মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

মেধাসম্পদ সংরক্ষণ : ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

| প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাওলানা আবদুর রাজ্জাক

\ দুই \
এগুলোর চেয়ে সামান্য বেশি রয়েছে উদ্ভিদের মধ্যে, যার অস্তিত্বের লক্ষ্যের মাঝে প্রবৃদ্ধি এবং ফলদান প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত। এগুলোকে বুদ্ধি-উপলব্ধি সে অনুপাতেই দেয়া হয়েছে। তারপর আসে পশুর নাম্বার; যাদের জীবনের উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রবর্ধন ও চলাফেরা করে খাবার আহরণ, ক্ষতিকর বিষয় থেকে আত্মরক্ষা আর বংশবৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয়। এ কারণেই তাদেরকে যে বুদ্ধি, চেতনা ও অনুভ‚তি দেয়া হয়েছে তা অন্যান্য সৃষ্টির তুলনায় বেশি। কিন্তু ততটুকু বেশি যাতে তারা নিজেদের পনাহার, উদরপূর্তি ও নিদ্রা-জাগরণ প্রভৃতি ব্যবস্থা সম্পন করতে পারে। এসবের পরে আসে মানুষের নাম্বার; যার অস্তিত্বের সর্বপ্রথম উদ্দেশ্য হলো নিজের ¯্রষ্টা ও পালনকর্তাকে চেনা, তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী চলা, তাঁর অসন্তুষ্টির বিষয় থেকে বেঁচে থাকা, সমগ্র সৃষ্টির তাৎপর্যের প্রতি লক্ষ্য করা এবং তার দ্বারা উপকৃত হওয়া। সমগ্র বস্তুজগতের পরিণতি ও ফলাফলকে উলব্ধি করা, আসল ও মেকি যাচাই করে যা ভালো, মঙ্গল ও কল্যাণকর তা গ্রহণ করা, আর যা মন্দ, অকল্যাণকর তা থেকে বেঁচে থাকা। এ কারণেই মানবজাতি এমন বৈশিষ্ট্যপ্রাপ্ত হয়েছে, জীবনের উন্নতি লাভের সুবিস্তৃত ক্ষেত্র লাভ করেছে যা অন্য কোনো সৃষ্টি পায়নি। মানুষ উন্নতি লাভ করে ফেরেশতাদের কাতার থেকেও এগিয়ে যেতে পারে। একমাত্র মানুষের মাঝেই এমন গুণ-বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে যে, তার কর্মের জন্য ভালো-মন্দ প্রতিদান রয়েছে। যে কারণে তদেরকে বুদ্ধি, জ্ঞান এবং চেতনা-উপলব্ধিও দেয়া হয়েছে সমগ্র সৃষ্টির তুলনায় অধিক, যাতে করে সাধারণ জীবের স্তরের উর্ধেŸ উঠে নিজের অস্তিত্বের উদ্দেশ্য মোতাবেক কাজে আত্মনিয়োগ করে। আল্লাহপ্রদত্ত বিশেষ বুদ্ধি, চেতনা ও উপলব্ধিকে এবং দর্শন ও শ্রবণশক্তিকে যেন সে মতে কাজে নিয়োগ করে।
এই তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়টি সামনে এসে যাওয়ার পর একজন মানুষের বোঝা, তার দর্শন ও শ্রবণ অন্যান্য জীব-জন্তুর বোঝা, শোনা ও দেখা থেকে ভিন্ন রকম হওয়াই উচিত। মানুষও যদি নিজেদের দর্শন, শ্রবণ ও বিবেচনা শক্তিকে তেমনি কাজে নিয়োগ করে, যেমন কাজে অন্যান্য জীব-জন্তুরা নিয়োগ করে থাকে এবং মানুষের জন্য মন্দ পরিণতিও ভবিষ্যৎ ফলাফলের প্রতি লক্ষ্য রাখা, অমঙ্গল থেকে বেঁচে থাকা, কল্যাণ ও মঙ্গলকর বিষয়কে গ্রহণ করা প্রবৃতি যেসব কাজ নির্ধারিত ছিল, সেগুলোর প্রতি যদি লক্ষ্য না রাখে, তবে বুদ্ধি থাকা সত্তে¡ও তাকে নির্বোধ বলা হবে, চোখ থাকা সত্তে¡ও তাকে অন্ধ এবং কান থাকা সত্তে¡ও তাকে বধির বলে আখ্যায়িত করা হবে। সে জন্যই কোরআনে কারীম অন্যত্র এ ধরনের লোকগুলোকে ‘কানা, বোবা ও অন্ধ’ বলে আখ্যায়িত করেছে।
মেধার সমৃদ্ধি
আসমান, জমিন, চাঁদ, সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, তরু-লতাসহ গোটা সৃষ্টি জগতের বস্তুসমূহে দৃষ্টি করে তার রহস্য উপলব্ধি করা, এগুলো নিয়ে সাহিত্য ও কাব্য রচনা করা এটা জ্ঞানের একটি স্তর।
জ্ঞানের আরেকটি স্তর হলো সমস্ত জগতের মাঝে গবেষণা করে তা থেকে কল্যাণকর কিছু আবিষ্কার ও উদ্ভাবন করা। কিন্তু মেধার উন্নতি ও সমৃদ্ধির চ‚ড়ান্ত রূপ তখনই লাভ হবে যখন মহান আল্লাহর সৃষ্টির কৌশল দেখে তাকে উপলব্ধি করতে পারে। তার অস্তিত্বের নিশানা দেখে বুঝতে পারে যে, তিনিই একমাত্র মালিক ও সৃষ্টিকর্তা। তিনিই রিযিকদাতা, প্রার্থনা শ্রবণকারী এবং তিনিই সাহায্যকারী। মহান আল্লাহর প্রেরিত কিতাব দেখেই তকে আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত কিতাব বলে বুঝতে পারে এবং তার নবীকেও সঠিক নবী বলে চিনতে পারে। সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য উলব্ধি করতে পারে।
তাই মহামহিম আল্লাহ তাকে চেনার ও জানার যেসব নিদর্শনাবলী সৃজন করেছেন সেগুলো কালামে বর্ণনা করেছেন। নি¤েœ তার কয়েকটি বিবৃত হলো। “তিনি জীবন্তকে মৃত হতে নির্গত করেন। আর মৃতকে জীবন্ত হতে নির্গত করেন। তিনি জমিনকে তার মৃত্যু ঘটার পরে জীবন দান করেন। এভাবেই তোমাদেরকে কবর থেকে নির্গত করা হবে।” Ñসুরা রূম-১৯
এখানে জীবন্তকে মৃত থেকে উদ্গত করার উদাহরণ হচ্ছেÑ ডিম থেকে মুরগি। আর মৃতকে জীবন্ত থেকে নির্গত করার উদাহরণ হচ্ছে মুরগি থেকে ডিম সৃষ্টি হওয়া।
“আর তাঁর কুদরতের একটি নিদর্শন হচ্ছে, তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তোমরা দেখতে দেখতে মানুষ হয়ে পৃথিবীতে পদচারণা করছো। আর তাঁর আরেকটি নিদর্শন হচ্ছে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন। যাতে তোমরা তাদের কাছে গিয়ে প্রশান্তি লাভ কর। আর তোমাদের মাঝে বপন করা হয়েছে ভালোবাসা ও অনুকম্পার উপকরণ। অবশ্যই এতে সেসব লোকদের জন্য রয়েছে বিশাল নিদর্শন, যারা চিন্তা-ভাবনা করে। তার আরেকটি নিদর্শন হচ্ছে নবমÐল ও ভ‚-মÐলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। নিশ্চয়ই এতে রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন।”
“তাঁর আরেকটি নিদর্শন হচ্ছে, রাতে ও দিবা ভাগে তোমাদের নিদ্রা যাওয়া এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ করা। আর এতে সেসব লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে যারা মনোযোগের সাথে কথা শোনে।”
“তাঁর আরেকটি নিদর্শন হচ্ছে, তিনি বিদ্যুতের চমক দেখান, যাতে ভয় লাগে এবং ভরসাও রয়েছে। আর আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, যার দ্বারা তিনি মাটির মৃত্যুর পর তাকে পুনঃজীবিত করেন। আর এতে সেসব লোকের জন্য বড় নিদর্শন রয়েছে, যারা বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা কাজ করে।
তাঁর আরেকটি নিদর্শন হচ্ছে, আকাশ ও পৃথিবী তাঁরই হুকুমে প্রতিষ্ঠিত আছে। অতঃপর যখন তিনি মাটি থেকে ওঠার জন্য তোমাদেরকে ডাক দিবেন, তখন তোমরা ওঠে আসবে। আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবকিছু তার হুকুমের অনুগত।”
আর তিনিই, যিনি সৃষ্টিকে প্রথম সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তাকে পুনঃবার সৃষ্টি করবেন। এ কাজ তার জন্য খুবই সহজ। আর তিনিই সবচেয়ে মহান আকাশে ও পৃথিবীতে। আর তিনিই ক্ষমতাবান, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা রূম-১৯-২৭)
এ সব আয়াতে আল্লাহতায়ালা তাওহিদের কথা উল্লেখ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি তার মহাবিশ্বে বিদ্যমান বিভিন্ন কুদরতের নিদর্শনের প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্শণ করেছেন। যদি কেউ সত্য গ্রহণ করতে আগ্রহী হয় এবং পক্ষপাতমুক্ত হয়ে ভাবে, তবে তার দৃষ্টিতে এ বিষয়টি অবশ্যই উদ্ভাসিত হবে, এসবের প্রতিটি তাঁরই অস্তিত্বের সাক্ষী দেয়। যে সত্তা মহাবিশ্বের সব কিছুকে নিজ নিজ অবস্থানে শৃঙ্খলার সাথে সচল রেখেছেন। আর তিনি তাঁর প্রভুত্বে অংশিদারিত্ব গ্রহণের মুখাপেক্ষী নন। এ কথা যৌক্তিক নয়, এমন বিশাল ব্যবস্থাপনা দেখে যারা পৃথিবীর ছোট ছোট কাজ আঞ্জাম দেয়ার জন্য ছোট ছোট প্রভুদেরকে তার অংশিদারিত্ব সাব্যস্ত করে, আর যারা আল্লাহর অস্তিত্বকে মোটেও বিশ্বাস করে না তারা সুবোধ নয়, নির্বোধ।
অর্থাৎ যারা নাস্তিক আর যারা একাধিক খোদায় বিশ্বাসী এবং বস্তুপূজারী তারা যত বড় বিজ্ঞানী, কবি, সাহিত্যিক কিংবা বুদ্ধিজীবী তারা জ্ঞানে কাঁচা, তাদের মেধা পরিপক্ব নয়।
মেধাসম্পদের অবমূল্যায়ন
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে মেধাসম্পদের অবমূল্যায়ন হচ্ছে। তার একটা দৃষ্টান্ত হচ্ছে ‘গণতন্ত্র’। এখানে একজন মেধাহীন-মুর্খ বা স্বল্প মেধার অধিকারী ব্যক্তি আর ক’জন শিক্ষিত-বুদ্ধিজীবী, জ্ঞানী-গুণীর মূল্য সমান। এখানে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তির রায়ের মূল্য আর সর্বনি¤œ মানের ব্যক্তির রায়ের মানের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। দার্শনিক ইকবাল এ জন্য বলেছেন, “গণতন্ত্রের মাঝে মানুষকে গণনা করা হয়, পরিমাপ করা হয় না, মূল্যায়ন করা হয় না।”

আল্লাহ মালিক
নিজের ব্যয়ের হাত কখনো সম্পূর্ণ গুটিয়ে রেখো না, আবার তা পুরোপুরি খুলেও দিও না, অন্যথায় (বেশি ব্যয় করার কারণে এক সময়) তুমি নিঃশ্ব ও নিন্দিত হয়ে বসে থাকবে। তোমার মালিক যাকে ইচ্ছে তা কম করে দেন, অবশ্যই তিনি তার বান্দাদের বিষয়ে ভালোভাবে জানেন ও দেখেন।
-সূরা বনি ঈসরাইল : আয়াত ২৯, ৩০

শাহাদাতের গুরুত্ব ও মর্যাদা
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদি.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘দুটি চোখকে কোন দিন দোজখের আগুন স্পর্শ করবে না। যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছে; যে চোখ আল্লাহর পথে সারারাত পাহারা দিয়েছে।’
-তিরমিজি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন