মো. আব্দুল হামীদ নোহারী
\ শেষ কিস্তি \
মহান প্রভুর অগণিত সৃষ্ট জীব বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আল্লাহতায়ালার গুণাগানে সদা লিপ্ত রয়েছে। সেসব প্রক্রিয়ার কোন একটি ধারা এমন নেই নামাযী মাত্রেই সেই প্রক্রিয়ায় অনুকরণ না করে থাকে। নিবিষ্ট মনে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, নামাযী ব্যক্তি সূরা আবৃত্তির সময় পাহাড় ও পর্বতের ন্যায় অটল ও অচলাবস্থায় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে। অতঃপর চার পা বিশিষ্ট পশুর ন্যায় রুকুতে যেয়ে কিছুক্ষণ তাঁর মহানত্তে¡র স্তুতি গুণগান গেয়ে থাকেন। আবার সরীসৃপের ন্যায় নতজানু অবস্থায় মহান প্রভুর কুদরতের জন্য মাথা সোজা করে বসে অনুনয় বিনয় সহকারে করজোড় করে সকল প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। মনে হয় মানুষ যেন কিসের পানে মনের আবেগে এক অদৃশ্য জগতে বিরাজ করতে থাকে। এমনিভাবে দৈনিক ৫ বার এ ধরনের কর্ম পদ্ধতির মাধ্যমে তার হৃদয়-মনকে ভাব রাজ্যের গহীন বনে চলে যায়। সারকথা, এ বিশ্ব চরাচরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি যত প্রকার সৌন্দর্য বদ্যমান তন্মধ্যে নামাজের সৌন্দর্য্য অতুলনীয়। সামরিক কুচকাওয়াজে সাবলীল অঙ্গভঙ্গি ও শরীরচর্চা যেমন প্রত্যহ স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য অপরিহার্য কর্তব্য, তেমনি প্রত্যহ নিয়মিতভাবে নির্ধারিত সময়ে ৫ বার সামরিক ট্রেনিংয়ের ন্যায় ট্রেনিং দেয়ার মধ্যে ঘোর রহস্য নিহিত রয়েছে।
ফলকথা যদি কোন ব্যক্তির সুস্বাদু তরকারি তৈরি করতে হয় তজ্জন্য প্রয়োজন হয় বিভিন্ন প্রকার মসল্লার। শুধু মসল্লা দিলেই চলবে না বরং পরিমিত পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে। আর পরিমিত পরিমাণ ব্যতীরেকে বেশি বা কম হয়, তবে উক্ত তরকারি সুস্বাদের পরিবর্তে বিস্বাদে পরিগণিত হয়ে যায়, যা খাবার অযোগ্য হয়। এমনিভাবে যথারীতি মসল্লা প্রয়োগ করলেই চলবে না বরং সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পাক-সাফের জন্য পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা। সেই সুনিপুণ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হলে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পরিপক্ব বাবুর্চির সহযোগিতা ও সহচার্য একান্তভাবে প্রয়োজন। এমনিভাবে প্রকৃত নামাযী হতে হলে নামাজের প্রত্যেকটি ফরজ, ওয়াজেব, সুন্নত, মোস্তাহাব ইত্যাদি সম্পর্কে পরিপূর্ণ ওয়াকেবহাল থাকতে হবে। শুধু ওয়াকেবহাল থাকলে চলবে না, সেগুলো প্রয়োগের মাছলা-মাছায়েল সম্পর্কে যথারীতি এলেম থাকতে হবে। এতেই যথেষ্ট হবে না বরং যে কোন আল্লাহতায়ালা বুজুর্গের সান্নিধ্য লাভে ধন্য হতে হবে। তজ্জনই আল্লাহপাক এরশাদ করেছেন, “তোমরা ছিদ্দিকীনদের সঙ্গ লাভ কর।” অন্যত্র এরশাদ করেছেন, তোমরা রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু কর অর্থাৎ প্রকৃত নামাযীদের সঙ্গে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে অভ্যস্ত হও।
তদ্রুপ আরো দৃষ্টান্ত দেয়া যায় যে, কৃষি ভূমিতে উন্নতমানের ফসল উৎপাদন করতে হলে প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ধারিত সময়ে উক্ত ভূমিকে চাষাবাদ করতে হবে, এরপর উক্ত ভ‚মিকে উর্বরতা বৃদ্ধিকল্পে সুষম সার ব্যবহার করতে হবে এবং এরপর উন্নতমানের বীজ ছড়াতে হবে এবেং সময়োপযোগী জলসেচের ব্যবস্থা এবং নিড়ানী প্রক্রিয়া সঠিকভাবে করতে পারলেই উন্নতমানের ফসল উৎপন্ন হবে অন্যথায় সব কিছু বিফলে যাবে। এমনিভাবে মহান প্রভুর কাছে গ্রহণযোগ্য এবাদত নামাজ আদায় করতে প্রয়োজন রয়েছে কিছু বিধি-বিধানের। সেগুলো হলো শরীর পাক, জায়গা পাক, পরিধেয় বস্ত্র পাক ইত্যানুরূপ আহকাম-আরকান ১৩টি ও ১৪টি ওয়াজেব, আরো কতিপয় সুন্নাত এবং মোস্তাহাব- সেগুলোকে যথাযথ আদায় করতে হবে। ব্যাপারটা আরো একটু স্পষ্ট করে একটা উপমার দ্বারা বোঝানো হলো। যেমন : যে কোন মেশিন বা যানবাহন চালাতে হলে তন্মধ্যে বিভিন্ন প্রকার পার্টসের প্রয়োজন হয়। ছোট-বড় অনেক প্রকার নাট ও বল্টুর আবশ্যক হয়, সেগুলোকে যথাস্থানে যথাযথরূপে ফিট করতে হয়। যদি ফিট করতে ব্যতিক্রম করা হয়, তবে উক্ত মেশিন যা যানবাহন অচল হয়ে যায় অথবা যে কোন মুহূর্তে আকস্মিক দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশংকা থাকে। এমনিভাবে নামাজের মধ্যে যেসব ফরজ, ওয়াজেব, সুন্নত ও মোস্তাহাব বর্ণিত রয়েছে সেগুলো যথারীতি আদায় না করলে তা আল্লাহতায়ালার কাছে বিকলাঙ্গ অবস্থায় গৃহীত হবে। সুতরাং দেখা যায়, অনেক নামাযীর নামাজ আল্লাহর কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হবে না বরং উক্ত নামাযীর চেহরার উপর নিক্ষিপ্ত হয় এবং অভিশাপ হতে থাকে। সুতরাং এ ধরনের নামাজ তাদের চরিত্রে কোন প্রকার পরিবর্তন সাধন করতে পারে না বিধায় নামাজ আদায় করা সত্তে¡ও গর্হিত ও ন্য্যাক্কারজনক কার্যাবলী হতে বিরত হয় না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন