শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

আমাজন : জীবন যেখানে খামারে বন্দি

| প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : চারপাশে গাছপালা ঘেরা এক রুমের ছোট্ট একটি ঘরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বেশ সুখেই আছেন ব্রাজিলের নাগরিক লুইজ কার্ডোসো ডি সিলভা। হাসছেন, কথা বলছেন, স্ত্রীর রান্না করা মজার মজার খাবার খাচ্ছেন। বাচ্চাদের শোনাচ্ছেন রূপকথার গল্প। দেখে মনে হচ্ছে, এ মুহূর্তে পৃথিবীর সবচে সুখী মানুষ লুইজ। অথচ মাত্র ৩ দিন আগেও তার জীবনটা এত সুখের ছিল না। বন্দি ছিলেন আমাজন সংলগ্ন প্রত্যন্ত একটি গবাদি পশুর ফার্মে। শ্রমিক হিসেবে দিনের বেশির ভাগ সময় বাধ্যমূলকভাবে শ্রম দিতে হত। ছোট্ট একটা ঘরে আরো শ্রমিকদের সঙ্গে গাদাগাদি করে থাকতে হত। খাবার মিলত একবেলা। গোসল করা, কাপড় ধোয়ার মত নিত্যদিনের কাজগুলো করতেন খোলা আকাশের নিচে। বাথরুম করার জন্য ছিল পাশের একটি ঝোপ। আর মজুরি চাইলে কথাই নেই, কপালে জুটতো অকথ্য গালিগালাজ আর শারীরিক নির্যাতন। দুর্বিষহ বন্দি জীবন ছিল। তার ভাষায়, প্রতিনিয়ত নিজেকে মনে হত এ যুগের কোনো দাস। ৬৯ বছর বয়সী লুইজ একাই নন, তার মত আরো অনেকেই এমন দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের আমাজন সংলগ্ন গহীন এলাকাগুলোতে। শ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছেন স্থানীয় খামারে। স¤প্রতি লুইজসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিককে বন্দি জীবন থেকে উদ্ধার করেছে দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়ের ভ্রাম্যমাণ দল। দেশজুড়ে বাধ্যতামূলকভাবে শ্রম দেয়া অসহায় ব্যক্তিদের কল্যাণে কাজ করাই এ দলের দায়িত্ব। দলের নেতা ইন্সপেক্টর মার্সেলো গঞ্জালভেস ক্যাম্পোস বলেন, আমি গত ২০ বছর ধরে এ কাজ করছি। কিন্তু লুইসদের মতো এমন মানবেতর জীবন কাটাতে আর কাউকে দেখিনি। এটা ছিল আমার দেখা সবচে বাজে খামার। সেখানে শ্রমিকদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করা হত। এমনকি তাদের গবাদি পশুর সঙ্গে একই জায়গায় থাকতে বাধ্য করা হত। পালিয়ে যান নি কেন জানতে চাইলে লুইজ বলেন, আমাদের মজুরির অর্থ মালিকের কাছে জমা ছিল। গত ২ বছর আমাদের কোনো মজুরি দেয়া হয়নি। একইসঙ্গে অনেক অর্থ ধার করেছিলাম। তাই চাইলেও পালিয়ে যেতে পারিনি। হাজারো কষ্টের মাঝে লুইজের জন্য একটা সুখবর হলো খামারের মালিক ও তার পরিবার শ্রমিকদের এতোদিনের বকেয়া মজুরি পরিশোধ করতে রাজি হয়েছেন। টাকার অঙ্কে যা ৩৮ হাজার মার্কিন ডলার। লুইস বলেন, আমি আর সেখানে ফিরে যেতে চাই না। আমার মতো আরো অনেকেই খামারে কাজ করতেন। তারা কেউই আর ফিরে যেতে চান না। বকেয়া মজুরি পেলে সেই অর্থে এখানেই জীবন কাটিয়ে দেব। প্রসঙ্গত, বর্তমান সময়ে এসেও দাস ব্যবস্থার মতো বাধ্যমূলকভাবে শ্রম আদায় করার অভিযোগ ব্রাজিলে বেশ প্রকট। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়ের ভ্রাম্যমাণ দল আগেকার দাসদের মতো মানবেতর জীবন থেকে অন্তত ৫০ হাজার শ্রমিককে উদ্ধার করেছে। তাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশকেই আমাজন সংলগ্ন গহীন এলাকার গবাদি পশুর খামারগুলো থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ব্রাজিলের ক্যাথলিক প্যাস্টোরাল ল্যান্ড কমিশন (সিপিটি) জানিয়েছে, প্রতি বছরই অন্তত ২৫ হাজার ব্রাজিলীয় শ্রমিককে দাসদের মতো বাধ্যমামূলক ভাবে শ্রম দিতে হয়। আর এ সমস্যা শুধু গবাদি পশুর খামারেই নয় বরং কয়লা খনি, আখ ক্ষেত, নির্মাণ খাত, কৃষি খাত এবং গার্মেন্ট শিল্পেও বিদ্যমান। সিএনএন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন