ইনকিলাব ডেস্ক : প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে। কিন্তু সিরিয়াবাসীদের দুর্ভাগ্য যে, অচিরেই তা গৃহযুদ্ধে পরিণত হয়। এর ফল হয় অবর্ণনীয় ধ্বংস, মৃত্যু, দেশত্যাগ। পাঁচ বছরের মাথায় এসে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সমন্বিত উদ্যোগে ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সিরিয়ায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তবে তা সিরিয়াবাসীদের জন্য স্বস্তি বয়ে আনবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। এখন সিরিয়া রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকে কিনা সেই প্রশ্ন সামনে আসতে চলেছে। খবর আরটি।
২০১৪ সালে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) খিলাফত প্রতিষ্ঠার পর খবর সংগ্রহের জন্য আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রবেশের অনুমতিপ্রাপ্ত প্রথম পশ্চিমা সাংবাদিক জার্মানির জুরজেন টোডেনহফার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন যে মার্কিন রাজনীতিকরা সিরিয়াকে টুকরো টুকরো করে খ-বিখ- যুদ্ধ এলাকায় পরিণত করতে চলেছে।
৭৫ বছর বয়স্ক সাংবাদিক স্কাইপি সাক্ষাৎকারে আর টিকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ার পর তিনি সিরিয়ার অভ্যন্তরে বিভিন্ন সূত্রের সাথে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতি কাজ করছে। এখন বাশার বিরোধী বিদ্রোহীরা সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে তাদের ব্রিগেডগুলোকে পৃথক করে ফেলছে। আর তা বিদ্রোহীদের উপর আক্রমণ না করে আল নুসরা ও অন্যান্য আল কায়েদা গ্রুপগুলোর উপর হামলার সুযোগ এনে দিয়েছে।
তিনি বলেন, অস্ত্র বিরতির প্রতিটি দিনই মানুষের জন্য আনন্দময়। তারা খুশি, আমিও অধিকতর আশাবাদী তা এ কারণে যে এখন বিদ্রোহীদের ও সরকারের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে।
মস্কো বলেছে, গত তিন দিনে ৩০ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘিত হয়েছে। তবে সবদিকের পর্যবেক্ষকরাই বলছেন যে বৈরিতা হ্রাস পেয়েছে। যেসব অবরুদ্ধ স্থানগুলোর মানুষ অনাহারে পৌঁছানোর উপক্রম হয়েছিল সেগুলোতে মানবিক সাহায্য পৌঁছতে শুরু করেছে।
সাংবাদিক ও বিশেষজ্ঞ হওয়ার আগে টোডেনহফার ২৮ বছর জার্মান পার্লামেন্টে মধ্য-ডানপন্থী দলীয় সদস্য ছিলেন। তিনি বলেন, আইএসকে ঠেকাতে সিরিয়ার অভ্যন্তরে একটি নতুন জোট গড়ে তোলার লক্ষ্যে অস্ত্রবিরতি প্রথম পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, বিদ্রোহীরা যদি সরকারী বাহিনীর সাথে মিলে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে তাহলে আমরা আইএসকে পরাজিত করার একটি সুযোগ পাব, সেক্ষেত্রে সিরিয়ায় শান্তি আসবে। এটি একটি স্বপ্ন, কিন্তু বাস্তববাদী স্বপ্ন। তিনি স্বীকার করেন যে প্রেসিডেন্ট বাশার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে মতপার্থক্যই পাঁচ বছর ব্যাপী যুদ্ধের কারণ।
টোডেনহফার পাশ্চাত্যের সামরিক হস্তক্ষেপের সমালোচক। তিনি মনে করেন, এখন বিদ্রোহীদের মধ্যপ্রাচ্যের পৃষ্ঠপোষকদের সমর্থন বন্ধ, বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হল ওয়াশিংটনকে এই প্রাণঘাতী যুদ্ধে ইন্ধন যোগানো অবসান ঘটাতে হবে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরাককে বিভক্ত করেছে। তারা লিবিয়াকে বিভক্ত করেছে। এখন তারা সিরিয়াকে চার বা পাঁচ টুকরো করতে পারে। বিভক্ত দেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। আমার ধারণা, কতিপয় আমেরিকান রাজনীতিক মধ্যপ্রাচ্যে দুর্বল দেশ পছন্দ করেন।
আইএসের কার্যত রাজধানী রাক্কায় ১০ দিন অবস্থান কালে টোডেনহফার আইএসের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন। তার বিশ^াস যে গ্রুপটি চাপের সম্মুখীন না হলে অনির্দিষ্টকাল টিকে থাকার মত সুসংগঠিত। তিনি আরো বলেন, প্যারিস হামলার ন্যায় ইউরোপে নতুন হামলা আসন্ন। তা ঠেকাতে সামান্যই করার আছে।
টোডেনহফার বলেন, আইএসের যে শক্তি আছে তা ইইউ দেশগুলো, যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ায় ব্যবহার করা খুবই সহজ। এসব দেশে তাদের বহু অনুসারী আছে। তাদের সীমান্ত অতিক্রমের ঝুঁকি নেয়ার দরকার নেই। তারা তা করতে পারে, কিন্তু তা নিষ্প্রয়োজন। তারা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে পারে, তাই আত্মঘাতী হামলা চালানো কঠিন নয়। এটা সস্তা ও সহজ।
জার্মান সাংবাদিক বলেন, ইউরোপ এখনো ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে মতাদর্শের যুদ্ধে জয়লাভ করতে ব্যর্থ, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত নিজ তরুণদের ক্ষেত্রেই তারা ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রদর্শন করতে হবে যে এ মতাদর্শ ভুল, এ মতাদর্শ ইসলাম বিরোধী। মানুষকে আমাদের দেখাতে হবে যে এটা ভুল পথ, এটা একটি সমস্যারও সমাধান করবে না। আইএস সহানুভূতিশীলদের দেখানো উচিত যে এমনকি ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এর মধ্য দিয়ে তারা ইসলামের কোনো সেবা করছে না, বরং তারা ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তারা ইসলামের জন্য বিপদ, আর তারা অন্তত মধ্যপ্রাচ্যে যেসব লোককে হত্যা কছে তাদের অধিকাংশই মুসলমান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন