৬)।
মেডিকেল সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) মর্গে ভাই-বোনের লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়। শেষে ময়না তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢামেক হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, দু’জনের শরীরেই আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শিশু আলভী আমানের পায়ে ও গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। তার বড় বোন নুসরাত আমান অরনীর চোখে রক্ত জমাট, গলায় ও ডান হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের আঘাতের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তাদের দু’জনের জিহ্বা দাঁত দিয়ে কামড় দেওয়া ছিলো। সাধারণত ফুড পয়জনিংয়ে (খাদ্যে বিষক্রিয়া) মৃত্যু হলে এ ধরনের আলামত দেখা যায় না। হত্যার আগে খাবারের সঙ্গে চেতনা নাশক ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছে। তবে কোন ধরনের খাবার ও চেতনানাশক ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে তা নিশ্চিত হতে হার্ট এবং স্টমাকের কিছু অংশ আলামত হিসেবে মহাখালীর রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে দুই শিশুর খুনের ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন রামপুরা থানা পুলিশ। তবে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা পুলিশ স্থানীয় কিন্ট চায়নিজ রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারসহ তিনজনকে আটক করেছে। এরা হলেন, কিন্ট চায়নিজ রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার মাহফুজুর রহমান, প্রধান বাবুর্চি আসাদুজ্জামান রনি ও তার সহকারী আতাউর রহমান। অভিযোগ ওঠে ওই রেস্টুরেন্ট থেকে আনা চায়নিজ খাবার সোমবার দুপুরে খেয়ে ঘুমানোর পরই মৃত্যু হয় আলভী ও অরনীর। আটককৃতদের ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে গতকাল আদালতে পাঠানো হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডেরও আবেদন করা হয়।
অপরদিকে গতকাল দুপুরে শিশু দু’টির লাশের ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ঘটনা তদন্তের অংশ হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪ জনকে আটক করেছে র‌্যাব। তারা হলেন-ভবনের দুই দারোয়ান, গৃহশিক্ষিকা এবং এক আত্মীয়। বিকালে এই চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৩ এর কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মোস্তাক আহমেদ। প্রাথমিকভাবে তাদের নাম ঠিকানা জানা যায়নি। শিশু দুটির বাসা রামপুরা বনশ্রীর বাসা থেকে দুই দারোয়ান, গৃহশিক্ষিকা ও এক স্বজনকে র‌্যাব-৩ এর ক্যাম্পে নেওয়া হয়। র‌্যাব কর্মকর্তা মোস্তাক বলেন, তারা আটক বা গ্রেপ্তার নয়। বিষয়টি জানার জন্য তাদেরকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এদিকে ময়না তদন্ত শেষে শিশু দু’টির লাশ দাফনের জন্য জামালপুর শহরে নেয়া হয়েছে। জামালপুর শহরে শিশু দু’টির নানাবাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
এদিকে, দুই-ভাই বোনের খুনের কারণ ও ঘাতক করা এ বিষয়ে এখনো ধোঁয়াশা কাটছেই না। পুলিশও এখনও খুলতে পারছে না রহস্যজট। পরিবারের সদস্যদের দাবি, কারো সঙ্গে কোন ধরনের বিরোধ নেই তাদের মা-বাবার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন