মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

নামাজের দার্শনিক তত্ত্ব

| প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো. আব্দুল হামীদ নোহারী

\ দুই \
আল্লাহপাক এ কথাটিকে এভাবে এরশাদ করেছেন, আমি মানুষ ও জিন জাতিকে আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। সুতরাং তারা সর্ববস্থায় নামাজের মাধ্যমে খোদাঅন্ধ কারীমের অজ¯্র নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে, অতঃপর মাথা নত করে এবং যমীনের উপর সেজদায় পতিত হয়ে আবার করজোড়ে যাবতীয় ত্রæটি-বিচ্যুতির জন্য তওবা করে গোলামীর পরাকাষ্ঠ দেখায়।
অতএব নামাজ আদায়ের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো- বিনয়, নম্রতার মাধ্যমে মহান প্রভুর সান্নিধ্য লাভ করা যা দ্বারা নি¤েœাক্ত সার্থকতা অর্জিত হয়।
১. মসজিদভিত্তিক এক কেন্দ্রীভূত হওয়া।
২. ইমাম অর্থাৎ নেতা নিযুক্তির ব্যাপারে সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তিকে নেতারূপে নির্বাচন পদ্ধতি শিক্ষা করা।
৩. একই নেতার আনুগত্যের অভ্যাস গড়ে তোলা।
৪. একক নেতৃত্বের অনুকরণ ও অনুসরণের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।
৫. শৃঙ্খলাবদ্ধকরণ উদ্দেশ্যে এক ইমামের ইশারায় ওঠা-বসা করা।
৬. নেতার আনুগত্যকে অবশ্যরূপে মান্য করা।
৭. বংশ মর্যাদার তোয়াক্কা না করে যে কোন যোগ্য ব্যক্তি নেতারূপে নির্বাচন করলে তার আনুগত্যতা স্বীকার করা।
৮. পারিশ্রমিক ব্যাতিরেকে নিঃস্বার্থরূপে নেতার অনুকরণ ও অনুসরণ করা।
৯. সাম্য-মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বের নজির স্থাপন করা।
১০. অপূর্ব ত্যাগের নজির স্থাপন করা। সুতরাং যে আগে আসবে, সে আগে দাঁড়াবে আর যে পেছনে আসবে সে পিছনে দাঁড়াবে এতে কোন ধনী-দরিদ্র ও শরীফ আতরাফের মধ্যে ভেদাভেদ নেই।
সারকথা সবাই একই আল্লাহতায়ালার গোলামীতে ঐক্যবদ্ধ হওয়া, তা দ্বারা প্রমাণ করা হয় সবার প্রভু এক আল্লাহতায়ালা। তিনি এক, তিনি ব্যতীত আর কোন প্রভু নেই। তিনি যেমন এক, তেমনি সকল মুসলমানের নেতা এক। কেন্দ্র ছিল এক, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সবারই এক। কেবল এক, কথাবার্তা এক, সুরত এক, সেই একই মহান, মহান উদ্দেশ্যে লা-শরিক আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের ব্যতিব্যস্ত হয়।
এমন ধরনের প্রভু ভক্তরা যখন যেদিকেই অগ্রসর হতো, তখন খোদা প্রদত্ত সাহায্য ও শক্তি তাদের পেছনে লেগে যেত। এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেছেন, ‘ইন তানছুরুল্লাহা ইয়ানছুরুকুম’ অর্থাৎ তোমরা যদি আল্লাহর কাজে সাহায্য কর তখন আল্লাহতায়ালা তোমাদের সাহায্যে অগ্রসর হবেন। তা ব্যতীত আসমান ও জমিনের গুপ্তধন রতেœর ভাÐার খুলে দেন।
সত্যিকারভাবে নামাজ আদায়ের প্রতিদান
যে প্রক্রিয়ার নামাজ আদায় করার নির্দেশ সেই নিয়ম পদ্ধতিতে সত্যিকারভাবে আদায় করলে নি¤েœাক্ত প্রতিদানসমূহ পাওয়া যায়।
ক. যিনি ইমাম বা নেতা হন, তিনি আপন খরচ করে নিঃস্বার্থভাবে স্বীয় জীবন উৎসর্গ করে স্বীয় ইলম ও প্রজ্ঞানুযায়ী সকল ক্ষেত্রে এক অতুলনীয় নজির স্থাপন করেন। যিনি ইমাম হন, তিনি আখেরী নবী (সা.)-এর পবিত্র অন্তরের বীরত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের অনুপম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হন এবং স্বীয় যোগ্যতা অর্জনের জন্য মহীয়ান, গরীয়ান আল্লাহতায়ালা ব্যতীত অন্য কিছুরই পরোয়া করেন না। এমনকি কোন সম্পদের লোভ-লালাসায় লিপ্ত হয় না। এক অনন্য আদর্শবাদী ইমাম যখন কথা বলেন, তখন এমন ধরনের কথাই বলেন যা আল্লাহ ও রাসূল পছন্দ করেন এবং তার কথা দ্বারা ইমামের শ্রেষ্ঠত্বের যোগ্যতা প্রমাণিত হয় যা দ্বারা মুসলমানদের গৌরব বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। তৎসঙ্গে ইসলামের ইজ্জত-সম্মান ক্রমশ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এরপর দুনিয়ার বুকে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া উন্নত শির অহংকারীদের ধ্বংস অনিবার্য হয়ে যায়। এতে সর্বত্রই ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হয়। এমন ধরনের ইসলামের উপর পরম করুণাময়ের অজ¯্র বারিধারা বর্ষিত হতে থাকে। তাদের শানে পাক পরওয়াদিগার বলেছেন, ‘ওয়াকান হক্কান আলাইনা নাছরুম মোমেনীন’। অর্থাৎ এহেন গুণবিশিষ্ট মোমেনদের জন্য সাহায্য করা আমার জন্য অবশ্য কর্তব্য।
খ. মুসলিম সমাজের মধ্যে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে শৃঙ্খলাবোধ জাগ্রত হয়। তখন এমন সুশৃঙ্খল সম্প্রদায় কখনো ভিন্ন সম্প্রদায়ের পরাধীন হতে পারে না। এহেন সুশৃঙ্খল সম্প্রদায় যখন স্বাধীনতার অভিপ্রায়ে সম্মুখদিকে পা ওঠায়, তখন স্বাধীনতা তাদের পা চুম্বন করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন