আবু হেনা মুক্তি : বিএনপি অধ্যুষিত বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা এখন চরম আতঙ্কে। গ্রেফতার আর হয়রানির ভয়ে ইউপি নির্বাচনের চেয়ারম্যান মেম্বার প্রার্থীরা প্রকাশ্যে ভোটযুদ্ধে বুক ফুলিয়ে অংশ নিতে পারছে না। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা জেলা উপজেলার হাজার হাজার নেতাকর্মীর পরিবারও ভোট চাইতে সাহস পাচ্ছে না। মিথ্যা মামলা যেন তাদের কাছে জাজ্বল্যমান আতঙ্ক।
নির্বাচনে ‘ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা যেভাবেই হোক পাশ করে যাবে’ এমন মনোভাবে ভোট রাজনীতির মাঠে অবস্থান নিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রায় সকল ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীদের হয়রানি করা হচ্ছে। এমনকি প্রার্থীদের গণসংযোগে বাধাপ্রদান, নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর এবং প্রার্থী ও সমর্থকদের এলাকা ছাড়ারও হুমকি দেয়া হচ্ছে। যে কারণে ভোট উৎসব এক পেশে অবস্থানে পর্যবষিত হয়েছে। প্রার্থীদের অনেকেই যুদ্ধাপরাধী বা রাজাকার পরিবারের সদস্য ধূয়া তুলে সংবাদ সম্মেলন বিবৃতি দিয়ে নির্বাচনের আগেই কাবু করা হচ্ছে। অনেক প্রার্থী ও তাদের ঘনিষ্ঠ এবং বিশেষ অনুসারী নেতাকর্মীরা দিনের পর দিন পলাতক থাকায় তাদের পারবারিক অর্থনৈতিক দ্বৈন্যতা চরমাকার ধারণ করেছে। ভোটের মাঠে তারা আসতে পারছে না। আর ৩ জেলার কারাগারগুলোতে যে বন্দি রয়েছে তার ৫০ শতাংশ বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মী সমর্থক। জেলখানাগুলোতে ধারণ ক্ষমতার বেশি হাজতিরা থাকায় অবর্ণনীয় কষ্টে রয়েছে তারা। বিরোধীদল দমনে পুলিশ এখন বিশেষ ভূমিকা নিচ্ছে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে। সূত্রমতে, বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। শুধু খুলনায় সহস্রাধিক নেতাকর্মীরা বিরুদ্ধে ৩৫টি মামলা রয়েছে। এছাড়া সাতক্ষীরা জেলায় অর্ধশত মামলায় আসামী হয়েছে কয়েক হাজার নেতাকর্মী। বাগেরহাট জেলায় কয়েকশত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে প্রায় দু’ডজনের মত। নেতাকর্মীর অভাবে খুলনা মহানগরীসহ বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা সদরে নির্বাচনী কর্মকা-ে অংশ নিতে পারছে না ২০ দলীয় জোট। নির্বাচনে প্রায় সকল ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থীদের হয়রানি করা হচ্ছে। এমনকি প্রার্থীদের গনসংযোগে বাধাপ্রদান, নির্বাচনী কার্যালয়ে ভাঙচুর এবং প্রার্থী ও সমর্থকদের এলাকা ছাড়ারও হুমকি দেয়া হচ্ছে। খুলনা জেলা বিএনপি’র পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব অভিযোগ করেছেন জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. শফিকুল আলম মনা। তিনি তেরখাদা সদর ও ছাগলদাহ ইউনিয়নে পুনঃতফসিল ঘোষণার দাবি করেন। তিনি বলেন, তাছাড়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের এলাকা ছাড়া করছে। তল্লাশির নামে হয়রানির শিকার হচ্ছে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী এবং তাদের পরিবার-পরিজন। পুলিশ যাদের গ্রেফতার করেছে তাদের জামিন ধরার জন্য যারা আদালতে তদবির করছে তাদেরকেও হয়রানি করা হচ্ছে। তল্লাশির নামে কর্মীদের পুলিশ খুঁজছে। যে কারণে যারা গ্রেফতার হয়নি তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
অপরদিকে, সাতক্ষীরা জেলা সদরসহ জামায়াত অধ্যুষিত কালীগঞ্জ, দেবহাটা, তালা, কলারোয়া, শ্যামনগরসহ বিভিন্ন উপজেলায় পুলিশ দিনে রাতে চষে বেড়াচ্ছে। এখানে বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীরা এলাকাতেই থাকতে পারছেনা। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাদের দেখলেই পুলিশ ডেকে এনে ধরে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে। ক্রসফায়ারের ভয়ে এসব অঞ্চলের নেতাকর্মীরা আশপাশের জেলায় আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় অবস্থান করছে। এসএসসি পরীক্ষার্থীরা রয়েছে চরম উৎকণ্ঠায়। মামলা পরিচালনা করতে পারছে না আটককৃত কর্মীদের পরিবার। তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য নানাকৌশলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এসব অঞ্চলে যেসব বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মী মৎস্য ঘের করে জীবিকা নির্বাহ করত তাদের ঘের দখল করেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। ঘেরের মাছ লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। ক্ষেতের ফসল নিয়ে যাচ্ছে। রাতের বেলায় তাদের ঘরে ঢিল ছোড়া হচ্ছে।
অপরদিকে, বৃহত্তর খুলনার ৩ জেলার কারাগারগুলোতে যে সব বন্দি রয়েছে তার ৫০ শতাংশই হচ্ছে বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মী। ২০ দলীয় জোটের সাম্প্রতিক আন্দোলনে মামলার শিকার হয়ে এই বিপুলসংখ্যক জেলে রয়েছে। খুলনা কারাগারে ৮০৭ জন বন্দির ধারণ ক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে রয়েছে প্রায় দেড় হাজার। বাগেরহাট কারাগারে ৪শ’ বন্দির ধারণ ক্ষমতা থাকলেও সেখানে গতকাল বন্দির সংখ্যা ছিল ৫ শতাধিক বলে বাগেরহাট জেলা সংবাদদাতা মাসুদুল হক জানান। মাঝে মাঝে বন্দির সংখ্যা আরো বাড়ে। সাতক্ষীরায় ৬শ’ বন্দি ধারণ ক্ষমতা থাকলেও এই কারাগারে বন্দির সংখ্যা প্রায় ২ হাজার বলে সাতক্ষীরা জেলা সংবাদদাতা আক্তারুজ্জামান বাচ্চু জানান। কারাগারগুলোর সামনে প্রতিদিন হাজার হাজার জামায়াত-বিএনপি’র নেতাকর্মীদের স্বজনদের ভিড়।
এদিকে, ইউপি নির্বাচনের সময় বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে পুলিশ ও যৌথবাহিনীর অভিযানে গ্রেফতারের পর ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের হয়রানির তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ, ধিক্কার জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ও খুলনা বিভাগীয় নেতৃবৃন্দ। একে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা উল্লেখ করে তা বন্ধ করার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, এ সব ঘটনার সাথে জড়িতদেরকে খুব শিগগিরই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। বিবৃতিদাতারা হলেনÑ বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম নুরুল ইসলাম দাদু ভাই, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান, কেন্দ্রীয়সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা জেলা সভাপতি অধ্যাপক মাজিদুল ইসলাম, কুষ্টিয়া বিএনপি সভাপতি সৈয়দ হাসান মেহেদী রুমী, বাগেরহাটের সভাপতি এমএ সালাম, নড়াইলের সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর হোসেন, খুলনা মহানগর সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কেসিসির মেয়র মনিরুজ্জামান মনি, খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. এসএম শফিকুল আলম মনা, বাগেরহাটের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা বাবু, নড়াইলের আব্দুল কাদের বিশ্বাস প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন