শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আম লিচুর মনমাতানো সৌরভ নিয়ে শুরু হলো মধুমাস

| প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রেজাউল করিম রাজু : আজ পহেলা জৈষ্ঠ্য। গাছে গাছে থোকায় থোকায় কাঁচা পাকা আম লিচু জাম জামরুল খেজুরের দুলনি মন মাতানো সৌরভ আর রাধাচুড়া কৃষ্ণচুড়া গগনচুড়ার বর্ণিল আবির ছড়িয়ে যাত্রা শুরু হলো মধুমাস অর্থাৎ জৈষ্ঠ্যের। এ মাসে সর্বত্র থাকে রসালো শাঁসালো মধুফলে ভরা। তাই মধুমাস হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। গ্রীম্মের খরতাপে মানুষ যখন অতিষ্ঠ। তখন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ রহমত আর কুদরতে ভরা রসালো শাঁসালো ফল ফলাধী চলে আসে এ মওসুমে। শীত বিদায় নিয়ে চৈত্রের মাঝামাঝি সময় হতে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। বৈশাখে এসে বয়ে যায় মৃদু ও মাঝারী ধরনের তাপাদহ। মানুষ পশু পাখি হাঁস ফাঁস করতে থাকে। খরতাপের তৃষ্ণা মেটাতে  চলে আসে নানা রকম রসালো ফল। খরা তৃৃষ্ণায় কাতর মানুষের প্রশান্তির জন্য আল্লাহ পাক এ সময় দিয়েছেন তরমুজ আম জাম লিচু কাঠালসহ রকমারী ফল। চৈত্র বৈশাখে চলে আসে তরমুজ, বাঙ্গি, বেল, পাকা পেপে। আর তা পরিপূর্ণতা লাভ করে জৈষ্ঠ্যে এসে। কারন এ সময় সর্বত্র নজরে পড়ে ফলের রাজা আম, লিচ,ু বাঙ্গি, জাম জামরুল, তালসাঁস, খেজুর, আর কাঠাল। আর সেজন্য জৈষ্ঠ্যকে মধুমাস হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। অন্য কোন মাসে এত ফল ফলাধী আধিক্য নজরে পড়েনা। যদিও কেউ কেউ পান্ডিত্য জাহির করার জন্য জৈষ্ঠ্য নয় চৈত্রকে মধুমাস বলে হৈ চৈ করেন। মধুমাস যাত্রা শুরু করল সবুজ গোলাপী আভার লিচু নিয়ে। যদিও এগুলো তেমন রসালো কিংবা শাঁসালো নয়। ক্ষনিকের অতিথি হিসেবে রসালো শাঁসালো লিচু আসতে আরো কটাদিন দেরি আছে। এখন হাটে বাজারে ছড়াছড়ি কাঁচা আমের। বৈশাখের শেষ দিকে এসে ঝড়বৃষ্টি ও শিলা বৃষ্টি দাপট দেখানোয় প্রচুর আম লিচু ঝরে পড়েছে। এত আম ঝরেছে তা কেনার মত লোক নেই। সংরক্ষনের ব্যবস্থা না থাকায় পচে গেছে। এরপরও টন টন কাঁচা আম ট্রাক বোঝাই হয়ে গেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্রেতাদের কাছে। এসব কাঁচা আম রসনা মেটাচ্ছে ভোজন রসিকদের। বিশেষ করে আম দিয়ে ছোট মাছ রান্না। ডাল রান্না টক রান্না কাঁচা আম আর বিট লবনের শরবতের তুলনা নেই। ঝড় কিছুটা ক্ষতি করলেও এখনোও আম কিছু আছে। আম চাষীরা তাকিয়ে আছেন আবহাওয়ার মতিগতির দিকে। এবার বৃষ্টি ভাল হয়েছে। অন্যবার খরায় গুটি ঝরে  পড়ে। এবার তেমন বিরুপ অবস্থায় পড়তে হয়নি। তাই এবার আম লিচু স্বাভাবিক ভাবে আকারে বড় রসালো ও শাঁসালো হবে। গাছে গাছে থাকা আম লিচু এখনি তা জানান দিচ্ছে। এই রসালো শাঁসালো ফল আর দিন পনেরোর মধ্যে আম রসিকদের মধ্যে চলে আসবে। ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে আমের রাজধানী খ্যাত বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে। বিশেষ করে চাপাইনবাবগঞ্জে। এবারো আম বাণিজ্য হবে হাজার কোটি টাকার উপরে। এখানকার আম অর্থনীতি চাঙ্গা থাকবে মাস চারেকের জন্য। তাছাড়া বিভিন্ন ভাবে এর সাথে যুক্ত থাকবে লাখ পাঁচেক মানুষ। এরা হলো ব্যাপারী, শ্রমিক, কুলি, ট্রাক চালক, ভ্যান চালক, ঝুড়ি তৈরীকারক, আমপাড়া মজুর, পার্শেল কুরিয়ার ব্যবসায়ী আর খাবার দোকান কর্মচারীরা। গতকাল আমের বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় মধুমাস শুরু হয়েছে বিভিন্ন ধরনের গুটি আম দিয়ে। আর বনেদি জাতের মধ্যে এসেছে গুটি গোপাল। কিছুদিনের মধ্যে চলে আসবে গোপাল, খিরসা পাতি, রানী পছন্দ, মোহনভোগ আর একটু ভাব নিয়ে চলা ল্যাংড়া। নামে ল্যাংড়া হলেও এর কদরের দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে। এর মাঝে চলে আসবে বিভিন্ন নাম ও স্বাদের আম। আম রাজ্যের নাজির উজির প্রজাদের আগমন শেষে আসবে আমের মহারাজা ফজলী। গায়ে গতরে এর আকারের কারনে নামের প্রতি সুবিচার রয়েছে। শেষে আসে আশ্বিনা। এই আম শুধু দেশে নয় এখন বিদেশে যাওয়া শুরু হয়েছে। রফতানির জন্য ফ্রুট ব্যাগিং করে পরিচর্যা করা হচ্ছে। এর দাম ও চাহিদা দুটোই বেশী। মাইলের পর মাইল জুড়ে লাখ লাখ আম গাছে কোটি কোটি আমের দুলনী ইতোমধ্যে মন কাড়তে শুরু করেছে ভ্রমন পিপাসু মানুষদের। বিভিন্ন ট্রাভেল কোম্পানী ম্যাঙ্গো ট্যুরের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। তাছাড়া রাজশাহীর যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক ভাল। রেল, সড়ক বিমান সব পথেই যাতায়াত করা যাবে। থাকার জন্য হোটেলের ব্যবস্থাও রয়েছে। কষ্ট বলতে প্রকৃতিতে একটু গরম ভাব। তবে এটুকু হলফ করে বলা যায় যখন মাইলের পর মাইল আম বাগানের মধ্যদিয়ে যাবেন তখন লাখ লাখ গাছের কোটি কোটি আমের দুলুনি জানাবে স্বাগত। তখন পথের ক্লান্তি কোথায় চলে যাবে টেরই পাবেন না। চারিদিক শুধু আম আর আম এমন দৃশ্য কোথায় পাবেন। সিলেটে গেলে যেখানে শুধু চা বাগান। তেমনি এখানে আম বাগান। আম লিচুতো প্রত্যেক শহরে কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু এমন নজরকাড়া দৃশ্য কোথায়। আম বাগানের মধ্যদিয়ে হাটতে গেলে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা আম আপনার শরীরে ঝুলন্ত আমের ছোঁয়া অন্যরকম শিহরন জাগাবে। আমের থোকার সাথে সেলফি না তুলে থাকতেই পারবেন না। বাগানের মধ্যেদিয়ে হাটতে গিয়ে যদি ধপ করে গাছ পাকা একটা আম আপনার সামনে পড়ে তার স্বাদই আলাদা। আম খাওয়ার চেয়ে দেখার মজাই আলাদা। আমের বাজার গুলোয় গেলে নানা প্রজাতির আম দেখে চোখ কপালে উঠবে। সেই ছোট্ট বেলায় পড়া ছড়াটি মনের অজান্তে গুনগুনিয়ে উঠতে পারেন। আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা মামার বাড়ি যায়। ঝড়ের দিনে মামার বাড়ি আম কুড়াতে সুখ। আর মামা ডাকটি এখন এ অঞ্চলে ব্যাপক ভাবে চালু হয়েছে। রিক্সা চালক অটোরিক্সা থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডাক শুনবেন মামা যাবেন নাকি। মামা কিছু লাগবে। অতএব এখানে মামা ভাগ্নের অভাব নেই। তাছাড়া রয়েছে এখানকার অতিথি পরায়ন মানুষ। এরা বিত্তে বড় না হলেও চিত্তে মোটেই কম নয়। আম ঘিরে শুরু হয়ে গেছে সামাজিকভাবে নানা আয়োজন। আমের সময় মেয়ে জামাইকে আনা হয় বাপের বাড়িতে। বেয়াই বাড়ি ও তার স্বজনদের জন্য পাঠানো হয় ঝুড়ি ঝুড়ি আম। নইলে যে বউকে খোঁটা শুনতে হবে। বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনরা চেয়ে থাকে আমের দিকে। এজন্য আলাদা একটা বাজেট রাখতে হয়। এ যেন যায় যাক প্রান তবু রাখতে হবে মান। কষ্ট হলেও কিছু পাঠাতে হবেই। আম নিয়ে অনেক মজার মজার গল্প কবিতা রয়েছে। কাজী নজরুল ইসলাম, রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর, জসিম উদ্দিন, জীবনানন্দ দাস, মাইকেল মধুসুদন দত্ত তাদের কবিতায় বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ করেছেন। আম সত্যি সত্যিই ফলের রাজা। আম শুধু গল্প কবিতায় নয়। বিশ্বজুড়েই আমের জনপ্রিয়তা বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবহার স্বাদ গন্ধ ও পুষ্টিমানের বিবেচনায় এটি আদর্শ ফল। রুপচর্চা ছাড়াও এর ঔষধিগুনও অনেক। আম নিয়ে লিখতে গেলে কলেবর অনেক বেড়ে যাবে। কথা না বাড়িয়ে শুধু এটা বলা যায় মধুমাস উপভোগ করতে চলে আসা যায় আমের রাজধানীতে। রাজা নেই শাহী নেই রাজশাহী নাম। হাতি ঘোড়া কিছু নেই আছে শুধু আম। এর যথার্থতা মিলবে এখনে এলেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন