বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন দেশজুড়ে তোলপাড়

বনানীতে জন্মদিনের পার্টিতে দাওয়াত দিয়ে বিশ্বদ্যিালয়ের ২ ছাত্রীকে গণধর্ষণ

প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:০১ এএম, ৮ মে, ২০১৭

বিশেষ সংবাদদাতা : রাজধানী র অভিজাত এলাকা বনানীর একটি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে দাওয়াত দিয়ে দুই তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগি দুই তরুণী একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদেরকে ধর্ষণ করেছে তাদেরই কয়েক সহপাঠি।
নির্যাতনের শিকার দুই শিক্ষার্থীকে গতকাল রোববার ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর সেখানে তাদের ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। দুপুরে পুলিশের তত্ত¡াবধানে তাদেরকে ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বনানী থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল মতিন। এর আগে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গণধর্ষণের ঘটনায় মামলা নেয় পুলিশ। গত শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানী থানায় পাঁচজনকে আসামি করে এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী ভুক্তভোগি এক শিক্ষার্থী। প্রধান আসামি করা হয়েছে, সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফকে। সহযোগিতা করার জন্য সাফাতের গাড়ি চালক বিল্লাল হোসেন, বডিগার্ড (অজ্ঞাত), সাদনান সাকিফকেও আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
নির্যাতিত দুই শিক্ষার্থীর দেয়া তথ্য মতে, ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৮ মার্চ বনানীর একটি হোটেল কক্ষে। ওই হোটেলে সারারাত তাদেরকে আটকে রেখে ধর্ষণ করে সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফ। শুরুতে ভয়ে তারা মুখ খুলতে পারিনি। পরে পুলিশের কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশের কাছে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা দুজনে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। ঘটনার দিন আমাদের পরিচিত সাফাত আহমেদের জন্মদিন ছিল। এ উপলক্ষে সাফাত বনানীর একটি হোটেলে জন্মদিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ওই অনুষ্ঠানে আমাদের বন্ধু সাদনান সাকিফেরও দাওয়াত ছিল।
সাদনান সাফাত আহমেদের বন্ধু। তারা দুজনে আমাদেরও বন্ধু। সাদনানই আমাদের ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অনুরোধ করে। প্রথমে আমরা যোগ দিতে চাইনি। পরে সাফাত নিজেই আমাদের ফোন করে দাওয়াত দিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বলে। এরপরও আমরা না বললে তারা অন্তত ১৮ বার ফোন করে এমনভাবে অনুরোধ করে যে শেষ পর্যন্ত আমরা রাজি হয়ে যাই। এরপর সাফাত আমাদের অনুষ্ঠানে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি গাড়ি পাঠিয়ে দেয়। আমরা তখন গুলশান নিকেতন এলাকার বাসায় ছিলাম। রাত ৮টার দিকে সাফাতের গাড়ির চালক বিল্লাল হোসেন একটি প্রাইভেট কার নিয়ে আমাদের বাসার সামনে আসে। এরপর আমরা ওই গাড়িতে করে বনানীর ঐ হোটেলের সামনে যাই। তখন সাফাত আমাদের রিসিভ করে হোটেলের ৯ তলার ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে সাফাত ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফ ও সাদনান ছিল। ওই সময় আমাদের আরো দুই বন্ধু সেখানে ছিল। আরো ছিল সাফাতের বডিগার্ড ও চালক বিল্লাল। রাত ৯টার দিকে তারা আমাদের ছাদ থেকে নিচে নামিয়ে ওই হোটেলের তিনটি কক্ষে আটকে রাখে। এর মধ্যে দুটি কক্ষে আমাদের দুজনকে অন্য কক্ষে আমাদের আরো দুই বন্ধুকে আটকে রাখে। এরপর আমাদের দুজনের উপর পাশবিক নির্যাতনের চেষ্টা চালায়। আমরা বাধা দিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করি। সাফাত ও নাঈম একপর্যায়ে আমাদের মাথায় পিস্তল ধরে গুলি করার হুমকি দেয়। বলে,  তোরা আমাদের কথায় রাজি না হলে গুলি করে লাশ কোথায় রাখব কেউ জানবে না। তোরা আর এ পৃথিবীতে থাকবি না...।
ভুক্তভোগি ওই ছাত্রীর ভাষায়, এরপরও আমরা চেষ্টা করি ওদের কাছ থেকে সটকে পড়ার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারিনি। ওরা হোটেলের কক্ষে আটকে রেখে সারারাত আমাদের উপর নির্যাতন চালায়। একই সাথে তারা সেই দৃশ্য ভিডিও করে রাখে। পুলিশের কাছে ওই দুই শিক্ষার্থী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ওই সময় আমাদের ওরা মারধরও করে। এভাবে সারারাত শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন করে সকালে আমাদের ছেড়ে দেয়। ওই সময় ওরা আমাদের মোবাইল ফোনও কেড়ে নিয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে বনানী থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুল মতিন বলেন, সাফাত ও নাঈম দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তারা ওই দুই তরুণীর বন্ধু। জন্মদিনের পার্টিতে দাওয়াত করে হোটেলে নেয়ার পর সাফাত ও নাঈম হোটেলের একটি কক্ষে নিয়ে রাতভর দুই তরুণীকে আটকে রেখে মারধর এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। আসামিদের অপর তিনজন ধর্ষণে সহায়তা ও ভিডিও ধারণ করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, ধর্ষণের শিকার হওয়া দুই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- মমতাজ আরা, নিলুফার ইয়াসমিন, কবিতা সাহা ও কবির সোহেল।
এ বিষয়ে ডা. সাহেল মাহমুদ বলেন, ভিকটিমদের মাক্রোবায়োলজি, রেডিওলজিক্যাল এবং ডিএনএ প্রোফাইলিং পরীক্ষার জন্য আনা হয়েছে। পরীক্ষা শেষে প্রতিবেদন পেতে ১৫/২০ দিন সময় লাগবে। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে ঘটনাটি বেশ কিছুদিন আগের হওয়ায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া কঠিন হবে। তাই এখন আমরা তথ্য প্রমাণের (এভিডেন্সেরও ওপর) উপর নির্ভরশীল।
গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঘটনার সাথে জড়িত কেউ গ্রেফতার হয়নি বলে বনানী থানার ডিউটি অফিসার জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
রেজাউল করিম ৮ মে, ২০১৭, ১১:৪৪ এএম says : 0
অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।
Total Reply(0)
S. Anwar ৮ মে, ২০১৭, ৪:৪৬ পিএম says : 0
শাস্ত্রে বলে, বন্ধুত্ব এমনই একটা ব্যপার যা শুধুমাত্র পুরুষে-পুরুষে কিংবা নারীতে-নারীতে সম্ভব। পুরুষ আর নারীতে কখনো বন্ধুত্ব হতে পারে না। হলেও সেখানে আপনা হতেই কোন এক সময় যৌনতা আসবেই আসবে। আর এই প্রগতির যুগে বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুত্বে যৌনতাতো বড় বিকৃত রুপেই আসে। এই ঘটনাটাই তার জ্বলন্ত প্রমান।
Total Reply(0)
S. Anwar ৮ মে, ২০১৭, ৯:১৪ পিএম says : 0
প্রগতিবাদী, আধুনিক, মুক্তমনা ও উচ্চ শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের ডিজিটাল বন্ধুত্বের পরিনাম যা হবার কথা তা-ই হয়েছে। শাস্তি চাইতে গেলে এখানে উভয় পক্ষের জন্য চাইতে হয়। নইলে কোন পক্ষের জন্যই না।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন