সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : বিএনপি থেকে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত কুসিক মেয়র মনিরুল সাক্কুর পর গ্রেফতার আতঙ্ক ভর করেছে বেশ ক’জন নির্বাচিত কাউন্সিলরের ওপর। আতঙ্কে থাকা এসব কাউন্সিলররা বিএনপি ও জামায়াত ঘরানার। দুদকের মামলায় নবনির্বাচিত মেয়র সাক্কুর বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর তিনি আত্মগোপনে থেকেই জামিন নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কয়েকদিন আগে মেয়র সাক্কুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে বিএনপি ও জামায়াত ঘরানার নির্বাচিত কাউন্সিলররা অনেকটা ঘাবড়ে যান। এসব কাউন্সিলররা তখন থেকেই গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কা করছিলেন। অবশেষে নির্বাচিত কাউন্সিলর জামায়াতের একরাম হোসেন বাবুকে শুক্রবার ভোররাতে গ্রেফতারের পর আশঙ্কায় থাকা কাউন্সিলররা গ্রেফতার এড়াতে কেউ আত্মগোপনে কেউ সাবধানে পা ফেলছেন।
সদ্য শেষ হওয়া কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত বেশ ক’জন কাউন্সিলর প্রার্থী বিভিন্ন ধারার একাধিক মামলা নিয়ে জয়লাভ করলেও গ্রেফতার আতঙ্কে তারা আত্মগোপনে রয়েছেন। মেয়র সাক্কুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর বিএনপি ও জামায়াত ঘরানার বেশ ক’জন কাউন্সিলর প্রার্থী তাদের নামে চলমান থাকা বিস্ফোরক, নাশকতাসহ বিভিন্ন ধারার একাধিক মামলায় নতুন করে গ্রেফতারি পরোয়ানা বা আগের জামিন বাতিল হওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন। কেবল তাই নয়, কেউ কেউ নতুন মামলায় আটক হওয়ারও আশঙ্কা করেছিলেন। আর এমন আশঙ্কা থেকে অনেকেই নিজেদের থাকা-চলাফেরায় বেশ সাবধানতা অবলম্বন করছিলেন। কিন্তু ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত জামায়াত ঘরানার কাউন্সিলর একরাম হোসেন বাবু শুক্রবার ভোররাতে নগরীর ঠাকুরপাড়ার বাড়ি থেকে গ্রেফতার হওয়ার পর বিএনপি ও জামায়াত ঘরানার অন্যসব নির্বাচিত কাউন্সিলররা গা ঢাকা দিয়েছেন। কাউন্সিলর বাবুর গ্রেফতারের বিষয়ে কোতয়ালী থানা পুলিশ জানিয়েছেন, নারী নির্যাতন, সন্ত্রাসবিরোধী, বিশেষ ক্ষমতা, দ্রæত বিচার ও বিস্ফোরক আইনে ১৫টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে এবং বৃহস্পতিবার রাতে নতুন করে আরেকটি মামলা হয়েছে। নতুন মামলা ও আগের গ্রেফতারি পরোয়ানার আলোকেই কাউন্সিলর বাবুকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে ১ নম্বর ওয়ার্ডে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত কাউন্সিলর জামায়াতের কাজী গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী, বিশেষ ক্ষমতা, দ্রæত বিচার ও বিস্ফোরক, অস্ত্র আইনে মোট ১৯টি মামলা রয়েছে। এসব মামলার ১১টি বিচারাধীন, তিনটি স্থগিত, দুটি তদন্তানাধীন এবং তিনটিতে তিনি খালাস পেয়েছেন। তবে নির্বাচনী প্রচারণার সময় কিবরিয়াসহ প্রায় ২৯ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতারের আশঙ্কায় কিবরিয়া বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত জামায়াত ঘরানার কাউন্সিলর মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী, বিশেষ ক্ষমতা, দ্রæত বিচার ও বিস্ফোরক আইনে ২৫টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় মোশারফ ইতিপূর্বে জেল খেটেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে নতুন করে গ্রেফতারের আশঙ্কায় সাবধানে চলাফেরা করছেন এ কাউন্সিলর। ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর শাখাওয়াত উল্লাহ শিপনের দুই মামলার একটি বিচারাধীন। আরেকটি থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। তিনিও গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত নির্বাচিত কাউন্সিলর জাকির হোসেনের নামে সন্ত্রাস বিরোধী ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৮টি মামলা রয়েছে। তিনিও গ্রেফতার আতঙ্কে খুব একটা জনসম্মুখে আসছেন না। এছাড়াও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি ঘরানার কাউন্সিলর সেলিম খান এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর সাইফুল বিন জলিলের মনেও মামলা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকেই বলছেন এটি মামলা সংক্রান্ত বিষয়। সেখানে আইন তার নিজের গতিতেই চলছে। অন্যদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, কুসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এবং ওই দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীর কাছে পরাজিত হওয়ার রেশই গ্রেফতার আতঙ্কের জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন