ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, মুসলমানদের ঈমান, ধর্ম-বিশ^াস এবং স্বকীয় সংস্কৃতির উপর আজ জাতীয়ভাবে আঘাত করা হচ্ছে। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে আমরা শঙ্কিত। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীম কোর্ট প্রাঙ্গণে এবং জাতীয় ঈদগাহর পাশে গ্রিক দেবীর মূর্তি স্থাপন করে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম নাগরিকদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মুসলমানদের ধর্মীয় চেতনার ওপর সবচেয়ে বড় আঘাত হানা হয়েছে। পীর সাহেব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মূর্তি কিভাবে এলো, কোথায় থেকে এলো, কে বসালো তিনি তা জানেন না? আমরা শুনেছি প্রধান বিচারপতির একক সিদ্ধান্তেই মূর্তি স্থাপিত হয়েছে। অন্যান্য বিচারপতিরা মূর্তি স্থাপনে একমত ছিলেন কিনা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে তা জানানো হয়নি। তিনি বলেন, কাদের স্বার্থে বা কী প্রয়োজনে বিতর্কিত গ্রিক মূর্তি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হলো। এটা জনতার প্রশ্ন। পীর সাহেব বলেন, প্রধান বিচারপতির গ্রিক দেবীর প্রতি কোন ভক্তি বা অনুরাগ থাকলে এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। তার এ পছন্দকে তিনি জাতীয়ভাবে চাপিয়ে দিতে পারেন না। মূর্তি স্থাপন করে তিনি দেশের সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে সংবিধান লংঘন করেছেন। তিনি গণ-মানুষের আস্থা এবং নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। অতএব এমন একজন বিতর্কিত ও অবিবেচক বিচারপতি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির আসনে থাকতে পারেন না। বিতর্কিত বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগ করা উচিত।
গত ২০ এপ্রিল বাদ জুমআ বায়তুল মোকাররমের উত্তর সড়কে আয়োজিত বিশাল জনসমুদ্রে সভাপতির বক্তব্যে পীর সাহেব চরমোনাই এসব কথা বলেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন, ইসলামী যুব আন্দোলন, ইশা ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় শিক্ষক ফোরাম, ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ ও ইসলামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, ওলামায়ে কেরাম, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকগণ। সমাবেশে পীর সাহেব রমজানের আগেই মূর্তি অপসারণ করার দাবি জানান অন্যথায় ১৭ রমজান বদরের চেতনায় সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি এবং ঈদের পর সুপ্রিমকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, আল্লাহ ন্যায় বিচারের সকল পদ্ধতি পবিত্র কোরআনে লিপিবদ্ধ করেছেন। আর আল্লাহর রাসূল (সা.) তা পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করেছেন। এজন্যই তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ন্যায় বিচারকরূপে প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ তায়ালা বলেনÑ‘তোমরা মূর্তি থেকে পরিপূূর্ণরূপে দূরে থাকো।’ সূরা হজ : ৩০। অন্য আয়াতে বলা হয়েছেÑ ‘নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা মূর্তিপূজা ও শিরক কখনো ক্ষমা করবেন না।’ সূরা নিছা : ৪৮। আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন মূর্তি ভাঙার জন্য। রাসূল (সা.) বলেছেন, আমি আবির্ভূত হয়েছি মূর্তি ও বাদ্যযন্ত্র ধ্বংসের জন্য।
অনেক বাধা-বিপত্তি সত্তে¡ও গতকাল বাদ জুমআ অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে যোগ দিতে ফজর নামাজের পর থেকেই ঢাকার বাহির থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ পল্টন, বায়তুল মোকাররম ও আশপাশের এলাকায় সমবেত হতে থাকে। জুমআর নামাজের আগেই একের পর এক মিছিলে যুক্ত হয়ে সমগ্র এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। জুমার পূর্বেই বায়তুল মোকাররম ছাড়িয়ে পল্টন, দৈনিক বাংলা, ফকিরাপুল পানির ট্যাংকি, জিপিও, প্রেসক্লাব, রাজউক এলাকা জনতার দখলে চলে আসে। রাস্তায় জায়গা না পেয়ে অনেক মানুষ বিল্ডিংয়ের ছাদে ও উঁচু গাছে অবস্থান নেয়।
পূর্ব ঘোষিত এই মহাসমাবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অনুমতি না দিয়ে বৃহস্পতিবার গভীররাতে মাত্র ৪টি হর্নের অনুমতিসহ বায়তুল মোকাররম উত্তর সড়ক নির্ধারণ করে দেয় প্রশাসন। এটি সুস্পষ্ট নাগরিক অধিকার হরণ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম, মাওলানা আব্দুল হক আজাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী, মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব- অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কাদের ও আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম, নগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, যুবনেতা কেএম আতিকুর রহমান, উত্তর সভাপতি অধ্যক্ষ শেখ ফজলে বারী মাসউদ প্রমুখ। -প্রেস বিজ্ঞপ্তি
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন