শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনে উদ্বিগ্ন যুক্তরাজ্য অ্যালিসন ব্লেইক

প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রত্যেকটি ঘটনার সুষ্ঠু ও স্বাধীন তদন্ত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নবনিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেইক। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্য এ দেশে টেকসই গণতন্ত্র দেখতে চায় বলেও জানান তিনি। গতকাল বুধবার রাজধানীর বারিধারাস্থ ব্রিটিশ ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ব্লেইক। ব্রিটিশ হাইকমিশন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ডিএফআইডি) বাংলাদেশ প্রধান সারাহ কুক এবং ডেপুটি হাইকমিশনার মার্ক ক্লেটনও উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার হিসেবে গত মঙ্গলবার প্রেসিডেন্টের কাছে পরিচয়পত্র দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেন ব্লেইক। গতকালই তিনি ঢাকায় ব্রিটিশ ক্লাবে প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে, তা নিয়ে তাদের উদ্বেগ আছে। এখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে কর্মদক্ষতা বাড়ানোর ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা রয়েছে। তবে কারও বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন বা কারও কাজের প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন থাকলে তারা তাদের সহযোগিতা করেন না।
ব্লেইক বলেন, গণমাধ্যমে এখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ সম্পর্কে তিনি অবগত। কাজেই তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে, তার প্রতিটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত।
সম্প্রতি ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করতে বারবার তাগিদও দিয়েছে দেশটি।
এ ক্ষেত্রে সবশেষ অগ্রগতি কী এবং পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ঢাকা-লন্ডন রুটে ফ্লাইট চলাচল বিঘিœত হবে কি না, জানতে চাইলে ব্লেইক বলেন, শারম আল শেখ থেকে রাশিয়া যাওয়ার পথে একটি রুশ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর যুক্তরাজ্যে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালিত হয় এমন বেশ কয়েকটি দেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারে তারা তাগিদ দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সহযোগিতা যথেষ্ট ভালো। এতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হচ্ছে। প্রসঙ্গত, মিসরের বিমান দুর্ঘটনার পর ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ২০টি দেশের ৩৮ বিমানবন্দরকে তাদের নিরাপত্তা বাড়াতে বলেছে। যার একটি ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর। এই ৩৮টি বিমানবন্দর থেকে লন্ডনে সরাসরি বিমান যোগাযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি কীভাবে দেখেন, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ব্লেইক বলেন, কমনওয়েলথভুক্ত দেশ হিসেবে দুই দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে। সাম্প্রতিক অতীতে বাংলাদেশে নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে তাদের যে উদ্বেগ ছিল, সেটি গোপন করার কিছু নেই। কারণ, ওই নির্বাচনে অধিকাংশ জনগণ ভোট দেয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
তিনি বলেন, স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে তারা মন্তব্য করে না। তারপরও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচন যেমন অতীতের তুলনায় শান্তিপূর্ণ ছিল, তেমনি হস্তক্ষেপও কম ছিল। বিরোধী দলও নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।
ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সব পর্যায়ের নির্বাচনে সব পক্ষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার ব্যাপারে যুক্তরাজ্যের সহায়তা থাকবে বলে উল্লেখ করেন ব্লেইক। তিনি বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে সবার অংশগ্রহণ থাকা উচিত। কেননা, এটি একটি দেশের জন্য স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আনে।
যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার বলেন, দুই দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য কাজ করা হবে তার প্রথম অগ্রাধিকার। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানো, উন্নয়ন কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া, শিক্ষা খাতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা এবং দুই দেশের জনগণের মেলবন্ধনের বিষয় গুরুত্ব পাবে।
ব্লইক বলেন, বাংলাদেশ এর আগে অনেক হাইকমিশনার এসেছেন, আমিও অন্য দেশে এ দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু আমি বাংলাদেশে প্রথম নারী ব্রিটিশ হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছি।
অ্যালিসন ব্লেইক বলেন, বাংলাদেশের বন্ধু ও বৃহত্তম দ্বিপাক্ষিক দাতা হিসেবে যুক্তরাজ্য এ দেশের ভবিষ্যৎ ও দুই দেশের সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এ দেশের মানুষ ব্রিটিশ সমাজে অপরিমেয় অবদান রেখেছে। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ তৃতীয় বৃহত্তম বাজার। যুক্তরাজ্যে ৫ লাখ ব্রিটিশ-বাংলাদেশী বসবাস করে। তারা দুই দেশের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করে। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে স্থিতিশীল উন্নত ও নিরাপদ দেখতে চায়। এ জন্য যুক্তরাজ্যের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জানুয়ারি ঢাকায় আসেন ব্রিটিশ কূটনীতিক অ্যালিসন ব্লেইক। প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়ে অভিজ্ঞ অ্যালিসন। দীর্ঘ ২৬ বছরের কর্মজীবনের প্রায় অর্ধেক সময় ব্লেক প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত বিভাগে কর্মরত ছিলেন। ঢাকায় আসার আগে তিনি ইসলামাবাদে ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন