মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

নামাজের দার্শনিক তত্ত্ব

| প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো. আব্দুল হামীদ নোহারী

\ তিন \
অতীতের ইসলামের ইতিহাস এর জ্বলন্ত প্রমাণ। এহেন সম্প্রদায় যদিও দেখতে খুবই সাদাসিধে, আত্মভোলা ও দুর্বল মনে হয়, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে অসাধারণ বীরত্বের অধিকারী হয়ে মানুষকে স্তম্ভিত করে দেয়। যদিও ইতিপূর্বে বেকারত্বের গ্লানি তাদের মাথার উপর ছিল কিন্তু কর্মক্ষেত্রে তারা কর্মী শ্রেণীভুক্ত হয়ে নতুন পথের দিশারীরূপে নিত্যনতুন পথের সন্ধান দেখিয়ে দিয়েছে। যদিও তারা একদিন সম্বলহীন নিঃস্ব হয়ে ভবঘুরের ন্যায় অসহায় যাযাবরের ন্যায় জীবন অতিবাহিত করতো। তাদের শানে আল্লাহ এরশাদ করেছেন (সূরা মায়েদা, ৭ম রুকু), যদি তারা আল্লাহতায়ালার অবতীর্ণ তাওরাত ও ইঞ্জিলকে এবং তাদের উপর নাজিলকৃত কিতাবকে দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠিত করে, তবে তাদের উপর ও নিচ থেকে অগণিত খাদ্য সম্ভার পেয়ে যায়।
নামাজ হলো বাদশাহী সালাম
বাস্তবে নামাজ হলো বাদশাহী সালাম, যে কোনো ব্যক্তি ইহজগতে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার রাজত্বে বসবাস করে বাদশাহী সালাম থেকে বিরত থাকে। যে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে আল্লাহতায়ালার বিদ্রোহী এহেন বিদ্রোহী জীবন একদিন না একদিন অবসান ঘটবেই।
এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি বিদ্রোহিতার অবসান না ঘটে, তবে শেষ পর্যায়ে তাকে চিরস্থায়ী কয়েদখানায় ফেরত হতে বাধ্য।
কয়েদখানার জীবনযাপন প্রসঙ্গে
কয়েদখানার জীবনযাপন প্রসঙ্গে আল্লাহপাক এরশাদ করেছেন, যা আব্দুর রহমান বিন আমর বিন আছ (রা.) নবী করীম (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, উক্ত হাদিসে বর্ণিত আছে যে, একদিন নবী করিম (সা.) নামাজ সম্পর্কে আলোচনা করেছিলেন, যে ব্যক্তি নামাজের যথাবিহিত হেফাজত করবে তার জন্য এই নামাজ কিয়ামতের দিন আলোকময় হবে। উক্ত নামাজ তার ঈমানের দলিলরূপে প্রমাণিত হবে। তা দ্বারা সে নাজাতপ্রাপ্ত হবে।
আর যে ব্যক্তি এর হেফাজত করবে না, তার জন্য কোনো আলো থাকবে না এবং ঈমানের দলিল প্রমাণিত হবে না। এরপর নামাজপ্রাপ্ত হবে না। কিয়ামতের দিবস সে কারুন, ফিরআউন ও হামান এবং উবাইবিন খালফের সঙ্গে দোযখে গমন করবে (আহমদ দায়েমী বায়হাকী)।
হযরত জাবের থেকে বর্ণিত হাদিস, নবী করীম (সা.) এরশাদ করেছেন যে, নামাজ পরিত্যাগকারী কাফের শ্রেণীভুক্ত। অর্থাৎ যে ব্যক্তি নামাজ ত্যাগ করে, সে যেন কাফেরদের দলভুক্ত হলো।
হযরত আবুজর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস, তিনি বলেছেন, আমাকে আমার বন্ধুবর নবী (সা.) উপদেশ দিয়েছেন, কোন অবস্থাতেই আল্লাহর সঙ্গে শরিক করো না এবং ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ত্যাগ করো না। যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ত্যাগ করলো, সে ব্যক্তির জন্য কোন প্রকার জিম্মাদারকারী নেই। অতঃপর শরাব পান করো না। কেননা, এটা গোনাহের চাবিকাঠি। ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সত্যিকার যুগে যুগশ্রেষ্ঠ মুসলিম জনগণ যতদিন সত্যিকাররূপে যথারীতি নামাজকে কায়েম করেছে ততদিন পর্যন্ত পৃথিবীর কোন পরাশক্তিই তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারনের সাহস করতে পারেননি। নামাজের বৈশিষ্ট্যতা তাদের এমন সুশৃঙ্খল করেছিল যে, সব ক্ষেত্রেই একই নেতার নির্দেশে একই ইমামের পেছনে আত্মহারা হয়ে সেজদায় অবনত হতেন, তখন মহান প্রভুর অজ¯্র নিয়ামত বর্ষিত হতো। রাজা, বাদশাহ থেকে চাকর-বাকর পর্যন্ত সবাই একই কাতারে একই প্রভুর সান্নিধ্যে দাঁড়িয়ে যেত, তাদের মধ্যে তখন কোন প্রকার ভেদাভেদ থাকতো না। অভিজাত ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রে যদি কোন রোগী রোগারোগ্য না হয়, তবে এর দোষ ডাক্তারের নয় বরং রোগী ডাক্তারের পরামর্শানুযায়ী যথাযথ ওষুধ ব্যবহার করতে পরেনি। দার্শনিক কবি আল্লামা ইকবাল এ কথার উপর ভিত্তি করে গেয়েছেন, বর্দন জগতে আযানের পদ্ধতি রয়েছে কিন্তু বেলাল (রা.)-এর রুহানী আযান বিদ্যমান নেই। জগৎজুড়ে দর্শন শাস্ত্র রয়েছে বটে কিন্তু ইমাম গাজ্জালী (র.)-এর দার্শনিক তত্ত¡ নেই বললেই চলে। দুনিয়াশুদ্ধ মসজিদে মুসল্লি নেই, অর্থাৎ হেজাজী গুণাগুণ বিশিষ্ট নামাযী কেউই বিদ্যমান নেই। সর্বত্র আওয়াজ হচ্ছে কোথায়ও মুসলমান নেই। যারা আছে শুধুু নামকাওয়াস্তে মুসলমান আছে। মহান লীলাময়ের অপূর্ব লীলাখেলা এহেন নামাজের মধ্যে নিহিত রয়েছে। কেননা, মানুষ যখন তার তনুমন বিকিয়ে স্রস্টার সামনে নতজানু হয়ে কাকুতি-মিনতি করতে থাকে তখন অপূর্ব ভাবধারা তার দেহ ও মনের মধ্যে সৃষ্টি হয়, তখন করুণাময়ের অশেষ করুণারাশি তার উপর বর্ষিত হতে থাকে। বিশ্ব স্রষ্টার অজস্র নিয়ামতের কথা তার মানসপটে জাগরিত হয় যার ফলে স¦াভাবিক গতিতে নয়নদ্বার থেকে অশ্রæধারা বহির্গত হতে থাকে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন