শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাংলাদেশে শরিয়ত ত্বরিকত মিশ্রণে মধুর ইসলাম বিরাজ করছে ইনকিলাব সম্পাদক

ত্বরিকতের মাধ্যমে ওলি-আউলিয়ার ফয়েজ বরকত অর্জন সম্ভব -পীর ছাহেব মৌকারা

প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অন্যতম পুণ্যভূমি কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের মৌকারা দরবারের দুই দিনব্যাপী ইসালে সওয়াব মাহফিলের শেষদিন গতকাল বুধবার অলী-আউলিয়াপ্রেমী লাখো ভক্ত, আশেকান, মুরিদানের অভূতপূর্ব মিলনমেলায় সৃষ্টি হয় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ। মাহফিলে মৌকারা পীর ছাহেব আর অন্য ওলামায়ে কেরামগণের বয়ানের ফাঁকে ফাঁকে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আগত লাখো মুসল্লিয়ানের আল্লাহু আকবার আর জিকিরের ধ্বনীতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে নাঙ্গলকোটের জনপদ।
মাহফিলের শেষদিন বুধবার ধর্মীয় আলোচনায় বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ এএমএম বাহাউদ্দীন বলেন, ঈমান ও ইসলামের স্বার্থে আমরা আপসহীন। আর তাই মানুষ এখন ইসলামী চেতনায় জেগে উঠছে। সারা বিশ্বে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে। আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে। চীনে আল্লাহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর করে দিয়েছেন। সেখানেও মুসলমানরা জেগে উঠেছে। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ তাদের অর্থবিত্ত দিয়ে তরিক্বত বিরোধী ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে আজকে তাদের অবস্থা কী দাঁড়িয়েছে। আজকের বাংলাদেশে শরিয়ত ত্বরিকত মিশ্রণে মধুর ইসলাম বিরাজ করছে। এদিন বেশি দূরে নয়, এখানকার তরিক্বতপন্থি ইসলামী দল ও দরবারগুলোর ঐক্যের মধ্যদিয়ে ঈমান আকিদা ও ইসলামী মূল্যবোধসম্পন্ন একটি সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে এদেশে। বাংলাদেশে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী যেমন বাড়ছে, আয়তনও বাড়ছে। দেশ সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত প্রসঙ্গে ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, ভারতে প্রতি মুহূর্তে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে, হত্যার শিকার হচ্ছে, ধর্ষিতা হওয়ার আতঙ্কে থাকছে। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে এসব থেকে নিরাপদ রয়েছে। কারণ আমরা ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী। ধর্মীয় অনুশাসনে বিশ্বাসী। ইনকিলাব সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশের যুব তরুণ সমাজকে ড্রাগ দিয়ে শেষ করে দিচ্ছে ভারতীয়তরা। তাই আমাদের রাজনীতি, সমাজনীতি, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ইসলামী চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। ইসলামী জাগরণ সৃষ্টি করতে আলেম ওলামাদের ভূমিকা রাখতে হবে। মহানবী (সাঃ)-এর উম্মত হিসেবে আমাদেরকে মজবুত ঈমান ও আমলে অবিচল থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে দলাদলি রেশারেশি বন্ধ করে সুন্নিয়াতের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ইসলাম বিরোধী চক্রকে প্রতিহত করার জন্য ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। জমিয়াতুল মোদার্রেছীন প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, মাদরাসা শিক্ষদের বৃহত্তম অরাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মাধ্যমে মাদরাসা শিক্ষকরাই এদেশে ইসলামী ভাবধারা সমুন্নত রেখেছেন। দেশে আশি লাখ মাদরাসা শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৫ লাখ ছাত্রী রয়েছে। যারা ইসলামী মূল্যবোধ লালন করছে। তারাই ভবিষ্যতে যোগ্য মা হবে।
মৌকারা দরবারের বর্তমান গদ্দিনশীন পীর, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কুমিল্লার সভাপতি, আমীরুস সালেকীন আলহাজ্ব শাহ মুহাম্মদ নেছার উদ্দীন ওয়ালীউল্লাহী গুরুত্বপূর্ণ বয়ানে বলেন, ইসলাম মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব শিক্ষা দেয়। নামাজ যেমন বেহেশস্তের চাবি তেমনি আল্লাহর সাথে বান্দার নিবিড় সম্পর্কের একটি অন্যতম মাধ্যমও নামাজ। আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ)-এর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হলে জীবনের প্রতিটি স্তরে সুন্নিয়াতের আদর্শকে লালন করতে হবে। ত্বরিকা চর্চা করতে হবে। ত্বরিকতের মাধ্যমে ওলি-আউলিয়াগণের ফয়েজ ও বরকত অর্জন সম্ভব। মৌকারা পীর ছাহেব বয়ানে আরো বলেন, ইসলামের হকধারা প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাসুলে করীম (সা:) এর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য ঈমান মজবুত রেখে সকল মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। হাক্কানি আলেম ওলামায়েগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন অপশক্তি মুসলমানদের ক্ষতি করতে পারবে না। আর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসুল (সাঃ)-এর আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে সমাজ থেকে সকল অশান্তি, বিশৃঙ্খলা দূর হয়ে যাবে।
কুমিল্লার লাকসাম আসনের এমপি তাজুল ইসলাম বলেন, ওলী আউলিয়াদের দরবারে ধর্মপ্রাণ মানুষের বিচরণের উদ্দেশ্য একটাই। আর তা হচ্ছে মহান আল্লাহর রাস্তায় ঈমান ও আখলাক মজবুত করার জন্য। দ্বীনি শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে মৌকারার দারুচ্ছুন্নাত ওয়ালীয়া কমপ্লেক্স অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখে চলেছে। মাহফিলে নাঙ্গলকোট উপজেলা চেয়ারম্যান সামসুদ্দিন কালু বক্তব্য রাখেন। মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মৌকারার ছোট হুজুর আলহাজ মাওলানা আবদুল হালিম, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের যুগ্ম মহাসচিব ড. আলহাজ্ব মাহবুবুর রহমান, সহসভাপতি অধ্যক্ষ আলহাজ্ব আলী হোসাইন, কুমিল্লা আলীয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ আবদুল মতিন, মৌকারা দরবারের ছাহেবজাদা শাহ মুহাম্মদ মাসউদ, মৌকারা পীর ছাহেবের জামাতা মাওলানা মির্জা সায়েমুর রহমান বেগ, কুমিল্লা জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি আলহাজ মাওলানা আহসানুল করীম আল আযহারী, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সেক্রেটারি খাদেম ফিরোজ, দৈনিক বাংলার আলোড়ন সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
আজ সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে আখেরী মুনাজাত। মৌকারা পীর ছাহেব আমীরুস সালেকীন শাহ মুহাম্মদ নেছার উদ্দীন ওয়ালীউল্লাহী মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ, শান্তি, দেশের সমৃদ্ধি, অগ্রগতি কামনা করে আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
আনিসুর রহমান ৩ মার্চ, ২০১৬, ২:৪৩ এএম says : 0
আমরা সেই দিনের অপেক্ষায় আছি।
Total Reply(0)
তারেক মাহমুদ ৩ মার্চ, ২০১৬, ১১:০৪ এএম says : 1
হে আল্লাহ বাংলাদেশে তুমি ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করে দাও।
Total Reply(0)
Anower ৩ মার্চ, ২০১৬, ১১:০৪ এএম says : 0
Amin
Total Reply(0)
Tamim ৩ মার্চ, ২০১৬, ১১:০৬ এএম says : 1
ইসলামের হকধারা প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাসুলে করীম (সা:) এর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য ঈমান মজবুত রেখে সকল মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
Total Reply(0)
Habib ৩ মার্চ, ২০১৬, ১১:০৭ এএম says : 0
thanks a lot to the editor of Daily Inqilab for your brilliant speech
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন