মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

ইতিহাসের উজ্জ্বল নক্ষত্র কাগতিয়া দরবারের প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম রা.

| প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রফেসর ড. মোঃ আবুল মনছুর : কর্ম, মর্ম ও প্রজ্ঞায়- কাগতিয়া আলিয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা খলিলুল্লাহ, আওলাদে মোস্তফা, খলিফায়ে রাসূল হযরত শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আন্হু; সমকালীন ইসলামী ইতিহাসে অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি ১৯২৩ সালে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার কাগতিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বারআউলিয়ার অন্যতম সদস্য সুলতান বখতেয়ার মাহি সাওয়ার (রা.)-এর মাধ্যমে তাঁর বংশধারা প্রিয় নবী (স.)-এর সাথে মিলিত হয়। তাঁর শিক্ষা, ব্রতি, কর্মনিষ্ঠা ও সুনিপুণ জীবনধারা থেকে পৃথিবীর সকল মানুষ প্রেরণা নিতে পারে। সময়কে কত বেশি গুরুত্ব দিতেন তা উপলব্ধি করা যাবে তাঁর যাপিত দিনের একটি দিন বিশ্লেষণ করলে। গোলাপের পাপড়ির মতো স্তরে স্তরে সজ্জিত ছিল তাঁর দিনলিপি। সমান তালে চলত পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ভাবনা। চিন্তার বাইরে রাখেননি বিশ^ সমাজকেও। শত ব্যস্ততার মাঝেও ক্ষণিকের জন্যও উদাসী হতেন না ইবাদত-রিয়াজতে। বরং নিশি জাগরণ ও মারেফাত সাধনায় তিনি ছিলেন অতুলনীয়। মানুষের প্রতি ভালবাসা, নিঃস্ব-দরিদ্রদের প্রতি মহানুভবতা ছিল চোখে পড়ার মত। অমুসলিমরাও বাদ যেত না তাঁর স্নেহাশীষ থেকে।
শৈশবেই তিনি পিতৃ-মাতৃ হারা হন। পাঁচ-ছয় বছরের এ এতিম শিশুর জীবন শুরু এক করুণ কষ্টের মধ্য দিয়ে। এরপরেও পড়াশোনার প্রতি ছিল তাঁর প্রবল আগ্রহ। বড় ভাইয়ের আদেশে একদিন মেষ চড়াতে যান। মেষ পালের দিকে তাঁর লক্ষ্য নেই; আনমনে বসে আছেন জমির আলের ধারে। মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে দেখা হল আল্লামা রূহুল আমিন (রহ.)-এর সাথে। উদাসী চেহারায় বসে থাকা শিশুটিকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কী হয়েছে বাবা? তিনি বললেন- আমার মন চায় পড়াশোনা করতে কিন্তু আমার ভাই আমাকে মেষ চড়াতে পাঠিয়েছেন। আল্লামা রূহুল আমিনের মায়া হল। তিনি ভর্তি করিয়ে দিলেন নিজ প্রতিষ্ঠিত কাগতিয়া মাদ্রাসায়। দাখিল, আলিম শেষ করে ভর্তি হলেন চট্টগ্রাম দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসায়। চলছে নিরবচ্ছিন্ন জ্ঞান সাধনা। অর্জন করলেন ফাজিল, কামিল তথা একাডেমিক সর্বোচ্চ ডিগ্রী মমতাজুল মুহদ্দেসীন। কাগতিয়া কামিল এমএ মাদ্রাসায় ১৯৪৯ সালে তিনি অধ্যাপনা জীবন শুরু করেন। তাঁর অসাধারণ মেধা, দায়িত্বশীলতা ও প্রশাসনিক দূরদর্শিতায় মুগ্ধ হয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ১৯৫৭ সালে তাঁকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেন।
ছাত্র জীবনেই তিনি মারেফাতের জ্ঞান অর্জনের তীব্র আকাক্সক্ষা অনুভব করেন। ১৯৪৫ সালে কুত্বুল এরশাদ হযরত হাফেজ মুনির উদ্দিন (রা.)-এর নিকট থেকে তরিক্বতের দীক্ষা গ্রহণ করেন। মারেফাত সাধনায় ছিল তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা। শিষ্যের কামালিয়ত উপলব্ধি এবং সুস্বপ্নের মাধ্যমে গাউছে পাক আব্দুল কাদের জিলানী (রা.)-এর ইশারায় ১৩৭৩ হিজরিতে স্বীয় পীর ছাহেব কর্তৃক খেলাফত প্রাপ্ত হন। তাঁর ইবাদত ও রেয়াজতের মূল ভিত্তি ছিল এখলাস ও প্রিয়নবীর প্রতি ভালবাসা। নবীজীর আদর্শের বাইরে তিনি একটি কদমও ফেলতেন না। তাইতো তিনি লাভ করেছেন তাজে গাউছিয়্যত ও খেলাফতে রাসূলুল্লাহ।
তাঁর পবিত্র অন্তরে মাতৃভূমির প্রতি ছিল প্রগাঢ় মমতা। নির্মোহ দেশপ্রেম আর জাতির কল্যাণ চেতনায় কাগতিয়া এশাতুল উলুম কামিল এমএ মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম মহানগর ক্যাম্পাস, আল-ফজল মুনিরী হিফজুল কুরআন (টরেন্টো, কানাডা), আল-ফজল মুনিরী গাউছুল আজম তাহফিজুল কুরআন (ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম)সহ দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠা করেছেন বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, পাঠাগার ও আত্মিক শিক্ষা কেন্দ্র কাগতিয়া আলিয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফ। গঠন করেছেন অরাজনৈতিক আধ্যাত্মিক সংগঠন মুনিরীয়া যুব তবলিগ কমিটি বাংলাদেশ। দেশ-বিদেশের অগণিত যুবক তাঁর সান্নিধ্য লাভ করে নিজেদের সত্যিকারের দেশপ্রেমিক তথা ইসলাম নির্দেশিত পথে পরিচালিত করছে। এই মহান মনীষীর অপর একটি গুণ ছিল- সাহিত্য সাধনা। তিনি তাসাউফের ২০টি মূল্যবান কিতাব রচনা ও পৃষ্ঠপোষণ করেন। সরল জীবনযাপনে অভ্যস্ত এ মনীষী তাঁর একমাত্র খলিফা হযরতুলহাজ্ব আল্লামা অধ্যক্ষ শায়খ ছৈয়্যদ মুহাম্মদ মুনির উল্লাহ আহমদী মাদ্দজিল্লুহুল আলীর মাধ্যমে নৈতিক, আত্মিক ও চেতনার যে দ্যুতি আজও জ¦ালিয়ে রেখেছেন ইনশাল্লাহ চিরকালই তা জাগরুক থাকবে মানুষের অন্তরে অন্তরে।
এ মনীষীর বর্ণাঢ্য জীবনাবসান হয় গত ১৪৩৭ হিজরি ২৬ রজব পবিত্র মেরাজুন্নবী (স.) তাৎপর্যময় দিনের বরকতময় সময়ে। তাঁর এই ঐতিহাসিক বেছাল শরীফকে কোরআন-হাদিসের আলোকে স্মরণ ও বরণ করতে ২৬ রজব ১৪৩৮ হিজরি, ২৪ এপ্রিল ২০১৭ সোমবার চট্টগ্রামের রাউজান কাগতিয়া আলিয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মেরাজুন্নবী (স.) মাহফিল ও সালানা ওরছে হযরত গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আন্হু উপলক্ষে ইছালে ছওয়াব মাহফিল। আল্লাহ, রাসূল ও গাউছুল আজমের সন্তুষ্টি অর্জনে বরকতময় এ ওরছে পাকে শামিল হওয়ার জন্য মুসলিমদের প্রতি রইল দ্বীনি দাওয়াত।
লেখক: সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশন

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন