স্টাফ রিপোর্টার : জঙ্গিবাদ একদিনে সৃষ্টি হয়নি। জঙ্গিবাদ বৃদ্ধিতে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ইন্ধন রয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার পরে এতে উস্কানি বেশি হয়েছে। জঙ্গিবাদে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হলে তা নিয়ন্ত্রণে আনা আরো কঠিন হবে।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদকের আগ্রাসন রোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এ সেমিনারে এ কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আমাদের অভিযানের ধরনে মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। এ পরিবর্তনের ফলে কল্যাণপুর, সীতাকুন্ড, মিরসরাই, সিলেটসহ সারা দেশে সফলতার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এর মধ্যে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সিলেটে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান আবুল কালাম আজাদসহ দুজন সহকর্মীকে হারাই। আমরা জীবন দিয়ে মানুষের জীবনকে রক্ষা করি। কিন্তু দুঃখ হয়, যখন আমাদের অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। যারা প্রশ্ন তোলে তারা জ্ঞানপাপী। জেগে জেগে ঘুমায়।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের কিছু পরিচিত দায়িত্বশীল, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী রয়েছেন, যারা জঙ্গি দমনে পুলিশের কৌশল নিয়ে সমালোচনা করেন। তারা প্রকারান্তরে জঙ্গিবাদকেই মদদ দিচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘পয়লা বৈশাখে জনগণের মনে কোনো শঙ্কা দেখিনি। শঙ্কা ছিল আমাদের মনে, সরকারের মনে। রাত ১১টাতেও হাজারো মানুষের ঢল ছিল হাতিরঝিলে। আমরা তাদের বের করে দেইনি। কারণ, দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতির অবাধ চর্চার মাধ্যমে জঙ্গিবাদের শক্তি হারিয়ে যাবে, অপশক্তি স্থান পাবে না।’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, জঙ্গিবাদ একদিনে সৃষ্টি হয়নি। ৭৫-এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এবং ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তান ফেরত যোদ্ধারাই জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করে। আর এ জঙ্গিবাদ রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে। এটা একটা বৈশ্বিক সমস্যা। বিশেষ করে আকাশ সংস্কৃতি ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এর প্রভাব রয়েছে। তার সঙ্গে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রভাবও রয়েছে।
তিনি বলেন, যখন মধ্যপ্রাচ্যে আইএস-এর প্রভাব নিম্নমুখী তখন আমাদের দেশে তা উস্কে দিচ্ছে। এটা অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ইন্ধন। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার পরে এটার উস্কানি বেশি হয়েছে।
আছাদুজ্জামান মিয়া আরও বলেন, গত বছরের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে হামলা হয়েছে। সেখানে আমি ২০ মিনিটের মধ্যে যাই এবং বিভিন্ন অফিসারকে নিয়ে প্রথমে আর্জেন্টাইন নাগরিকসহ কয়েকজন বাংলাদেশীকে উদ্ধার করে আসার সময় বিস্ফোরণে আমাদের দুজন অফিসারকে হারাই। এরপর আমাদের অভিযানের ধরনে মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়। তারপর শুধু সাফল্যের ইতিহাস। কল্যাণপুর, সীতাকুন্ড, মিরসরাই, সিলেটসহ সারাদেশে সফলতার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
এরমধ্যে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সিলেটে র্যাবের আজাদসহ দুজন সহকর্মীকে হারাই। আমার জীবন দিয়ে মানুষের জীবনকে রক্ষা করি। কিন্তু দুঃখ যখন আমাদের অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। যারা প্রশ্ন তুলে তারা জ্ঞানপাপী। জেগে জেগে ঘুমায়। একজন জঙ্গি যখন সুসাইডাল ভেস্ট নিয়ে, কিংবা দশ কেজি বোমা বহন করে তখন কি করা।’
তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখে জনগণের মনে কোনো শঙ্কা দেখিনি। শঙ্কা ছিলো আমাদের মনে। সরকারের মনে। রাত ১১টায়ও হাজারো মানুষের ঢল ছিলো হাতিরঝিলে। আমরা তাদেরকে বের করে দিইনি। কারণ দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতির অবাধ পালনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের শক্তি হারিয়ে যাবে। এতে অপশক্তিও স্থান পাবে না। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ধর্মকে বিকৃতিভাবে উপস্থাপনে বিপত্তি ঘটে। মূলত ধর্মান্ধতা থেকেই মৌলবাদের সৃষ্টি। আর সেখান থেকে জঙ্গিবাদ। এটা নির্মূলে সামাজিকভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদক এই তিনটি সমস্যার মূলে হচ্ছে সমাজ। আমরা দেখেছি টেকনাফে এমন ব্যক্তি নাই যিনি ইয়াবা কোথায় বিক্রি হয় সে সম্পর্কে একটা শিশুও জানে। মূলত আমরা বেকারত্ব দূর করতে পারিনি বলেই তরুণরা মাদক ব্যবসার মতো ভয়ঙ্কর পথে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, তবে এটা শুধু প্রান্তিক শ্রেণির সমস্যা তাও নয়। এর মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পর্যন্ত আমরা মাদক নিয়ে ধরা পড়তে দেখেছি। জঙ্গিবাদেও উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেদের আমরা দেখি। তাই সন্ত্রাসীরা যাতে রাজনৈতিক প্রশ্রয় না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে সামাজিকভাবেও তাদের প্রতিহত করতে হবে।
কওমী মাদ্রাসা সনদের স্বীকৃতির সরকারি সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সরকার কওমী মাদ্রাসা স্বীকৃতি দিয়েছে। আমি এ সিদ্ধান্ত সমর্থন করি। দেশের ৬৪ হাজার গ্রামে একটি করে মাদ্রাসা থাকলেও ৬৪ মাদ্রাসা রয়েছে। এসব মাদ্রাসা থেকে বছরে ৬/৭ লাখ শিক্ষার্থী বের হয়। তাদেরকে পেশাগত ক্ষেত্রে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনলে স্বীকৃতি দিতে হবে। এখন যখন কওমীর সর্বোচ্চ ডিগ্রিকে মাস্টার্সের মান দেওয়া হল তখন সিলেবাসের উপরও সরকারের একটা নিয়ন্ত্রণ আসবে। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করে একটি ছেলে যা শিখে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সিলেবাসেও সেসব বিষয় কমবেশি অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ তৈরি হবে।
সেমিনারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব ড. মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ধর্মকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনে বিপত্তি ঘটে। মূলত ধর্মান্ধতা থেকেই মৌলবাদের সৃষ্টি। আর সেখান থেকে জঙ্গিবাদ। এটা নির্মূলে সামাজিকভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
দৈনিক আমার কাগজ নামের একটি পত্রিকা এই সেমিনারের আয়োজন করে। পত্রিকাটির সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি ও ফেনী পৌর মেয়র আলাউদ্দিনের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সালাউদ্দিন মাহমুদ, আইনজীবী ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন