রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

লোডশেডিং যাতনা শুরু

প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : গ্রীষ্ম মওসুম শুরু হতেই লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবারও দিনে দুই থেকে তিনবার বিদ্যুৎ চলে গেছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সূত্র জনায়, পর্যায়ক্রমে এই লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরো বাড়বে।
এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ এবার গ্রীষ্ম মওসুমে চাহিদা ও উৎপাদন সমন্বয়ে কার্যকর কোনো সমাধান খুঁজে পাচ্ছে না। বাড়তি চাহিদা মেটাতে এবারও সার কারখানাসহ বেশ কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপরও মূল সঙ্কট মিটছে না।
বিদ্যুৎ বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গ্রীষ্ম মওসুমের মার্চ থেকে মে-জুন পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ হাজার মেগাওয়াটে। স্বাভাবিক সময়ে বিদ্যুতের এ চাহিদা সাড়ে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার মেগাওয়াটে ওঠানামা করে। মওসুমের এ চার মাসে সেচে চাহিদা বাড়ে কম-বেশি দেড় হাজার মেগাওয়াট। স্বাভাবিক সময়ে গ্রাহক পর্যায়ে চাহিদার সঙ্গে এ চার মাসে বাড়ে আরো দেড় হাজার মেগাওয়াটের মতো।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বছরের অন্য সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বণ্টনে সমন্বয় ঠিক থাকছে। সমস্যা গ্রীষ্মে। গরমের তীব্রতায় গ্রাহকের পাশাপাশি ইরি-বোরো সেচে বাড়ে বিদ্যুতের চাহিদা। স্বাভাবিক সময়ের হিসাবে বছরের এ সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা সব মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ বিভাগের উৎপাদন ও বিতরণের এ পরিসংখ্যান সম্পর্কে দ্বিমত আছে বিশেষজ্ঞদের। তাদের মতে, সক্ষমতা আর উৎপাদন এক বিষয় নয়। পিডিবি যাই বলুক প্রকৃত উৎপাদন সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি হবে না। সরকারকে খুশি করতে উৎপাদনের বাড়তি এ তথ্য দিচ্ছে পিডিবি।
বিতরণ ব্যবস্থায় ত্রুটির কথা বলে দুর্বলতা আড়াল করতে চাইছে পিডিবিÑ এ অভিযোগও রয়েছে গ্রাহকদের। তারা বলছেন, রাজধানী ঢাকাসহ বড় কয়েকটি নগরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ মোটামুটি ঠিকঠাক থাকলেও অনেক জেলা শহর ও গ্রামে বিদ্যুৎ থাকছে না ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ১১ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (উন্নয়ন) প্রধান করে। সদস্যসচিব করা হয়েছে ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টার (এনএলডিসি)-এর মহাব্যবস্থাপককে। সদস্য করা হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সমন্বয়), পিডিবির দুই সদস্য উৎপাদন ও বিতরণ, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি দুই সদস্য-বিতরণ ও পরিচালন), পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক, ঢাকার দুই কোম্পানি ডেসকো ও ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে।
উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এ কমিটির প্রধান কাজ হবে বিতরণ কোম্পানির মধ্যে লোড বরাদ্দে সমন্বয় করে লোড ব্যবস্থাপনা করা। একই সঙ্গে সংস্থা বা কোম্পানির বিতরণ এলাকা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার সমাধান করা, কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা, গ্রিডের ত্রুটি দূর করতে পরামর্শ প্রদান, ন্যাশনাল লোড ডেসপাস সেন্টারের ব্যবস্থাপনা তদারকি করা, গ্রিড উপকেন্দ্র সরেজমিন পরিদর্শন ও উপকেন্দ্রের চাহিদার ভিত্তিতে আনুপাতিক হারে লোড বরাদ্দ করা, স্থানীয়ভাবে লোডশেডিংয়ের সময় প্রচার ও সে অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া।
উৎপাদন বাড়াতে দিনে অতিরিক্ত এক হাজার ২৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চেয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, দৈনিক ৯১৪ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস দেয়া সম্ভব হবে না। চাহিদার চেয়ে সাড়ে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট কম গ্যাস দিয়ে বাড়তি বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে পিডিবি। গতকালও পিডিবি চাহিদা মোতাবেক গ্যাস পায়নি পেট্রোবাংলার কাছ থেকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, চলতি গ্রীষ্মে খাদ্য উৎপাদনের স্বার্থে সেচকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এজন্য সবাইকে একটু কষ্ট করতেই হবে, একটু ধৈর্য ধরতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন