অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ব্যাংকগুলোতে জালজালিয়াতি ও প্রতারণা বেড়ে যাওয়ায় এসব প্রতিরোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ উদ্দেশ্যে সংশোধন আনা হয়েছে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থার স্বমূল্যায়ন নীতিমালায়। এতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে বৈদেশিক বাণিজ্য সংক্রান্ত জালিয়াতি প্রতিরোধের ব্যবস্থা।
ব্যাংকগুলোর কাজের অধিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নীতিমালা পরিপালনের ক্ষেত্রে সর্বশেষ অগ্রগতির প্রতিবেদন প্রতি ৬ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিমন থেকে এক সার্কুলার লেটার জারি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এস এম রবিউল হাসান স্বাক্ষরিত এ নির্দেশনা ব্যংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদেরকে পাঠানো হয়েছে গতকাল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নানা উদ্যোগ নেয়া সত্তে¡ও ব্যাংকগুলোর জাল-জালিয়াতি কমছে না। যে ব্যাংকেই পরিদর্শনে যাওয়া হচ্ছে ওই ব্যাংকেই বড় ধরনের অনিয়ম মিলছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে ঋণ জালিয়াতি। এতে ঝুঁকি বাড়ছে আর্থিক খাতে। উপযুক্ত জামানত না নিয়ে ঋণ বিতরণের ফলে পুরো ঋণই ঝুঁকির মুখে পড়ে। এক পর্যায়ে খেলাপিতে পরিণত হয় এসব ঋণ। আর এ খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। আর এ প্রভিশন সংরক্ষনেও কিছু কিছু ব্যাংকের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ মিলছে। খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে বর্ধিত হারে ব্যাংকগুলো প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারে না। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সমস্য বেশি। এসব ব্যাংকের রাজনৈতিক চাপ বেশি থাকে। ফলে এক পর্যায়ে মূলধনের ঘাটতি দেখা দেয় ব্যাংকগুলোর।
ব্যাংকগুলোর এ জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণামূলক কার্যক্রম প্রতিরোধের জন্য ব্যাংকের অভ্যান্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিজ নিজ ব্যাংকের মূল্যায়ন করে তা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানোর জন্য ২০১২ সালের ৭ নভেম্বর একটি সার্কুলার জারি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সার্কুলার লেটারে ৫৩টি প্রশ্ন দেয়া হয়েছিল ব্যাংকগুলোর জন্য। এসব প্রশ্ন ছিল ব্যাংকগুলোর ঋণ ঝুঁকি, বাজার ঝুঁকিসহ সামগ্রিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত। প্রশ্নমালার আলোকে নিজ নিজ ব্যাংকের সামগ্রিক অবস্থা তুলে ধরে নির্দেশনা মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রতি তিন মাস অন্তর প্রতিবেদন দাখিল করতো ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো তাদের সামগ্রিক ঝুঁকি ব্যবস্থা সঠিকভাবে দাখিল করতো না। এতে একদিকে যেমন ব্যাংকগুলোর প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে তদন্ত করা সমস্যা হতো, অপরদিকে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতি প্রমাণ করে ব্যবস্থা নেয়া কঠিন হতো। একই সাথে ব্যাংকিং খাতে নিত্যনতুন ঝুঁকি চিহ্নিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে জালজালিয়াতি প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা হালনাগাদ করার প্রয়োজন দেখা দেয়। এরই আলোকে সংশোধন করা হয়ে এ নীতিমালা। সংশোধিত নীতিমালায় ৫৩টি প্রশ্ন মালার পরিবর্তে ৭৮টি প্রশ্ন মালা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সংযোজন করা হয়েছে বৈদেশিক বাণিজ্য সংক্রান্ত প্রশ্নমালা। আগের নীতিমালায় বৈদেশিক বাণিজ্য সংক্রান্ত জালজালিয়াতি বা প্রতারণা ছিল না। একই সাথে ব্যাংকগুলোর জন্য ঝুঁকি সংক্রান্ত প্রশ্ন আরো সরাসরি করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ আলো জোরালোভাবে করা সম্ভব হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে। কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে জালজালিয়াতির প্রমান পাওয়া গেলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন