মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

কুরআন ও বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সময় ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব

| প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান

\ এক \
আল্লাহতায়ালার অসংখ্য নিয়ামতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান একটি হলো সময়। মহাগ্রন্থ আল কুরআন ও হাদীসের বিভিন্ন স্থানে নিয়ামতটির যথার্থ মূল্যায়নের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কেননা, সময়ের যথাযথ মূল্যায়নও ব্যবস্থাপনা ছাড়া মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্ভব নয়। ইসলামী শরীআত এ কারণে সময় ব্যবস্থাপনাকে মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করেছে। ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে সময়, সময়ের গুরুত্ব, সময় ব্যবস্থাপনা, মানুষের উভয় জীবনে সফলতার জন্য সময় ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব ও পদ্ধতি আলোচনার উদ্দেশ্যে অত্র প্রবন্ধটি প্রণীত হয়েছে। প্রবন্ধটি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বর্ণনা ও বিশ্লেষণমূলক পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। আলোচ্য গবেষণাকর্ম থেকে প্রমাণিত হয়েছে, সমসাময়িক সময় ব্যবস্থাপনা পরিভাষাটির মূল কথা হয়েছে। আলোচ্য ইসলাম প্রদান করেছে। ইসলাম নির্দেশিত যৌক্তিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে সময় ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন হলে মানুষের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত হতে পারে। মহান আল্লাহ তাঁর উত্তম সৃষ্টি মানুষকে অফুরন্ত ও অগণিত নিয়ামত দ্বারা পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। তিনি এসব নিয়ামতের ব্যবহার ও উপভোগের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন। এর ভিত্তিতেই মানুষকে এসব নিয়ামত ব্যবহার করতে হয় এবং পরকালে সে সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে।
মহান আল্লাহ অফুরন্ত নিয়ামতরাজির মধ্যে সময় হচ্ছে অন্যতম। নিশ্চয়ই সময়, দিন, রাত্রির সমন্বিত রূপ। সময় শব্দটি তিন অক্ষরের ছোট শব্দ হলেও এর ব্যাপ্তিকাল অনেক বড়। সৌর বছরে ৩৬৫ দিন আর চন্দ্র বছরে ৩৫৪ দিন। ঘণ্টার হিসাবে ২৪ ঘণ্টা এবং মিনিটের হিসাবের দিক দিয়ে ১৪৪০ মিনিট। এ সময় হতে এক ঘণ্টা বা এক মিনিট চলে যাওয়া মানে প্রকৃত পক্ষে জীবনের একটা মূল্যবান অংশ কমে যাওয়া। এ কারণে সময়ের যথাযথ ব্যবহার একান্ত অপরিহার্য। সময়ের সমষ্টিই জীবন। মানুষ তার দুনিয়ার জীবন কীভাবে অতিবাহিত করেছে আখিরাতে সে হিসাব প্রদান করতে হবে। এ কারণে সময়ের সদ্ব্যব্যবহারের জন্য এর যথার্থ ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। এ প্রয়োজনীয়তাকে সামনে রেখেই জন্ম হয়েছে সময় ব্যবস্থাপনা পরিভাষার।
বর্তমানে উন্নয়ন চিন্তার ক্ষেত্রে মানবসম্পদ উন্নয়ন ধারণাটি ব্যাপকভাবে আলোচিত। কেননা, সব ধরনের চিন্তার মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মানবসম্পদ। তাকে কেন্দ্র করেই সব ধরনের উন্নয়ন চিন্তা পরিচালিত হয়। এ উন্নয়ন চিন্তার স্থায়িত্ব ও কার্যকারিতার জন্য সময় ব্যবস্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচিত। ইসলাম মানুষের সার্বিক কল্যাণ, চিন্তা ও পরকালীন সুখ-সমৃদ্ধির বিষয় সামনে রেখে মানুষকে সময়ের গুরুত্ব অনুধাবন, এর সদ্ব্যবহার ও ফলপ্রসূ ব্যবস্থাপনার নির্দেশ প্রদান করে। আরবিতে সময়ের প্রতিশব্দ ওয়াক্তুন। এর বহুবচন আওক্বাতুন। ইংরেজিতে সময়ের প্রতিশব্দ ঞরসব, ঢ়বৎরড়ফ, যড়ঁৎ। সময় বা কাল একটি পুরাতন পরিভাষা। তা দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন নির্দিষ্ট মেয়াদে নানা ঘটনার অতিক্রমকে বোঝানো হয়। এ কারণে এ সময় থেকে যা অতিক্রান্ত হয় তা আর কখনো ফিরে আসে না। সময় হচ্ছে এই সংক্ষিপ্ত দুনিয়াতে মানুষের প্রধান সম্পদ। এটা তার আয়ূষ্কালের সংক্ষিপ্ত রূপ এবং তার কাঁধে একটা বড় দায়িত্ব। যদি সে সময়ের দ্বারা উপকৃত হয়, তাহলে সে তার উত্তম প্রতিফল পেল। আর যদি সে তার কাঁধে সময় নামক অর্পিত বস্তুর আমানত ও দায়িত্ব পালনে খেয়ানত করে, তাহলে সে দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। Time is a measure in which events can be ordered from the past through the present into the future, and also the measure of durations of events and the intervals between the (mv.)
সময় হলো একটি মানদন্ড, যেখানে ঘটনাসমূহ অতীত থেকে বর্তমান হয়ে ভবিষ্যতের পানে বা অতীত বর্তমান ভবিষ্যতে সন্নিবেশ করা যায় এবং ঘটনাসমূহের ব্যাপ্তিকাল ও তাদের মধ্যকার বিরামকালের ও পরিমাপক। মানবজাতির জীবন পরিচালনার আদর্শ গাইডলাইন মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে সময় অপচয় ও অনর্থক কাজে ব্যয় করার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এমনকি আল্লাহতায়ালা সময় বোঝানোর জন্য কুরআনে অনেক প্রতিশব্দ ব্যবহার করে এর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, তিনি সূর্যকে করেছেন তেজোদ্দীপ্ত, আর চন্দ্রকে করেছেন আলোকময়। আর তার (হ্রাস-বৃদ্ধির) মানযিলসমূহ সঠিকভাবে নির্ধারণ করেছেন, যাতে তোমরা (এ নিয়ম দ্বারা) বছরের গণনা এবং দিন তারিখের হিসাবটা জানতে পার; (আসলে) আল্লাহতায়ালা যে এসব কিছু সৃষ্টি করে রেখেছেন (তার) কোনটাই তিনি অনর্থক সৃষ্টি করেনটি; যারা (সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে) জানতে চায় তাদের জন্যে আল্লাহতায়ালা তাঁর নির্দেশগুলোকে সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করেন।
আল্লাহতায়ালা আরো বলেন : কালের শপথ। মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে ডুবে আছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের অনেক স্থানে তা বুহ সৃষ্টিকে নিয়ে কসম করেছেন, এতে এগুলোর মর্যাদা অনেক বেড়ে গেছে। তেমনি সময় নিয়ে কসম করায় এটি প্রত্যেক মানুষের জন্য কতগুণ গুরুত্বপূর্ণ তা সহজেই অনুমেয়। আল্লাহতায়ালা আরো বলেন : আমি রাত আর দিনকে দুটো নিদর্শন বানিয়েছি। আমি রাতের নিদর্শনকে জ্যোতিহীন করেছি, আর দিনের নিদর্শনটিকে করেছি আলোয় উজ্জ্বল, যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে পার। আর যাতে বছরের সংখ্যা ও হিসাব জানতে পার; আমি সকল বিষয় বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে দিয়েছি। সময়ের সাথে রয়েছে হিসাববিজ্ঞান (Accounting) ও জ্যোতিবিদ্যার (অংঃৎড়হড়সু) অনন্য সম্পর্ক। কুরআনে সময়ের কথা উল্লেখ করতে যেয়ে আল্লাহতায়ালা একাধিক স্থানে এই দুই জ্ঞানের কথা উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহতায়ালা বলেন : আর তিনি দিবা রাত্রিকে পরস্পরে অনুগামী করেছেন। যে উপদেশ গ্রহণ করতে চায় অথবা কৃতজ্ঞ হতে চায় তার জন্য। আল্লাহতায়ালা আরো বলেন : তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে তোমাদের কাজে লাগিয়ে রেখেছেন, তারা অনুগত হয়ে নিজ নিজ পথে চলছে। আর তিনি রাত ও দিনকে তোমাদের কাজে লাগিয়ে রেখেছেন। আল্লাহ আরো বলেন : সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চন্দ্রের নাগাল পাওয়া এবং রজনীর পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম করা এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে চলছে। আল্লাহ আরো বলেন : নিশ্চয়ই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃজনে এবং দিবস রাত্রির পরিবর্তনের জ্ঞানবানদের জন্যে স্পষ্ট নির্দেশাবলী রয়েছে। আল্লাহ আরো বলেন : আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে আবর্তিত করে থাকি। আল্লাহ আরো বলেন : আল্লাহ দিবস ও রাত্রির পরিবর্তন ঘটান, এতে শিক্ষা রয়েছে অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্নদের জন্য।
আল্লাহ আরো বলেন : সূর্য ও চন্দ্র নির্ধারিত হিসাবের অধীনে। আল্লাহ আরো বলেন : তারা তোমাকে নতুন চাঁদসমূহ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করছে। তুমি বল, এগুলো হচ্ছে জনসমাজের ও হজের সময় নিরূপক...। আল্লাহ আরো বলেন : মানুষের উপর অন্তহীন মহাকালের এমন এক সময় কি এসেছিল, যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিল না। আল্লাহ আরো বলেন : তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রজনী, দিবস, সূর্য এবং চন্দ্রকে; আর নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তাঁরই হুকুমে; অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন। আল্লাহতায়ালা মানুষকে সময়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বোঝানোর জন্য আল-কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় সময়ের কসম করেছেন। যেমন : শপথ রজনী, যখন তা আচ্ছন্ন হয়ে যায়, শপথ দিনের, যখন তার আলোকিত হয়। আল্লাহ আরো বলেন : শপথ ফজরের, শপথ দশটি রাতের। আল্লাহ আরো বলেন : সকালের উজ্জ্বল আলোর শপথ, রাতের শপথ যখন তা হয় শান্ত নিঝুম। মহান আল্লাহ কোন তুচ্ছ বিষয়কে নিয়ে শপথ করেন না। আর তার সময়কে নিয়ে কসম করাতে সময়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। মহানবী (সা.) সময়কে গুরুত্ব দিতে এবং একে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে অনেক তাকিদ দিয়েছেন। এমনকি তিনি সর্তক করে দিয়েছেন, প্রতিটি মানুষকে সময়ের হিসাব কিয়ামতের দিন দিতে হবে। তিনি আরো বলেন : কিয়ামতের দিন কোন বান্দা চারটি প্রশ্নের উত্তর না দেয়া পর্যন্ত সামনে যেতে পারবে না- সে তার জীবনকালে কোন কাজে ব্যয় করেছে, তার যৌবনকাল কোথায় ক্ষয় করেছে, তার সম্পদ কোথা থেকে আয় করে কোথায় ব্যয় করেছে এবং তার অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী সে আমল করেছে কি না। উল্লিখিত হাদীসের চার বিষয়ই সময়ের সাথে সম্পর্কিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
মো. শফিউদ্দীন ২৫ মে, ২০১৭, ২:৫৬ পিএম says : 0
আমি পড়ে অনেক বিষয়ে অবগত হলেম এবং উপকৃত হলেম।
Total Reply(0)
মালিহা নামলাহ ১৬ নভেম্বর, ২০১৮, ৬:৪২ পিএম says : 0
কুরআনের আয়াতগুলোর সাথে সূরার নাম ও আয়াত সংখ্যা যুক্ত করে দিলে ভালো হয়।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন