সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : দেশের দক্ষিণ-পূর্ব জনপদের অন্যতম পুণ্যভূমি কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের মৌকারা দরবার শরীফের দু’দিনব্যাপী ইসালে সওয়াব মাহফিলের শেষদিন বুধবার রাতে দরবারের পীর আমীরুস সালেকীন আলহাজ্ব মাওলানা শাহ মুহাম্মদ নেছারউদ্দীন ওয়ালীউল্লাহীর সভাপতিত্বে আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক ও বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সভাপতি আলহাজ্ব এএমএম বাহাউদ্দীনের বক্তব্য মাহফিলে উপস্থিত লাখো ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে চেতনা জাগিয়ে তুলেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আখেরী মুনাজাত শেষে মুসল্লীদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা সাধুবাদ জানিয়ে ইনকিলাব সম্পাদকের বক্তব্যকে সময়ের সাহসী উচ্চারণ বলে মন্তব্য করেন। এদিকে মৌকারা দরবার শরীফের মরহুম পীর ছাহেব শাহসুফি আলহাজ মাওলানা অলী উল্লাহ (রহ.)এর দশম ইন্তেকাল বার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া দুইদিনব্যাপী ৭০তম ইসালে সওয়াব মাহফিলের আখেরি মুনাজাত গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টায় অনুষ্ঠিত হয়। লাখো মুসল্লির কান্না আর আমিন আমিন ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে মৌকারাসহ আশপাশের এলাকা।
দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে মাহফিলে আগত ভক্ত, আশেকান, মুরিদানরা বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় ধর্মীয় আলোচনা পর্বে ইনকিলাব সম্পাদক জনাব এএমএম বাহাউদ্দীনের বক্তব্য গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনেন। বক্তব্যে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানদের অবস্থান, শক্তি সম্পর্কে যেসব কথা বলেছেন তা অনেকের অজানা ছিল। ইনকিলাব সম্পাদকের মুখ থেকে বেরিয়ে আসা এসব দুর্লভ তথ্য মাহফিলে উপস্থিত আমজনতার মাঝে চেতনা ও নাস্তিকতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার সাহস যুগিয়েছে। মুসল্লীরা তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ইনকিলাব সম্পাদক সম্পাদক ওনার বক্তব্যে দেশের ত্বরিকতপন্থি ইসলামী দল ও দরবারগুলো মতভেদ ভুলে ঐক্য গড়ে তুলতে পারলে এদেশে ঈমান আকিদা ও ইসলামী মূল্যবোধ সম্পন্ন একটি সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে বলে যে আগাম সংবাদ দিয়েছেন তা সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়িত হবে। কেননা, ইনকিলাব সম্পাদকের মতো এমন সাহসী উচ্চারণের মানুষগুলোর নির্দেশনা, পরামর্শের পথ ধরে একদিন ত্বরিকতপন্থিরা এক কাতারে শামিল হবে। সর্বোপরি ইনকিলাব সম্পাদকের বক্তব্যে উপস্থিত আমজনতা তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ইনকিলাব সম্পাদকের বক্তব্যে ত্বরিকতপন্থি দল ও দরবারগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার উদ্যোগ প্রতিফলিত হয়েছে। মুসল্লীরা আরো বলেন, রাজনীতি, সমাজনীতিতে নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের অবশ্যই ইসলামী মূল্যবোধ সম্পন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী হওয়া উচিত বলে ইনকিলাব সম্পাদক যেসব কথা বলেছেন তা হক কথা। কেননা, যাদের দ্বারা সমাজ নিরাপদ থাকবে, সমাজের মানুষ নিরাপদ থাকবে তাদেরকে অবশ্যই ইসলামী মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হতে হবে।
আগামীদিনে এদেশে ২৫ লাখ যোগ্য ভবিষ্যত মা সৃষ্টি হবে উল্লেখ করে ইনকিলাব সম্পাদক দ্বীনি শিক্ষায় অধ্যয়নরত ২৫ লাখ মাদরাসা ছাত্রীর কথা তার বক্তব্যে তুলে ধরে প্রকৃত অর্থে অভিভাবকদের এখন থেকেই সচেতন হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ইনকিলাব সম্পাদক জনাব এএমএম বাহাউদ্দীনের বক্তব্য মুসলিম সমাজকে তথা তৌহিদী জনতাকে ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান ও রাসূল সা.-এর আদর্শের মূলমন্ত্রে জেগে উঠার প্রেরণা দিয়েছে বলেও মৌকারা দরবারের মাহফিলে উপস্থিত মুসল্লীয়েকেরামগণ মন্তব্য করেন।
এদিকে বুধবার রাত সাড়ে ১১টার পর থেকে মাহফিলস্থলে বাড়তে থাকে মুসল্লীদের সংখ্যা। প্রায় ৪লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত নাঙ্গলকোট উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসতে থাকে দলবেঁধে মুসল্লীদের ঢল। ফজরের নামাজে অংশ নিতেও বাড়ি ঘর থেকে আসতে থাকে মুসল্লীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার ফজর নামাজ শেষে তালিম ও জিকিরের পর অনুষ্ঠিত হয় আখেরী মুনাজাত। মৌকারা দরবার শরীফের পীর ছাহেব আলহাজ শাহ মুহাম্মদ নেছারউদ্দিন ওয়ালী উল্লাহী আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন। মুনাজাতে আল্লাহর দরবারে সকল মুসলমান নর-নারীর গুনাহ মাফ ও কবরবাসীদের আজাব মাফ চেয়ে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রাসূল (সা.) এর দিদার নছীব লাভের ফরিয়াদ জানানো হয়। তাছাড়া আমলী জিন্দেগী গড়ে তোলার জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করা হয় মুনাজাতে। এছাড়াও সকল অস্থিরতা থেকে দেশ শান্তির পথে ফিরে আসার ফরিয়াদও জানানো হয়। মুনাজাতে ইহুদী কাফের মুশরিক নাস্তিক মুরতাদের হাত থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের হেফাজত কামনা করা হয়। মুনাজাতে ইসলামী সমাজ ও মূল্যবোধ বিনষ্টকারীদের এবং গিবদকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের হেদায়েত নসীব করার জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানানো হয়। সকল মুসলিম পরিবারগুলোতে যাতে শান্তি, মান্যতা, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতা বজায় থাকার জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করা হয়। মৌকারা পীর ছাহেব মুনাজাতে ইসলামের নামে বিভ্রান্তকারীদের নস্যাৎ এবং এদেশে ইসলামী আক্বিদার প্রচার-প্রসার ও চর্চার ধারা অব্যাহত থাকার প্রার্থনা করেন।
বিশাল জায়গা জুড়ে স্থাপিত মাহফিলের প্যান্ডেল ছাড়িয়ে মুসল্লিরা মুসজিদের ভেতর, মাদরসার বারান্দায়, রাস্তায়, আশপাশের খালি মাঠে, যানবাহন রাখার স্থানে দাঁড়িয়ে, বসে আর মাইকের আওয়াজ যতদুর পৌঁছেছে ততদুর পর্যন্ত বাড়িঘরের ভেতর নারী ও শিশুরা আখেরী মুনাজাতে অংশ নেন। আখেরী মুনাজাতে অংশ নেয়া লাখো মুসল্লির আল্লাহর দরবারে দুই হাত তুলে ফরিয়াদ জানিয়ে কান্নার রোল আর আমিন আমিন ধ্বনি আর কলেমা তাইয়্যেবা উচ্চারণের মধ্যদিয়ে শেষ হয় মৌকারা দরবার শরীফের দুইদিনব্যাপী মাহফিলের আখেরী মুনাজাত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন